আইনি লড়াই চালিয়েও নির্বাচনের ফলাফলে তেমন পরিবর্তন আনতে পারছেন না ট্রাম্প৷ রিপাবলিকান দলের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও কার্যত পরাজয় মেনে নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
জো বাইডেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, প্রকাশ্যে তা না স্বীকার করলেও আড়ালে সেই বাস্তব মেনে নিচ্ছেন রিপাবলিকান দলের নেতারা৷ কিন্তু বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে চটাতে চাইছেন না কেউ৷ এদিকে ট্রাম্প একাধিক রাজ্যে পুনর্গণনার দাবি ও নির্বাচনে অনিয়ম সংক্রান্ত মামলা করেও নিজের জয় প্রমাণ করতে পারছেন না৷ যেমন উইসকনসিন রাজ্যে এমনকি বাইডেনের জয়ের ব্যবধান আরও বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে৷ মিশিগান ও পেনসিলভানিয়া রাজ্যেও ট্রাম্প নিজেকে জয়ী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার পুনর্গণনার পর জর্জিয়া রাজ্যও সম্ভবত বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করতে চলেছে৷ রাজ্যের শীর্ষ নির্বাচনি কর্মকর্তা ও রিপাবলিকান দলের নেতা বলেছেন, বাইডেন ট্রাম্পের তুলনায় প্রায় ১৪ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন৷ পুনর্গণনা সত্ত্বেও সেই সংখ্যায় তেমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই৷ ট্রাম্প অবশ্য নতুন করে পুনর্গণনার আবেদন করতে পারেন৷ উল্লেখ্য, গোটা দেশে ট্রাম্প বাইডেনের তুলনায় প্রায় ৫৮ লাখ কম ভোট পেয়েছেন৷ কমপক্ষে তিনটি বড় রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল বদলাতে না পারলে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন না৷ অথচ বাস্তবে এমন সম্ভাবনা কার্যত অসম্ভব৷ তবে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত ট্রাম্প আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন৷
এমন পরিস্থিতিতে রিপাবলিকান দলের একের পর এক নেতা বাইডেনের জয় পরোক্ষভাবে মেনে নিচ্ছেন৷ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত কমলা হ্যারিস সংসদ সদস্য হিসেবে চলতি সপ্তাহে সেনেটে ফেরার পর রিপাবলিকান দলের সদস্যরা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ ট্রাম্প নিজে পরাজয় স্বীকার করা পর্যন্ত তাঁরা এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেবেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ তাছাড়া ট্রাম্প ৭ কোটিরও বেশি ভোট পেয়ে রিপাবলিকান সমর্থকদের আস্থার প্রমাণ দিয়েছেন বলে দলের নেতারা প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করতে চান না৷ ২০২৪ সালে ট্রাম্প আবার দলের মনোনয়ন পেলে তিনি ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে পারেন, এমন আশঙ্কাও কাজ করছে৷ জানুয়ারি মাসে সেনেটের দুই আসনের জন্য নির্বাচনের স্বার্থেও নেতারা ঐক্য বজায় রাখতে চাইছেন৷
এমন অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও জো বাইডেন ২০শে জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন৷ বিশেষ করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখের মাত্রা পেরিয়ে যাবার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি অবিলম্বে মহামারি মোকাবিলার কাজে মন নিতে চান৷ তবে বিদায়ী ট্রাম্প প্রশাসন কোনো রকম সহযোগিতা না করায় বাইডেন টিমের সমস্যা হচ্ছে৷ বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থার দৈনিক ‘ব্রিফিং’ না পাওয়ায় ভবিষ্যৎ প্রশাসন দেশের জন্য হুমকি সম্পর্কে কোনো পূর্বাভাষ পাচ্ছে না৷ এই অবস্থায় তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ ট্রাম্প টিমের কিছু কর্মকর্তা অবশ্য নীরবে কিছু সহায়তা শুরু করেছেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এপি)
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷