জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে বুধবার৷ প্রসিকিউশন এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও, মুজাহিদের আইনজীবী একে প্রহসনের রায় বলে আখ্যা দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার দুপুরে এই রায় ঘোষণা করে৷ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ, ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায়, তাকে ফাঁসির দণ্ড দেয় আদালত৷
মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায়৷ এরপর আগস্ট মাসে তাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ তার বিরুদ্ধে একাত্তরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ ট্রাইব্যুনাল-২'এ গত ৫ই মে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়৷ বুধবার এই মামলার রায় দেয়া হলো৷
মুজাহিদের ফাঁসি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বুধবার (১৭.০৭.১৩) ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ বুধবার (১৭.০৭.১৩) দেওয়া রায়ে তাকে ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
আমৃত্যু কারাদণ্ড
মাত্র দু’দিন আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নব্বই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ বয়স বিবেচনায় এনে আযমকে মৃত্যুদণ্ড দেননি আদালত৷
ছবি: Nashirul Islam/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশ সরকারের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়েছিল৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
আলবদর কমান্ডার
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ বর্তমানে তিনি কারাবন্দি আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
‘‘মানুষ হত্যা করেছেন মুজাহিদ’’
যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুজাহিদ শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যার পরিকল্পনাকারীই ছিলেন না, তিনি নিজেও সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন৷ ফরিদপুর এলাকায় তার নৃশংসতার সাক্ষী এখনো আছে৷’’ এই রায়ে সন্তুষ্ট বাদল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
ফেসবুক প্রতিক্রিয়া
ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই রায় মানি৷’’ আর শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘‘যে যাই বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমি শতভাগ তৃপ্ত না হলেও এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতেও আমি অনেক খুশি৷’’ তবে তপু হোসেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘এটা ভুয়া রায়... মানিনা মানবো না৷’’
ছবি: Reuters
‘‘এটি প্রহসনের রায়’’
জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে৷ মুজাহিদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটি প্রহসনের রায়৷ রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি৷’’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানান ইসলাম৷
ছবি: Reuters
দুই দিনে নিহত ৯
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৫ ও ১৬ জুলাই সহিংসতায় কমপক্ষে নয় ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী এই সময় হরতাল পালন করেছে৷ মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে চার ব্যক্তি৷ আর সোমবার পাঁচ ব্যক্তি৷ দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি এবং সর্বশেষ সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, মুজাহিদ একাত্তরে জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন৷ তার নেতৃত্বেই গঠন করা হয়েছিল আলবদর বাহিনী৷ আর এই আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করে৷ আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে মুজাহিদ একটি বিশেষ জিপ গাড়িতে ঘুরে বেড়াতেন এবং গাড়িতে আলবদর লেখা ব্যানারও ছিল৷
মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, মুজাহিদ শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যার পরিকল্পনাকারীই ছিলেন না, তিনি নিজেও সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন৷ ফরিদপুর এলাকায় তার নৃশংসতার সাক্ষী এখনো আছে৷ একাত্তরে তিনি সেখানে হিন্দুস্তান দখলের পরিবর্তে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর দখল করেন তার বাহিনী নিয়ে৷ এছাড়া সারা দেশে তার আলবদর বাহিনী হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজও করে৷ বুধবার মুজাহিদের ফাঁসির রায়ের পর প্রসিকিউটর জানান যে, তিনি এ রায়ে সন্তুষ্ট৷
এদিকে জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করছে৷ আর মুজাহিদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এটি প্রহসনের রায়৷ রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি৷ তাই তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন৷
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই রায় ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি এবং সর্বশেষ সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷