আলির অভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করবেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা
৬ জুন ২০১৬
মোহাম্মদ আলি চলে যাবার পর সারা দুনিয়া যেন নতুন করে বুঝতে পেরেছে যে, তিনি ছিলেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট', সর্বশ্রেষ্ঠ৷ তবে তাঁর অভাব যাঁরা সবচেয়ে বেশি করে অনুভব করছেন ও করবেন, তাঁরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের সর্বকালের সেরা বক্সার? নিঃসন্দেহে৷ কিনশাসার ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল'-এ আলির প্রতিদ্বন্দ্বী জর্জ ফোরম্যান বলেছেন, তাঁর নিজের একটা অংশ যেন চলে গেছে৷ পরবর্তী যুগের সবচেয়ে ভীতিকর হেভিওয়েট বক্সার মাইক টাইসন বলেছেন, ঈশ্বর তাঁর চ্যাম্পিয়নকে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন৷
বক্সিং সম্পর্কে যাঁদের সামান্যতম ধারণা আছে, তাঁরাই বলবেন, আলির মতো ফুটওয়ার্ক ও যুগপৎ পাঞ্চ খুব কম বক্সারেরই থাকে৷ সেই সঙ্গে আলির আরো দু'টি গুণ ছিল: কথা বলার ও বড়াই করার ক্ষমতা ও এক ধরনের - আমরা বাঙালিরা বলব - কবির লড়াই সুলভ কবিত্ব৷ তাই তাঁর বক্সিং স্টাইলের শ্রেষ্ঠ বর্ণনা পাওয়া যাবে তাঁরই ভাষায়: ‘ফ্লোট লাইক এ বাটারফ্লাই, স্টিং লাইক এ বি', প্রজাপতির মতো ওড়ো, ভীমরুলের মতো কামড়াও৷
সারা দুনিয়া থেকে আসছে যতোটা ভালোবাসা, ঠিক ততোটাই শ্রদ্ধা ও সম্মানের অর্ঘ৷ তবে বাস্তবিকভাবে শোকগ্রস্ত - এবং উদ্বিগ্ন - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা, কেননা মোহাম্মদ আলি ছিলেন তাদের গ্রেটেস্ট হিরো৷ অ্যামেরিকায় যেখানে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা ও সহানুভূতি, উভয়ই সীমিত, সেখানে আলি ছিলেন ইসলামের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর৷ কাজেই আলির মৃত্যুর পরদিন লুইভিলের ইসলামিক সেন্টারে এক বক্তা প্রশ্ন তোলেন, কে এখন ইসলামবিদ্বেষের দানবদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে? মুসলিমদের অন্যায় অপবাদ ও সন্দেহের হাত থেকে বাঁচাবে? শুধু মার্কিনি নয়, বিশ্বের বহু মানুষের কাছে আলি ছিলেন ‘বাস্তবিক ইসলামের' প্রতিভূ ও প্রতিনিধি৷
মার্কিন মুলুকে সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যে নির্বাচনে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি গত ডিসেম্বরে প্রস্তাব দেন যে, যাবতীয় মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে আগমন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হোক; যিনি গত রবিবারেও ইঙ্গিত করেছেন যে, তাঁর প্রতি এক বিচারকের মনোভাব বিদ্বেষপূর্ণ হতে পারে৷ যার উত্তরে সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন বলেছেন...
‘‘এমন একটি দিনে, যখন আমরা মোহাম্মদ আলির জন্য শোক করছি, সেদিন এ'কথা মনে রাখা যেতে পারে যে, আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে মানুষ প্রতিবন্ধক দূর করতে পারে, নিজেদের ঈশ্বরের আরাধনা করতে পারে, নিজের নাম বেছে নিতে পারে; যেখানে তারা নেতৃত্ব দিতে পারে; স্বকীয় পরিশ্রম ও প্রতিভা যতদূর নিয়ে যায়, ততদূর অবধি নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করতে পারে৷'' হিলারির এই মন্তব্য মোহাম্মদ আলি ও অ্যামেরিকা, উভয়কে স্মরণে রেখে৷ ঠিক সেভাবেই আগামী শুক্রবার মোহাম্মদ আলির সমাধি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন হিলারির স্বামী ও আলির বন্ধু, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন৷
এসি/এসিবি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
মোহাম্মদ আলীর কিছু বিখ্যাত প্রতিকৃতি
বার্লিনের একটি গ্যালারিতে বক্সিং-এর কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর বিভিন্ন আলোকচিত্রের প্রদর্শনী চলেছে৷ ছবিগুলিতে সুপারস্টার আলীর খেলোয়াড়ি জীবনের নানা অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ধরা পড়েছে৷
ছবি: Thomas Hoepker
‘দ্য গ্রেটেস্ট’
১৫ই আগস্ট থেকে ১০ই অক্টোবর অবধি বার্লিনের ‘ক্যামেরা ওয়ার্ক’ গ্যালারিতে বক্সিং তথা খেলাধুলার জগতের সুপারহিরো মোহাম্মদ আলীর আলোকচিত্রের প্রদর্শনী চলবে৷ চিকাগোয় আলির এই ছবিটি তোলেন তাঁর এক প্রিয় ফটোগ্রাফার, জার্মান আলোকচিত্রশিল্পী টোমাস হ্যোপকার৷
ছবি: Thomas Hoepker
খ্রিষ্টান সন্তদের মতো
মার্কিন ‘এস্কোয়ার’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের জন্য ১৯৬৭ সালে আলীর এই ছবিটি তোলেন কার্ল ফিশার৷ এর ভিত্তি হলো রেনেসাঁস আমলের ইটালীয় চিত্রকলার একটি প্রামাণ্য ছবি: সন্ত সেবাস্তিয়ানের মৃত্যু৷ ১৯৬৭ সালে যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ তুঙ্গে, তখন আলি বাধ্যতামূলকভাবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে অস্বীকার করেন এই বলে যে, ‘‘কোনো ভিয়েৎকং কখনো আমাকে ‘নিগার’ বলে ডাকেনি’’৷
ছবি: Carl Fischer
পপ এবং স্টার
১৯৬৪ সালে মিয়ামিতে ক্যাসিয়াস ক্লে-র দেখা বিটলসদের সঙ্গে – ক্লে তখনও আলী হননি৷ সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাতের এই ছবিটি তুলেছিলেন হ্যারি বেনসন৷ ক্লে অথবা আলী কোনোসময়েই শুধু বক্সার ছিলেন না, এক হিসেবে তিনি ছিলেন খেলাধুলার জগতের প্রথম পপস্টার৷ যেমন এখানে তিনি যেন এক ঘুঁষিতে চার বিটলেকে ধরাশায়ী করছেন!
ছবি: Harry Benson
নক আউট
সম্ভবত বক্সিং রিং-এ আলীর সবচেয়ে নামকরা ছবি৷ লিউয়িস্টন, মেইন, ১৯৬৫: আলি সদ্য সেকেন্ড রাউন্ডে সনি লিস্টন-কে নক-আউট করেছেন৷ নিল লেইফার ছিলেন সেই ভাগ্যবান ফটোগ্রাফার, যাঁর আঙুল সঠিক মুহূর্তটিতে শাটার টিপেছিল৷
ছবি: Neil Leifer
দোয়া কামনা
১৯৬৫ সালে ক্যাসিয়াস ক্লে ইসলামধর্ম অবলম্বন করে মোহাম্মদ আলী নাম গ্রহণ করেন৷ ষাটের দশকের শেষদিকে তিনি ম্যালকম এক্স-এর মতো নাগরিক আন্দোলন নেতৃবর্গের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং মুসলমান ধর্ম গ্রহণ সম্পর্কে প্রকাশ্যভাবে কথাবার্তা বলতেন৷ আলীর বক্সিং রিং-এ গ্লাভস হাতে দোয়া চাওয়ার এই ছবিটি তোলা হয় লন্ডনে ১৯৬৬ সালে; তোলেন টোমাস হ্যোপকার৷
ছবি: Thomas Hoepker
‘দ্য শো মাস্ট গো অন’
আলী সবসময় যা করতেন, যেটাকে ইংরেজিতে বলে ‘প্লেয়িং টু দ্য গ্যালারি’ – বা জনতার মনোরঞ্জন৷ তিনি ছিলেন একজন ‘বর্ন এন্টারটেইনার’, এমনকি ট্রেনিং-এর সময়েও৷ স্কিপিং রোপ হাতে আলীর এই ছবিটি তুলেছিলেন পেটার আঞ্জেলো জিমন, ১৯৭৪ সালে৷ সেই বছর আলী আফ্রিকার কিনশাসায় ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ নামধারী ফাইটটিতে জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে হেভিওয়েট খেতাব পুনর্বিজয় করেন৷
ছবি: Peter Angelo Simon
আত্মগরিমা
মোহাম্মদ আলী নিজেকে বর্ণনা করতে গিয়ে সর্বক্ষণ যে দু’টি বিশেষণ ব্যবহার করতেন, সেগুলি হলো ‘গ্রেটেস্ট’ এবং ‘প্রিটি’ – মানে সুন্দর৷ তাঁর বক্তব্য ছিল, তিনি অত ভালো বক্সার বলেই তাঁর মুখে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই৷ নয়ত নিজের চেহারা নিয়ে তাঁর হামবড়াই ছিল অনেকটাই লোক-দেখানো৷ চিকাগোর একটি চুল কাটার দোকানে এই ছবিটি তোলেন টোমাস হ্যোপকার৷
ছবি: Thomas Hoepker
জহুরি চেনে জহর
‘মোহাম্মদ আলী’ নামধারী ছবিটি থেকে বোঝা যায়, ফটোগ্রাফি নামের মাধ্যমটিকে আলী ঠিক কতটা বুঝতেন এবং নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কাজে লাগাতে জানতেন৷ টোমাস হ্যোপকার-এর মতো আলোকচিত্রশিল্পীরা বলেন, আলীর সঙ্গে ফটো শুট ছিল অতি সহজ কাজ, কেননা আলী মাধ্যমটির প্রয়োজন ও কার্যকরিতা সম্পর্কে পুরোমাত্রায় ওয়াকিবহাল ছিলেন৷