আলো আর ছায়ার মিশ্রণে এক স্বপ্নের জগত গড়েছেন ক্রিস্টিন এবং ডেভি৷ কাগজ দিয়ে শিল্পকর্ম গড়েন তাঁরা৷ তবে সাধারণভাবে নয়, সেগুলো প্রদর্শন করতে হয় ভিন্নভাবে৷ তাঁদের এই কাজ লন্ডনে সাড়া জাগিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
কাগজ, আলো এবং ছায়ার খেলার কারিগর এক শিল্পী দম্পতি৷ নাম ক্রিস্টিন এবং ডেভি ম্যাকগায়ার৷ গত দশ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করছেন৷ তাঁরা গল্প তৈরি করেন, সেট সাজান এবং নিজেদের সৃষ্টির কাজে অংশও নেন৷ ক্রিস্টিন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের ছোট্ট দুনিয়া গড়তে চাই৷ আর আমরা সৌভাগ্যবান যে অন্যরা আমাদের সঙ্গে যোগ দেন৷''
২০০৯ সালে তাঁরা প্রথম কাগজের সৃষ্টি তুলে ধরেন৷ নাম ‘দ্য আইসবুক৷' আলো জ্বালালে গল্পটি অনুভব করা যায়৷ আর ‘দ্য হন্টেড ড্রেস' তাঁরা তৈরি করেছিলেন ‘রয়েল শেক্সপিয়ার কোম্পানির' অনুরোধে৷ পুরো ভৌতিক ব্যাপার৷
শেক্সপিয়ার বিশ্বময়
উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক যতবার যত দেশে মঞ্চে এসেছে, খুব কম লেখকের ক্ষেত্রেই তেমনটি হয়েছে৷ সেই অষ্টাদশ শতক থেকে বিশ্বজুড়ে তার জন্মদিন পালন করা হচ্ছে ২৩ এপ্রিল, যদিও কেউ জানে না, শেক্সপিয়ারের সঠিক জন্মতারিখ কোনটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sony Pictures
চিরকালীন
শেক্সপিয়ারের নাটকের আবেদন বিশ্বজোড়া৷ বহু দেশে, বহু ভাষায় তাঁর নাটকের মঞ্চায়ন হয়েছে৷ প্রণয়, কামনা, হিংসা, ষড়যন্ত্র, প্রতিশোধ, হত্যা আর যুদ্ধের মতো বিষয়বস্তু শেক্সপিয়ারের নাটককে সময়ের বেড়াজাল থেকে মুক্তি দিয়েছে, নিয়ে গেছে মানুষের কাছাকাছি৷
ছবি: AFP/Getty Images
আবেগের খেলা
শেক্সপিয়ার সেই কৌশলকে একটি শিল্পের রূপ দিয়ে গেছেন, যাতে একজন দর্শক নাটকের একটি চরিত্রকে খুব সহজেই নায়ক হিসাবে গ্রহণ করতে পারে, অথবা ত্যাগ করতে পারে খলনায়ক হিসাবে৷ যেমন ম্যাকবেথে আমরা দেখি ক্ষমতার মোহ তাঁকে কীভাবে সিংহাসনে নিয়ে যায়৷ কিন্তু সেই গল্প শেষ হয় ম্যাকবেথের পতন আর রক্তাক্ত হত্যায়৷
ছবি: Fars
ওকাভাঙ্গো ম্যাকবেথ
শেক্সপিয়ারের লেখা আফ্রিকার মিথলজির সঙ্গে মিলিয়ে নিতেও সমস্যা হয়নি৷ ২০০৯ সালে বতসোয়ানায় প্রথমবারের মতো অপেরা মঞ্চস্থ হয়, যার নাম ছিল ‘ওকাভাঙ্গো ম্যাকবেথ’৷ এ নাটকের নির্দেশক আলেকজান্ডার ম্যাককল স্মিথ স্থানীয় রাজনৈতিক চালচিত্রই তুলে এনেছেন শেক্সপিয়ারের গল্পের মধ্য দিয়ে৷
ছবি: Getty Images
সামুরাই শেক্সপিয়ার
জাপানের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আকিরা কুরোসাওয়া ম্যাকবেথের চলচ্চিত্ররূপ দেন ১৯৫৭ সালে৷ ‘কুমোনোসু ইয়ো’ বা ‘মাকড়জালের প্রাসাদ’ নামের চলচ্চিত্রটিতে আমরা দেখি ষোড়শ শতকের জাপানে ক্ষমতালিপ্সা আর পতনের সেই একই গল্প৷
ছবি: picture-alliance
এখনো রোমিও, এখনো জুলিয়েট
রোমিও আর জুলিয়েটকে সর্বকালের সবেচেয়ে রোমান্টিক চরিত্র বললে কি খুব বাড়িয়ে বলা হবে? রাস্টা টোমাস ও অ্যাদ্রিয়েনে কান্টেরনা ঠিক একই কথা ভেবেছেন৷ তাই রোমিও জুলিয়েটকে তাঁরা গত বছর হামবুর্গের মঞ্চে হাজির করেন ‘রক ব্যালে’-র আমেজে৷
ছবি: Manfred H. Vogel
শিয়া রোমিও, জুলিয়েট সুন্নি
শেক্সপিয়ারের সবেচেয় জনপ্রিয় এই প্রেমকাহিনির ইরাকি মঞ্চরূপে রোমিওকে দেখা যায় এক শিয়া যুবকের বেশে, যেখানে তাঁর প্রেমিকা জুলিয়েট সুন্নি পরিবারের মেয়ে৷ ২০১২ সালে ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট ইন বাগদাদ’ নাটকের মধ্য দিয়ে ইরাকি নির্দেশক মুসলিম সমাজের পুরনো সেই বিভাজনকেই ফুটিয়ে তুললেন শেক্সপিয়ারের গল্পের ছাঁচে ফেলে৷
ছবি: Getty Images
রাশিয়ায় হ্যামলেট
রোমিও ও জুলিয়েটের পর শেক্সপিয়ারের সবেচেয় জনপ্রিয় নাটক হ্যামলেট৷ ডেনমার্কে এর মঞ্চরূপে আমরা দেখি পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে প্রিন্স হ্যামলেট কীভাবে পুরো রাজপরিবারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেন৷ ২০০৬ সালে মস্কোয় রুশ সেনাবাহিনীর থিয়েটারেও হ্যামলেটকে বলতে শোনা যায় – ‘‘টু বি অর নট টু বি’’৷
ছবি: Getty Images
দক্ষিণ কোরিয়ায় গ্রীষ্মরাতের স্বপ্ন
শেক্সপিয়ার ছাপ ফেলেছেন পূর্ব ইউরোপেও৷ ইয়োহানজা থিয়েটার কোম্পানি ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার দর্শকদের জন্য মঞ্চে আনে ‘আ মিডসামার নাইটস ড্রিম’- এর কোরীয় সংস্করণ৷ কোরীয় সংগীত আর মিথের সঙ্গে শেক্সপিয়ারের গল্প সেখানে মিলে মিশে একাকার৷
ছবি: Getty Images
কাবুলে টেমপেস্ট
আফগানিস্থানে ১৯৬০ এর দশক ছিল থিয়েটারের স্বর্ণযুগ৷ এরপর তালেবান শাসনামলে এই শিল্পমাধ্যমটি নিষিদ্ধ হয়৷ ২০১২ সালের জুলাইয়ে কাবুলের এক মঞ্চে ফিরে আসে থিয়েটার, ফিরে আসে শেক্সপিয়ারের ‘দ্য টেমপেস্ট’ হয়ে৷ সেই ঝোড়ো হাওয়ায় আফগানরা যেন তালেবানি অন্ধকারকে বিদায় দিয়ে নতুন এক সূচনার আবাহনী গাইল৷
ছবি: Getty Images
আসলেই শেক্সপিয়ার?
এ বিতর্ক নতুন নয়৷ হ্যামলেট, ম্যাকবেথের মতো বিখ্যাত নাটকগুলো আসলেই শেক্সপিয়ারের লেখা? জার্মান পরিচালক রোলান্ড এমেরিশ ২০১১ সালে তাঁর ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র ‘অ্যানোনিমাস’-এ সেই গবেষকদেরই পক্ষ নিয়েছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন, আর্ল অফ অক্সফোর্ড এডওয়ার্ড ডে ভিয়ের-ই ছিলেন এসব নাটকের আসল স্রষ্টা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sony Pictures
10 ছবি1 | 10
ক্রিস্টিন ম্যাকগায়ারের জন্ম জার্মানিতে৷ আর তাঁর স্বামী শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত৷ ৩৩ বছর বয়সি এই নারী রিদমিক জিমনাস্টিকে জার্মানি চ্যাম্পিয়ন৷ তিনি নাচও শিখেছেন৷ তাঁর স্বামী ডেভি ম্যকগয়ার লন্ডনে বড় হয়েছেন৷ চলচ্চিত্র এবং থিয়েটার তাঁর বিষয়৷ তাঁরা তাঁদের প্রথম পরিচয় নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেছেন৷
প্রথম দেখাতেই নিজেদের আবিষ্কার করেছিলেন তারা, বুঝেছিলেন একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷ তবে কিছু জটিলতাও ছিল৷ ডেভি ম্যাকগায়ার বলেন, ‘‘প্রথম দেখাতেই বুঝেছিলাম ক্রিস্টিন অনেক স্পষ্টভাষী৷ জার্মান আচরণ৷ তবে বিষয়টি ইন্টারেস্টিং৷ কেননা ব্রিটিশদের আচরণে কিছু কূটনৈতিক ব্যাপার রয়েছে৷ তারা একটি বিষয় অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে বুঝতে পারে, আগেই আলোচনা করা উচিত ছিল৷ তখন বড় সমস্যা তৈরি হয়৷''
আলোছায়ার জগত তৈরির কাজে এই শিল্পী দম্পতির ব্যক্তিগত ও পেশাদারী জীবনের মধ্যে সীমা মিলেমিশে যায়৷ ডেভি ম্যাকগায়ার বলেন, ‘‘আমাদের কঠোর নীতি রয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টার পর কাজ নিয়ে আর কথা বলা যাবে না৷ কিন্তু এক বা দুই সপ্তাহ আমরা সেই নীতি মানতে পেরেছিলাম মনে হয়৷''
অবশ্য ক্রিস্টিন বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তবে অন্যদিক দিয়ে চিন্তা করলে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ তখন একসঙ্গে ঘুরে বেড়াই যা সত্যিই চমৎকার৷''