বাংলাদেশে প্রচলিত দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কওমি মাদ্রাসা একটি৷ উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে বাংলাদেশেও কওমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হয়৷ দীর্ঘকাল ধরে কওমি মাদ্রাসা সরকারের আর্থিক সহায়তা ছাড়াই সাধারণ জনগণের সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেছে ইসলামি এ শিক্ষা ব্যবস্থা৷

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি৷ তবে বেসরকারি হিসেব মতে, সারা দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি৷

কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচালিত ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তরের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরে আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজিসহ সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হয়৷

কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা স্বীকৃত নয়৷ তাই মহিলাদের শিক্ষার জন্য আলাদা কিছু প্রতিষ্ঠান আছে৷ তবে প্রাথমিক স্তরে শিশুদের সহশিক্ষার কোনো বাধা নেই৷

বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর একাংশ পরিচালিত হয় স্বতন্ত্র একটি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে৷ ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’ (বেফাক) নামের এই শিক্ষা বোর্ড কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সেশন পরিচালনা হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী৷ সাধারণত বেফাক আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর নতুন সেশন শুরু হয় আরবি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখ থেকে৷

ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এই কক্ষটি শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গাও৷ সাধারণত কওমি মাদ্রাসাগুলিতে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা একই হয়ে থাকে৷

কওমি মাদ্রাসার প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একজন শিক্ষকও থাকেন৷

কওমি মাদ্রাসাগুলো সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থায় পরিচালিত৷ তাই শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটিনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হয়৷

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিফজুল কোরান (বানানভেদে কোরআন)৷ এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পবিত্র কোরান শরীফ মুখস্থ করে থাকেন৷ তবে হিফজুল কোরান শেষ হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষারো সুযোগ আছে৷

জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এটি কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ শ্রেণি৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এই শ্রেণিকেই মাস্টার্স-এর সমমান বলে ঘোষণা করেছে৷

কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাদিস সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়৷ এ বিষয়ে পড়ানোর মূল মাধ্যম আরবি ভাষা৷ হাদিসের যথাযথ ব্যাখ্যা আরবি ভাষাতেই সম্ভব, এমনটাই মনে করা হয়ে থাকে৷

বাংলাদেশের কাওমি মাদ্রাসাগুলোয় প্রাথমিক স্তরে আরবির সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি পড়ানো হলেও উচ্চস্তরে আরবি ছাড়াও পড়ানো হয় উর্দু এবং ফারসি ভাষা৷

কওমি মাদ্রাসাগুলোয় গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে সামর্থবানদের থাকা ও খাওয়ার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়৷

শিক্ষা কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেবিল-চেয়ারের ব্যবহার নেই কওমি মাদ্রাসাগুলোয়৷ ইসলামি সুন্নত অনুসরণে পাঠদান কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন হয় মেঝেতেই৷

চার্চে নারীরা পাদ্রিদের সহযোগী হিসেবে কিছু দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি পেলেও পাদ্রি হওয়ার অনুমতি নেই৷ তবে অনেক দেশের নারীরা ভ্যাটিকানের এই নিয়ম মানতে রাজি নন৷ তারাও দীক্ষা নিয়ে চার্চ প্রধান হতে চান৷ সেই সুযোগ করে দিচ্ছে রোমান ক্যাথলিক উইমেন প্রিস্টস অর্গ্যানাইজেশন৷ ভোগ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের অধীনে ২০৫ জন নারী পাদ্রি আছেন৷ তারা স্বাধীনভাবে পরিচালিত বিভিন্ন চার্চে দায়িত্ব পালন করছেন৷

কিছু দেশে পুরুষদের ইমামতিতে নারীরা আলাদাভাবে জামাতে অংশ নিতে পারেন৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে তাদের ইমামতির অনুমতি নেই৷ তবে ক্যানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের কিছু দেশে নারী ইমামের নেতৃত্বে নারী মুসল্লিদের নামায পড়ার নজির আছে৷ ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ৬০ জন নারী-পুরুষ ফ্রান্সের একটি মসজিদে দুই নারীর ইমামতিতে জামাতে অংশ নেয়ার খবর আসে রেডিও ফ্রান্সে৷ (ছবি: ফ্রান্সের ইমাম কাহিনা বাহলুল)

আরো ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেছেন সাইরান আতিস৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত এই জার্মান প্রশিক্ষণ নিয়ে বার্লিনের ইবনে রুশদগ্যোটে মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন৷ ২০১৭ সালে আতিস নিজেই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ সেখানে যেকোনো ধর্মের মানুষেরই প্রবেশাধিকার রয়েছে এবং নারী-পুরুষ একসঙ্গেই প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন৷ আতিস ২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের মসজিদে কাউকে নিকাব বা বোরকা পরে আসতে হবে না৷’’

ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু ধর্মে ঋতুমতী নারীদের মন্দিরে প্রবেশ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাধা দেয়া হয়৷ ২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এর বিরুদ্ধে রায় দেয়৷ এরপর ঋতুমতী অবস্থায় কেরালার শবরীমালার ‘আয়াপ্পা’ মন্দিরে প্রবেশ করে ইতিহাস গড়েন দুই নারী৷ ঘটনাটি ভারতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে৷ রক্ষণশীল হিন্দুরা ঋতুমতী নারীদের মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পুনর্বহাল চাইলে সুপ্রিম কোর্ট নতুন আইন তৈরির কথা জানায়৷

প্রথা অনুযায়ী হিন্দুদের পূজা বা বিয়েতে নারীরা পুরোহিত হতে পারেন না৷ তবে এই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির শিক্ষক নন্দিনী ভৌমিক পুরোহিত হিসেবে একাধিক বিয়ে পড়িয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন৷ মহারাষ্ট্রেও একটি পুরোহিত পাঠশালা নারীদের পৌরোহিত্যের দীক্ষা দিয়ে আসছে৷ দু'জন হিন্দু বিধবাকে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের একটা মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল ২০১৬ সালে৷

মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-র্পূব এশিয়ার দেশগুলোতে নারী ভিক্ষুরা পুরুষের সমান মর্যাদা পান না৷ অনেক বৌদ্ধ স্থাপনায় তাদের প্রবেশ নিষেধ৷ এমনকি বসা যায় না পুরষ ভিক্ষুদের সামনেও৷ মিয়ানমারে এই পরিস্থিতি বদলাতে চান কেতুমালা৷ সমঅধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি ফাউন্ডেশন৷ এই সংস্থাটির ৪,৮০০ টি বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে৷ নারী ভিক্ষুদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও চালু করেন তিনি৷