1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর কত লাশ দেখতে হবে সীমান্তে?

৮ জানুয়ারি ২০২৫

কুড়িগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে কিশোরী ফেলানি হত্যার ১৪ বছর কেটে গেলেও বিচার পায়নি তার পরিবার৷ সীমান্ত হত্যাও বন্ধ হয়নি৷

ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন ফেলানির পরিবারকে যে ১৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিল, ভারত সরকার তা-ও এখনো দেয়নি৷ উচ্চ আদালতে আপিল করে তা আটকে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ৷
ফেলানী হত্যার বিচার পায়নি তার পরিবার (ফাইল ফটো)ছবি: picture alliance/Demotix

ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন ফেলানির পরিবারকে যে ১৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিল, ভারত সরকার তা-ও এখনো দেয়নি৷ উচ্চ আদালতে আপিল করে তা আটকে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ৷ 

‘আমি চাই সীমান্তে আর যেন কেউ প্রাণ না হারায়’

This browser does not support the audio element.

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ১৪ বছরের ফেলানি৷ তার লাশ অন্তত পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল৷ সেই ছবি দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ ফেলানি হত্যার ১৩ বছর পর স্বর্ণা হত্যা নিয়েও তোলপাড় কম হয়নি৷ গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর রাতে মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় ভাইকে দেখতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ-এর গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাস (১৪) নিহত হয়৷

ঢাকায় শহীদ মিনারে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার' ফেলানি হত্যার ১৪ বছরকে সামনে রেখে ৭ জানুয়ারি সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে গণজমায়েত আয়োজন করে ৷ ফেলানির বাবা নুর ইসলাম ও মা জাহানারা বেগমও সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ সেখানে ফেলানি হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফেলানির মা৷

আজ (বৃহস্পতিবার) ফেলানির মা জাহানারা বেগম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি শুধু আমার মেয়েকে হত্যার বিচার চাই না, আমি চাই সীমান্তে আর যেন কেউ প্রাণ না হারায় আর কারো লাশ যেন কাঁটাতারের বেড়ার উপড়ে ঝুলে না থাকে৷ কিন্তু ১৪ বছরেও তো কমলো না৷ প্রায় প্রতিদিনই তো সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে৷''

ফেলানির বাবা নুরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তো বিচার পাইনি এখনো, কিন্তু আশা ছাড়িনি৷ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক চেষ্টা করেছি৷ ভারতেও গিয়েছি এই মামলা নিয়ে৷ কিন্তু বিচার পাইনি৷ আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে৷ আশা করি, নতুন সরকার এসেছে, তারা কিছু করবে৷''

‘‘আমরা তেমন কোনো সহায়তা পাইনি৷ পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে আছি৷ একটি চায়ের দোকান দিয়ে সাত জনের সংসার চালাতে হয়,'' বলেন তিনি৷ তিনি জানান, ‘‘আমরা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে দেখা করেছি, তিনি বলেছেন আমাদের পরিবারের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন৷ আমাদের সব কিছু এখন থেকে তিনি দেখাশুনা করবেন৷''

শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভারতের সর্বেচ্চ পর্যায় থেকে বার বার সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷ বলা হয়েছে সীমান্তে কোনো প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হবে না৷ দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকেও একই কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু তা মানা হয়নি৷

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক)-এর হিসেব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিএসফের হাতে মোট ৩০ জন বাংলাদেশি সীমান্তে নিহত হন৷আসক-এর হিসাবে দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ২৫ জনকে৷ ২০২৩ সালে নিহত ২৮ জনের মধ্যে ২৪ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ ফলে এটা স্পষ্ট যে, সীমান্তে ব্যাপকভাবে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে বিএসএফ৷

মানবাধিকার কর্মী এবং আসকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সীমান্তে হত্যার উদ্দেশ্যেই বিএএসএফ গুলি করে৷ তারা চোরচালানের কথা বললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হন৷ কিশোরী ফেলানি বা স্বর্ণা কেউই তো চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিল না৷ গরু চোরাচালানের কথা বলা হয়, কিন্তু গরু তো সীমান্তে পয়দা হয় না৷ ওই গরু দিল্লিসহ ভারতের দূরবর্তী এলাকা থেকে আনা হয়৷ তখন ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কী করে? আসলে বিএসফসহ আরো অনেক সংস্থার লোকজন এর সঙ্গে জড়িত৷ চোরাচালানের ভাগ-বাটোয়ারায় সমস্যা হলেই তারা গুলি করে হত্যা করে,'' বলেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে আছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক৷ সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত৷ সেটা তারা বিবেচনায় রাখে না৷ এইসব ঘটনার জন্য বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতিই দায়ী৷ আগে তো পুরোটাই নতজানু ছিল, এখন আমরা অন্তত প্রতিবাদ করতে দেখছি৷'' 

‘তারা নিরীহ লোকজনকেই হত্যা করে বেশি’

This browser does not support the audio element.

মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার'-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান বলেন, ‘‘ভারত আসলে এই সীমান্ত হত্যার মাধ্যমে সব সময় বাংলাদেশকে একটা চাপে রাখতে চায়৷ একটা ভয়ের মধ্যে রাখতে চায়৷ সেই কারণেই সীমান্ত হত্যা কমছে না, বরং বাড়ছে৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, তারা নিরীহ লোকজনকেই হত্যা করে বেশি৷ আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই, তারপরও গরু বা অন্য চোরাচালানের শাস্তি কি গুলি করে হত্যা? ভারতের সঙ্গে তো আরো অনেক দেশের সীমান্ত আছে, সেখানে তো তারা এরকম হত্যা করে না৷''

সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে ফেলানি হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লে বিএসএফ নিজেই এর বিচারের উদ্যোগ নেয় বলে জানান ফেলানি হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিঙ্কন৷ ‘‘কিন্তু সমস্যা হলো, এটা বিএসএফ তাদের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে বিচার করে৷ স্বীকৃত হত্যাকারী চিাহ্নত হলেও তাকে দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়৷ সে কতটি গুলি ব্যবহার করেছে তা-ও স্বীকার করে৷ তারপরও আমরা ন্যায় বিচার পাইনি,'' বলেন তিনি৷

এরপর ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন উচ্চ আদালতে রিট করে৷ তাও এখনো বিচারাধীন৷ ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন ১৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিলেও তা আপিল করে আটকে দেয়া হয় বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় উচ্চ আদালতের রায়টি পাওয়া গেলে হয়তো এই অঞ্চলে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যেতো৷ আর ফেলানি হত্যার পরিণতি সম্পর্কেও আমরা ধারণা পেতাম৷ আসলে সীমান্তে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়৷ এর বিচার ও প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন৷ এটা বন্ধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি৷''

‘‘রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভারত বারবার তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে৷ তারা কথা দিয়েও সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেনি৷ আমাদের এটা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে,'' একথা বলেন সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ সাকিব আলী৷ বলেন, আমাদের দুর্বলতার কারণেই ভারত এটা করে পার পেয়ে যাচ্ছে৷

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে৷ এছাড়া অধিকার নামের মানবাধিকার সংস্থাটির মতে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফ সদস্যদের হাতে অন্তত ৫৮২ বাংলাদেশি নিহত ও ৭৬১ জন আহত হয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ