1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীকে রাহুলের ‘অবাঞ্ছিত' আলিঙ্গন

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৪ জুলাই ২০১৮

ভারতের কংগ্রেস দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী সম্প্রতি সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে সরকারকে তুলোধুনা করার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আলিঙ্গন করেন৷ রাহুলের এই আচরণকে কেউ বলছেন নাটকবাজি, আর কেউ বলছেন রাজনৈতিক চাল৷

Indien Politik Rahul Gandhi
ছবি: Tauseef Mustafa/AFP/Getty Images

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষের আনা অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাশা মতোই মুখ থুবড়ে পড়েছে সংসদে৷ কিন্তু সেটা চাপা পড়ে যায় রাহুল গান্ধীর আগুন ঝরানো ভাষণ শেষে৷ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর আসনের সামনে গিয়ে তিনি যেভাবে মোদীকে আলিঙ্গন করলেন, জড়িয়ে ধরলেন, তাতে মোদী কেন, অনেকেই হতভম্ব৷ সঙ্গে সঙ্গে সংসদের ভেতরে ও বাইরে নানা গুঞ্জন, রাহুল কেন এটা করলেন? নিছকই বালখিল্যতা, নাকি ভেতরে আছে রাজনৈতিক চাল? এই নিয়ে নানা ব্যাখ্যা, শ্লেষ, বিদ্রুপ, কটাক্ষ কোনোটাই বাদ নেই৷

রাহুলের আলিঙ্গনে অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপির৷ সংসদের স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও এই ধরনের নাটকবাজিতে অখুশি৷ এতে নাকি সংসদের গরিমা ক্ষুন্ন হয়েছে৷ তিনি সতর্কও করে দেন রাহুলকে৷ বিজেপি নেতা সুব্রাম্বনিয়ামের মতে, এটা ছেলেমানুষি চপলতা৷ তিনি বলেন, সংসদের ভেতরে সবাই যদি জড়াজড়ি করতে শুরু করে, তাহলে সংসদের অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে একবার ভাবুন৷ তবে সংসদের ভেতরে মোদীকে রাহুল আলিঙ্গন করলেও ২০১৯ সালের ভোটে ভোটদাতারা আলিঙ্গন করবে না রাহুল গান্ধীকে, মনে করেন বিজেপির ঐ নেতা৷

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হারসিমরাত বাদলের মন্তব্য, এটা একটা কমেডি শো৷ সংসদের ভেতরে এই পাপ্পি-ঝাপ্পি নাটক (নাবালকসুলভ আলিঙ্গন) বলিউডের জন্য এক ভালো চিত্রনাট্য হতে পারে৷

রাহুল গান্ধী সৌহার্দের আলিঙ্গন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীকে, আমি তাঁর প্রশংসা করি: ডঃ অমল মুখোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকার গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ড্রামাবাজি ছাড়া কংগ্রেসের হাতে আর কোনো ইস্যু নেই৷ অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কেই তা বোঝা গেছে৷ প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখছেন রাহুল গান্ধী৷ ‘‘দেখুন, কিন্তু সেটা স্রেফ দিবাস্বপ্ন,'' বলেন তিনি৷

মোদী সমালোচকদের মুখ অবশ্য বন্ধ করা যায়নি৷ তুলনা টেনেছেন তাঁরা যে, মোদী বিদেশে গিয়ে সেখানকার নেতাদের যখন আলিঙ্গন করেন তাতে দোষ হয়না৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মোদীর উষ্ণ আলিঙ্গনের ছবি তো মিডিয়ার কল্যাণে সারা দুনিয়া দেখেছে৷ আর দেশে রাহুল গান্ধী মোদীকে আলিঙ্গন করলেই যত দোষ?

রাহুলের নিজের ব্যাখ্যা হলো, ‘‘আপনাদের মনে আমার প্রতি বিদ্বেষ থাকতে পারে৷ আমাকে পাপ্পু (নাবালক) বলে ঠাট্টাও করতে পারেন, কিন্তু আমার মনে আপনাদের প্রতি এতটুকু রাগ বা বিদ্বেষ নেই৷ আমি ভালবাসা দিয়ে সবার মন জয় করতে চাই৷''

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেস সভাপতি গোটা দেশকে এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে, রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধিতা থাকলেও বিরোধী দলের প্রতি শান্তি ও সৌহার্দ্য অক্ষুন্ন থাকবে৷

ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ওমর আবদুল্লার তীর্যক মন্তব্য, আলিঙ্গন সংসদীয় আচরণের খেলাপ ঠিকই, কিন্তু যেখানে গণপিটুনি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা সেখানে এটা আর বেশি কী?

এই আলিঙ্গন দিয়ে রাহুল কি কোনো রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চান? ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে জল মাপতে চাইছেন রাহুল? বিরোধী মহাজোটের ভাবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাইছেন?  জনতার ভোটবাক্সের মনও জয় করাই কি তাঁর শেষ লক্ষ্য? এসব প্রশ্নই এখন ঘুরছে বাতাসে৷

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই আলিঙ্গনের উত্তর দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের সাহারাণপুরের এক কৃষক সমাবেশে৷ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছেন, বিরোধীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অনাস্থা প্রস্তাব কেন আনা হয়েছে, তার পরিবর্তে পেলাম অবাঞ্ছিত আলিঙ্গন৷

মোদীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলত বলেছেন, তাহলে বিদেশে গিয়ে রাষ্ট্রনায়কদের আলিঙ্গনও কি অবাঞ্ছিত? ‘‘আসলে আলিঙ্গনপটু মোদী এখন আলিঙ্গনেই জব্দ,'' বলেন তিনি৷

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডঃ অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দেখুন আমি বলতে চাই, রাহুল গান্ধী সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেন৷ তারপর নরেন্দ্র মোদীকে আলিঙ্গন করলেন৷ এটা কিন্তু আমি মনে করি, একটা ভালো অভিব্যক্তি৷ কারণ বিরোধীরা সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করবে সন্দেহ নেই৷ কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা উচিত মধুর৷ পৃথিবীর সর্বত্র যে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, সেখানে এটাই দস্তুর৷ কিন্তু আমাদের দেশে বিরোধী পক্ষকে দেখা হয় রাজনৈতিক শত্রু হিসেবে৷ একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে সেটা আমার কাছে অপছন্দ৷ রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকার কারণ নেই৷ কাজেই রাহুল গান্ধী সেই সৌহার্দের আলিঙ্গন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীকে৷ সেজন্য আমি তাঁর প্রশংসা করি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ