যুদ্ধ এক, শত্রু অনেক৷ সিরিয়ায় সরকার ও বিদ্রোহীদের সাধারণ শত্রু তথাকথিত ইসলামিক স্টেট৷ আইএস না থাকলে সরকার ও বিরোধীদের লড়াই৷ আলেপ্পো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছে এমনই সংগ্রাম৷
বিজ্ঞাপন
শহরের অনেক অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনী৷ বিদ্রোহীরা তাদের তাড়িয়ে গোটা শহরের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়৷ শনিবারই তারা এই কাজে অনেক সাফল্য পেয়েছে৷ সরকারের অনেক সামরিক স্থাপনাও তাদের দখলে এসে গেছে৷
২০১১ সালে বর্তমান সংকট শুরুর পর আসাদ বাহিনী সাধারণত এত বড় মাত্রায় পরাজয়ের মুখ দেখেনি বলে দাবি করছে সিরিয়ান অবজারভেটারি ফর হিউম্যান রাইটস৷ তাদের বক্তব্য, এমনকি প্রায় ৬০০ বার আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করেও তারা সাফল্য পায়নি৷ রাশিয়ার মদদও পরিস্থিতি বদলাতে পারেনি৷ উল্লেখ্য, রুশ বিমান সরাসরি আলেপ্পোয় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকার উপর হামলা চালিয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ ইরানের মিলিশিয়া বাহিনী ও লেবাননের হেজবোল্লাহ-ও আসাদ বাহিনীকে সাহায্য করছে৷
এবারের অভিযানে বিদ্রোহীদের সাফল্যের অন্যতম কারণ তাদের ঐক্য৷ ‘আর্মি অফ কনয়োকেস্ট' বা ‘বিজয়ের সৈন্য' নামের আড়ালে বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠী ছাড়াও রয়েছে জিহাদি গোষ্ঠী৷ এমনকি আল কায়েদার ঘনিষ্ঠ নুসরা ফ্রন্ট নাম বদলে ‘জবহাত ফাতাহ আল-শাম' নামে এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে৷ এছাড়া রামুসা এলাকায় সাম্প্রতিক সাফল্যের ফলে জোটের পক্ষে আলেপ্পোর উপর হামলা চালাতে সুবিধা হয়েছে৷
সরকার অবশ্য পরাজয় স্বীকার করতে নারাজ৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দাবি করছে, যে সরকারি বাহিনী ‘ভাড়াটে সৈন্যদের' হামলা সামলে উঠে রসদ সরবরাহের নতুন পথ নিশ্চিত করেছে৷ তাছাড়া ‘সন্ত্রাসবাদীদের' বিরুদ্ধে বোমারু বিমান থেকে হামলা চালিয়ে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া গেছে বলে সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা দাবি করছে৷
বলা বাহুল্য, সরকার ও বিদ্রোহীদের এই সংঘর্ষের ফলে আলেপ্পো শহরের মানুষ চরম দুরাবস্থার মুখে পড়েছে৷ খাদ্য ও রসদ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে৷ বিপর্যস্ত নাগরিক পরিষেবা আরও চাপের মুখে পড়েছে৷ বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণে শহর ছেড়ে চলে যাওয়াও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প৷
পোপ ফ্রান্সিস রবিবার বলছেন, আলেপ্পো শহরে এত বেশি সংখ্যক বেসামরিক মানুষের দুঃখ-কষ্ট একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিশেষ করে এত শিশু সেখানে কষ্ট পাওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন৷
মেয়ের ক্যানভাসে যুদ্ধের বিভীষিকা
প্রতিদিন সিরিয়া ছাড়ছে অসখ্য মানুষ৷ আশ্রয় খোঁজা মানুষদের মধ্যে আছে শিশুরা, যারা যুদ্ধের বিভীষিকা নিজের চোখে দেখেছে৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করা তেমনই এক মেয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
বাড়িটা যেমন ছিল
সিরিয়ার এক শরণার্থী মেয়ে কলম আর কাগজ বেছে নিয়েছে তার জীবনের গল্প বলতে৷ এই ছবির ক্যাপশনে সে লিখেছে, ‘‘এটা সিরিয়া, মৃত্যু দূত৷ সিরিয়ার রক্ত ঝড়ছে৷’’ মেয়েটির আঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্যাঙ্ক থেকে একটি শহরের দিকে গোলা ছোড়া হচ্ছে৷ একইসঙ্গে আকাশ পথে চলছে হামলা৷ ফলে বাড়িগুলো আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আর একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একজন তা দেখছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
মৃত্যু এবং হতাশা
‘‘এটা আমার বাবা, মা এবং পরিবারের - এবং সিরিয়ার সকল পরিবারের কবর,’’ মেয়েটা লিখেছে৷ তার কথায়, ‘‘সিরিয়ার শিশুদের অবস্থা এমন৷’’ তার হাতে থাকা ছবিটিতে তিনটি কবর এবং শুয়ে থাকা কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
শিশুরা মারা যাচ্ছে
এখানে এজিয়ান সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো আয়লান কুর্দির মরদেহ আঁকার চেষ্টা করেছে মেয়েটি৷ তার মৃত্যু গোটা ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে শিশুদের চরম দুর্দশা ফুটে উঠেছিল কুর্দির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘এটা সিরিয়ার মানুষের আসল ট্রাজেডি’
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে৷ অনেক শিশু হারিয়েছে তাদের অভিভাবক৷ অবৈধ পথে সিরিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
থমকে যাওয়া জীবন
গ্রিসের ইডোমেনি শরণার্থী শিবিরে কিছু শিশু ছিল যারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আশায় ছিল৷ তাদের বাবা-মা সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আগেই ইউরোপে প্রবেশে সক্ষম হয়েছিল৷ কিন্তু বাকিদের আশা ধীরে ধীরে ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হচ্ছে৷ ছবির ক্যাপশন, ‘‘শিশুদের সব আশা, স্বপ্ন এখন ময়লার বাক্সের মধ্যে আছে৷’’
ছবি: DW/M.Karakoulaki
হারানো স্বপ্ন
‘‘শিশুদের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে-’’ লিখেছে মেয়েটি৷ তার কথায়, শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক শিশু ইউরোপে শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল৷ কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছে, সেই স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তব হওয়ার আশা নেই৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘তাদের বুঝতে হবে যে তারা শিশু’
দশ বছর বয়সি এই শিশুটির মতো আরো অনেক শিশু ইডোমেনি ক্যাম্পে রয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, শরণার্থী শিবিরে শিশুদের দিকে আলাদাভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে না৷