1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর চাই না প্রধানমন্ত্রীত্ব: শেখ হাসিনা

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ডয়চে ভেলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি ভবিষ্যতে তরুণদের সুযোগ করে দিতে চান৷ তাই তিনি চান বর্তমান ও টানা তৃতীয় মেয়াদটিই যেন হয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শেষ মেয়াদ৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোলছবি: DW

এক মাস আগেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তাঁর দল আওয়ামী লীগ ও এর জোটের দলগুলো মিলে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছে৷ টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেবার পর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এটা নিশ্চিত করেছেন যে, পরবর্তী মেয়াদে আর প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য চেষ্টা করতে চান না৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার তৃতীয় মেয়াদ৷ এর আগেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছি (১৯৯৬-২০০১)৷ সব মিলিয়ে চতুর্থবার৷ আমি আর চাই না৷ একটা সময়ে এসে সবারই বিরতি নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি, যেন তরুণ প্রজন্মের জন্য জায়গা করে দেয়া যেতে পেরে৷'' 

উন্নয়নের এক দশক

Bangladesh's Sheikh Hasina hints at last term as premier

13:06

This browser does not support the video element.

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে  গত এক দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে৷ বছরে গড়ে ৬ থেকে ৭ ভাগ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ বাণিজ্য বেড়েছে৷ বিদেশি বিনিয়োগও এসেছে৷

এই উন্নয়নের পরও বিশ্বব্যাংকের হিসেব বলছে, এখনো বাংলাদেশের প্রতি চার জনে একজন দরিদ্র৷ শেখ হাসিনা তাঁর সম্ভাব্য শেষ মেয়াদে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান৷

‘‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান– এসব মৌলিক চাহিদা,’’ ডিডাব্লিউকে বলেন তিনি৷ ‘‘প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়৷ আমাদের সেটাই নিশ্চিত করতে হবে৷’’

উন্নয়ন বনাম বাক স্বাধীনতা

তবে এই উন্নয়ন দিয়ে সেসব সমালোচকের মুখ বন্ধ করতে পারেননি শেখ হাসিনা, যাঁদের অভিযোগ, তিনি বা তাঁর সরকার বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন এবং মুক্তচিন্তা ও মুক্তচিন্তকদের ওপর আঘাত থামাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি৷

কিন্তু হাসিনা তা অস্বীকার করে বলেন, মুক্ত চিন্তাকে শতভাগ সমর্থন করেন তিনি৷ সমালোচনাও তাই স্বাভাবিক৷

‘‘যত কাজ করবেন, তত সমালোচনা শুনবেন,’’ তাঁর যুক্তি৷ ‘‘আপনি আমার দেশের মানুষকে প্রশ্ন করুন, তাঁরা সন্তুষ্ট কিনা; তাঁদের যা যা প্রয়োজন, সব পাচ্ছে কিনা, কিংবা আমি  সব দিতে পারছি  কিনা৷’’

হাসিনা তাঁর আওয়ামী লীগবিরোধীদের জন্য রাজনীতির মাঠ সংকুচিত করে রেখেছেন এবং এক দলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছেন – এমন অভিযোগও আছে জোরালোভাবে৷ কিন্তু তা মানতে রাজি নন বাংলাদেশের সরকার প্রধান৷

‘‘জনগণের ভোটের মাধ্যমেই তো ক্ষমতায় আসা, সেটা একদলীয় হয় কী করে? আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে, ২০০৮-এ যে নির্বাচন হয়েছিল, সে নির্বাচনেও ৮৪ ভাগ (আসলে ৮৬.৩৪%) ভোট পড়েছিল৷ এবার তো ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে৷ তখন বিএনপি-জামাত জোট পেয়েছিল মাত্র ২৮টি সিট৷ এবার ইলেকশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৬০টি সিট (৩০০টির মধ্যে)৷ বাকি সব অন্য দলগুলো পেয়েছে৷ সেখানে দল তো আছেই,’’ বলেন তিনি৷

বিরোধী দলকে দুর্বল মনে করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘এখন কোনো দল যদি তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে না যেতে পারে, জনগণের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে না পারে, আর যদি ভোট না পায়, সে দায়-দায়িত্ব কার? সে তো ঐ দলগুলোর দুর্বলতা৷’’

‘একদলীয় শাসন হয় কী করে?’

14:55

This browser does not support the video element.

মৌলবাদের উত্থান ও নারী অধিকার

মৌলবাদীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নিবিড় সম্পর্ক আছে বলেও সমালোচনা আছে৷ বাংলাদেশের ‘উদারপন্থিরা’ হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের  সুসম্পর্কের সমালোচনা করেন৷ তাদের অভিযোগ, এই গোষ্ঠী মৌলবাদী ও তারা নারীর বিকাশের বিরুদ্ধে৷ সম্প্রতি এই গোষ্ঠীর নেতা মাওলানা শাহ আহমেদ শফী মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য সমর্থকদের ওয়াদা করিয়েছেন৷

তাঁর এই বক্তব্যের দায়দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ‘‘আমি বলেছি যে, এখানে বাক স্বাধীনতা আছে৷ তাই যে কেউ যে কোনো কিছুই বলতে পারেন৷’’ নারীর বিকাশে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি দাবি করে হাসিনা বলেন, ‘‘আমি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নারী শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক করে দিয়েছি৷ তাদের বৃত্তিও দিচ্ছি৷’’

মুজিব-কন্যা বলেন, তাঁর নীতি নারী শিক্ষার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের চিন্তাও বদলে দিয়েছে৷ ‘‘আগে বাবা মায়েরা চিন্তা করতেন যে, মেয়েকে পড়িয়ে লাভ কী, সে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে৷ এখন সেভাবে চিন্তা করেন না তাঁরা৷ এখন ভাবেন যে, মেয়েকে শিক্ষিত করা উচিত যেন সে নিজে উপার্জন করতে পারে৷ এরপর সে বিয়ে করবে৷ খুব ধীরে ধীরে আমরা পরিবর্তন আনছি৷ বাল্যবিবাহ এখন অনেক কমে গেছে৷’’

যে লক্ষ্য অর্জনে শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন, তাতে কি মৌলবাদীরা বাধা হবে? ‘‘অবশ্যই না৷ আমি যা করেছি, তা করেছি এবং এটা চলবে,’’ বলেন তিনি৷

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ

জীবনমান উন্নয়ন এবং উদারপন্থি ও মৌলবাদীদের মাঝখানে একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও শেখ হাসিনার সরকারকে নতুন করে সাত লাখ রোহিঙ্গার দায়িত্ব নিতে হয়েছে৷ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘জঙ্গিবাদের’ বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বলি হয়ে এরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন৷

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে কক্সবাজারের দু'টি ক্যাম্পে বেশিরভাগই খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷ এই মানুষের স্রোত এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছে৷ এদের অনেকেই স্থানীয়দের কাজ, থাকার জায়গা ও ব্যবসায় ভাগ বসিয়েছে৷ 

গণভবনে সেই দিন

01:56

This browser does not support the video element.

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার হাজার হাজার শিশু-কিশোর-তরুণ যারা বেড়ে উঠছে, তাদের জন্য মধ্যবর্তী বিকল্প উপায় ভাবার চেষ্টা করছে৷ ‘‘আমরা একটা দ্বীপ বেছে নিয়েছি৷ সেখানে আমরা বাঁধ দিয়েছি৷ সাইক্লোন শেল্টার ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছি৷ আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই এবং কাজ দিতে চাই৷ তাহলে তরুণ ও নারীরা অর্থ উপার্জন করতে পারবে৷’’

তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়াকে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে মনে করেন হাসিনা৷ তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যেতে চায় বাংলাদেশ৷ এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভুমিকা রাখতে পারে৷ 

‘‘আমরা কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না৷ আমাদের সাথে একটা চুক্তিও হয়েছে যে, তারা ফেরত নিয়ে যাবে৷ চীন ও ভারতের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে যে পাঁচটি দেশের বর্ডার আছে, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওস, আমরা সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি যে, কীভাবে এই সমস্যা সমাধানে তাদের কাজ করা উচিত৷’’

তিনি যোগ করেন, ‘‘এটাই চাই যে, তারা মিয়ানমারকে এ কথাটি বুঝাক যে, এরা যখন মিয়ানমারে চলে যাবে, তখন তাদের যা যা সাহায্য দরকার, থাকার বাড়িঘর, তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা, এখানে যা যা দিচ্ছে, তা ওখানেই দেবে এবং তাদের একটা নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তারা করবে৷ জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে৷’’

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল ও এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ