স্থাপত্যের ক্ষেত্রে শুধু ডিজাইন নয়, আলোকসজ্জাও গুরুত্বপূর্ণ৷ কৃত্রিম আলো ছাড়াই যদি সেই আলোকসজ্জা সম্ভব হয়, তাহলে তার মাত্রাই আলাদা৷ জার্মানির এক ডিজাইনার তাঁর অভিনব আইডিয়ার মাধ্যমে লাইট ডিজাইনকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরছেন৷
বিজ্ঞাপন
আলো ও ডিজাইনের মধ্যে নতুন ‘সেতুবন্ধ’
04:22
বন শহরের কাছে একটি রেস্তোরাঁ যাতে দিনের আলো এবং রাতের অন্ধকারেও অপরূপ হয়ে থাকে, তা নিশ্চিত করতে আন্দ্রেয়াস শুলৎস বিশেষ আলোকসজ্জা সৃষ্টি করেছেন৷ ডিজাইনার হিসেবে তিনি অবশ্য শুরু থেকেই আলোকসজ্জার সঙ্গে পারিপার্শ্বিকের মেলবন্ধনে বিশ্বাস করেন৷ শুলৎস বলেন, ‘‘আইডিয়া ছিল এমন সারফেস রাখা, যার উপর আলো পড়লে বেশি প্রতিফলন ঘটবে না৷ এমন নিষ্প্রভ এক সারফেস, সামনের কাচেও যার প্রতিফলন ঘটবে না৷ ফলে বাইরে তাকালে সেই সারফেস চোখেই পড়বে না৷ এটাই ছিল কনসেপ্টের আইডিয়া৷''
ড্রাখেনফেল্স রেস্তোরাঁর ইজারাদার হিসেবে হেয়ারমান নলডেন সহজেই আলোকসজ্জা বদলানোর সুযোগ থাকায় খুশি৷ তিনি বলেন, ‘‘সন্ধ্যার সময় আমি এর সুফল পাই৷ তাছাড়া ড্রাখেনফেল্স শুধু দিনের বেলায় খোলা থাকে না, এখানে অনেক অনুষ্ঠানও হয়৷ সন্ধ্যায় অন্ধকার নামলে আলোর প্রয়োজন হয়৷''
সিলিংয়ের আলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সাজানো যায়৷ টেবিল-চেয়ার নাড়াচাড়া করলেও আলোর ছটা ঠিক টেবিলের মাঝে ফেলে প্রয়োজনীয় আবহ সৃষ্টি করা সম্ভব৷ চৌকো রঙিন এলইডি বাতিগুলি সত্যি নজর কাড়ার মতো৷ এর মধ্যে লালের ছটা ড্রাগনের রক্তের রংয়ের প্রতীক৷ এটাই ‘ড্রাখেনফেল্স' রেস্তোরাঁর নিজস্ব রং৷ নিজস্ব অনুষ্ঠান থাকলে কোম্পানিগুলি তাদের ব্র্যান্ডের রংও ব্যবহার করতে পারে৷
এখানকার আলোকসজ্জার কনসেপ্টের জন্য আন্দ্রেয়াস শুলৎস ও তাঁর টিম এ বছর হোটেল-রেস্তোরাঁ বিভাগে জার্মান লাইট ডিজাইন পুরস্কার পেয়েছেন৷ তবে এটাই আন্দ্রেয়াস শুলৎসের সংস্থার একমাত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকল্প নয়৷ লাইপসিশ শহরে মাটির নীচে এক লোকাল ট্রেন স্টেশনের আলোকসজ্জার জন্যও স্বীকৃতি পেয়েছে এই টিম৷ সেখানে কৃত্রিম আলো দিয়েই প্ল্যাটফর্মে দিনের আলোর আবহ তৈরি করা হয়েছে৷ বল্টিক সাগর উপকূলে এক শিল্পকলার মিউজিয়ামের আলোর ডিজাইনের জন্যও পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা৷ আন্দ্রেয়াস শুলৎস বলেন, ‘‘এখানে প্রশ্ন ছিল, কীভাবে এই ভবনকে এমনভাবে আলোকিত করা যায়, যাতে কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন না পড়ে৷ অর্থাৎ দিনের আলোকে ঠিকমতো কাজে লাগানো, তার ‘ডায়নামিক' বা গতিশীল চরিত্র ধরে রাখা, প্রদর্শনীর ঘরগুলিকে প্রাণবন্ত করে তোলা – এ সব ছিল চ্যালেঞ্জ৷ কারণ একদিকে সংগ্রহশালার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ দিনের আলো শিল্পকর্মের ক্ষতি করতে পারে৷ তার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে৷ এই সিস্টেমে আমরা সেটা করতে পেরেছি৷''
বার্লিনের আলোকসজ্জা
অক্টোবর মাসে বার্লিনে দু’সপ্তাহ ধরে চলবে দু-দুটি লাইট ফেস্টিভাল বা আলোকোৎসব৷ প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ এই মুক্ত আলোকসজ্জা দেখে মুগ্ধ হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
আলো ঝলমল বার্লিন
বার্লিনের বাৎসরিক ‘লাইট শো’-গুলি শুরু হয়েছে৷ অক্টোবরের দুই থেকে আঠেরো তারিখ পর্যন্ত সারা বিশ্ব থেকে আগত আলোকশিল্পীরা জার্মানির রাজধানীকে সাজাবেন তাঁদের কল্পনার রঙ দিয়ে৷ আপাতত চলছে ‘আলোকোজ্জ্বল বার্লিন’; ‘ফেস্টিভাল অফ লাইটস’ শুরু হবে ৯ই অক্টোবর তারিখে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Schwarz/
পটসডাম চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
সন্ধ্যা নামলেই ৮০টির বেশি লাইট ইনস্টলেশন বার্লিনের রাস্তাঘাট, বাড়িঘরকে শিল্পকর্মে পরিণত করবে৷ ২রা অক্টোবর ‘আলোকোজ্জ্বল বার্লিন’ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি মাছ উপস্থিত জনতার মাথার উপর দিয়ে ভেসে বেড়ায়৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
ব্রিজ অফ হার্টস
জার্মানির পুনর্মিলনের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ওবারবাউম ব্রিজটিকে একটি ‘ব্রিজ অফ হার্টস’-এ পরিণত করা হচ্ছে৷ ফ্রিডরিশহাইন থেকে ক্রয়েৎসব্যার্গ যেতে পড়ে এই ব্রিজটি৷ বার্লিন প্রাকারের পতন অবধি এই সেতুটি ছিল পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের মধ্যকার সীমান্ত৷ আজ এই সেতু দুই জার্মানির একীকরণের প্রতীক৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
পরিবর্তনশীল বার্লিন
এ বছরের ফেস্টিভালের মটো হলো ‘পরিবর্তনের আলোকরেখা – বার্লিন, একটি বিভক্ত শহর থেকে গ্লোবাল মেট্রোপোলিস’৷ শিল্পী ডানিয়োলা ফাব্যার-এর ‘বড় হওয়া’ শিল্পকর্মটি একটি ইস্পাতের ভাস্কর্য৷ তাঁর এই শিল্পকর্মের বক্তব্য হলো: ‘বদলাও এবং নিজেকে বদলানোর সাহস রেখো’৷
ছবি: Agentur Baganz
আলোকের ঊর্মিমালা
ইউনেস্কো যে আলোক ও আলোক প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক বছর ঘোষণা করেছে, ‘আলোকোজ্জ্বল বার্লিন’ তারই অঙ্গ হতে চায়৷ বার্লিনের দৃষ্টিকোণ থেকে আলো জীবনের একটা বুনিয়াদি প্রয়োজন, সেই সঙ্গে সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপরিহার্য অংশ৷ এর্নস্ট রয়টার চত্বরের ভাস্কর্য ও ইনস্টলেশনগুলোকে দেখলে সেটা বোঝা যায়৷
ছবি: Agentur Baganz
পথ নির্দেশ
স্প্রে নদীর বুকে ভাসমান যাত্রীবাহী স্টিমারগুলোকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে, সেগুলো যেন নিজেরাই আর্ট ইনস্টলেশন৷ আসলে তারা যাত্রীদের ফেস্টিভালের একটি অকুস্থল থেকে আরেকটি অকুস্থলে পৌঁছে দিচ্ছে৷ ফেস্টিভাল দেখার অন্যান্য পন্থা হলো বাস ট্যুর, ফটো সাফারি, গাইডেড ওয়াকিং ট্যুর কিংবা বাইসাইকেল ট্যুর৷
ছবি: DW/Ch.Deicke
আলোকের এই ঝর্ণাধারায়
আলোকোৎসবে এবার ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণ সহ বার্লিনের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ও বস্তুকে আলোকোদ্ভাসিত করা হবে৷ ২০০৫ সাল যাবৎ বার্লিনে এই ফেস্টিভাল হচ্ছে, আজ তা বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় লাইট ফেস্টিভালগুলোর মধ্যে গণ্য৷ ২০১৪ সালের আলোকোৎসবে এসেছিলেন ২০ লাখের বেশি ট্যুরিস্ট৷
ছবি: Reuters/Hannibal
7 ছবি1 | 7
১৯৯১ সাল থেকে বন ও বার্লিনে আন্দ্রেয়াস শুলৎসের দপ্তর রয়েছে৷ ২৬ জন কর্মীদের মধ্যে অনেকেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লাইট ডিজাইনার৷ তাঁদেরই একজন মার্টিনা ভাইস৷ তিনি বলেন, ‘‘একেবারে মৌলিক বিষয়গুলি শিখতে হয়৷ দিনের আলো নিয়েও অনেক ভাবনা-চিন্তা করতে হয়৷ যেমন মানুষের উপর বা দপ্তরে কাজের জায়গায় তার প্রভাব কী?''
আন্দ্রেয়াস শুলৎস এমন অপ্রচলিত আইডিয়ার মাধ্যমে আলো ও ডিজাইনের মাধ্যমে এক সেতুবন্ধ গড়ে তুলছেন৷ জার্মানির ‘ডয়চে টেলেকম' কোম্পানির জন্য আক্ষরিক অর্থেই একটি সেতু গড়ে দিয়েছেন তিনি৷ আন্দ্রেয়াস বলেন, ‘‘এক টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি যে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে, এই সেতুর মাধ্যমে সেটা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম৷ গোটা সেতু জুড়ে এক মিডিয়া স্ক্রিন রয়েছে, যা একেবারে সেতুর মাপেই তৈরি৷ এর মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায়৷''
আন্দ্রেয়াস শুলৎস নিজে অবশ্য এই স্পষ্ট বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যে লাইট ডিজাইন তাঁর কাছে আলোকসজ্জার চেয়ে অনেক বড় বিষয়৷
আলো আর বরফ মিলিয়ে এক আশ্চর্য উৎসব
প্রতিবছর শীতে হাজার হাজার পর্যটক আসেন উত্তর চীনের হার্বিনে, বরফ কেটে গড়া শিল্পকলা দেখতে৷ এ বছর ছিল ৩২তম ‘আইস ফেস্টিভাল’৷
ছবি: picture alliance/Kyodo
বরফে তৈরি ক্রেমলিনের ওপর আতসবাজি
আইস ফেস্টিভালে প্রতিবছরই নানা বিশ্বখ্যাত ভবন, স্থাপত্য বা ভাস্কর্যের ‘তুষার সংস্করণ’ দেখতে পাওয়া যায়৷ এ বছরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাউই উড়েছে এক বরফের ক্রেমলিনের চূড়ার ওপর৷
ছবি: Reuters/A. Song
সবে মিলে করি কাজ
সুবিশাল ‘তুষার স্থাপত্য’-গুলির জন্য একা নয়, অনেক শিল্পীকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়৷ কে কোন খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে৷ যা-তে সব কিছু ঠিকঠাক চলে, সেজন্য ‘তুষার ভাস্কর’-দের অনেকে এক বছর ধরে অনুশীলন করেছেন৷
ছবি: Reuters/China Daily
লম্বা লাইন
হার্বিনের আইস ফেস্টিভাল শুধু চীনেই নয়, বিশ্ববিখ্যাত৷ কাজেই অতিথি-দর্শকদের লাইন পড়ে দিগন্ত অবধি৷ তাপমাত্রা যে শূন্যের কতটা নীচে, তা কেউ তোয়াক্কা করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Zhao
ওলাফ
ওয়াল্ট ডিজনি-র কার্টুনচিত্র ‘ফ্রোজেন’-এর চরিত্র ওলাফ শুধু চীন নয়, হার্বিনেও পৌঁছে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/W. Hong
শিল্পকলা তো শুধু নয়, খেলাধুলোও আছে
আইস ফেস্টিভালের গোটা নাম হলো ‘আইস অ্যান্ড স্নো ফেস্টিভাল’ – অকারণে নয়৷ তুষার ভাস্কর্যের সাথে সাথে ছোটদের বা বড়দের সময় কাটানোর জন্য নানারকম ব্যবস্থা আছে: যেমন স্লেজে চড়া৷ বরফ আছে কি করতে!
ছবি: Getty Images/AFP/W. Zhao
আর খিদে পেলে?
আছে নানা ধরনের খাবারদাবার৷ খেয়াল করবেন, ঠেলাগাড়িটা চলেছে কিন্তু স্লেজের ওপর, ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে ট্র্যাক্টর৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Zhao
রাতের বেলা
হার্বিনের চেহারা মায়াময়, কেননা বরফের প্রাসাদ আর ভাস্কর্যগুলো সাজানো হয় মোমবাতি আর রঙিন বাতি দিয়ে৷