হুমকি অনুযায়ী শুক্রবার চীন থেকে আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপালো ট্রাম্প প্রশাসন৷ চীন পালটা পদক্ষেপের অঙ্গীকার করেছে৷ এদিকে শুক্রবারও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
চীনের শিল্প ও বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই ক্ষোভ রয়েছে৷ চীনা কোম্পানিগুলি মুক্ত বাণিজ্য ও উদার বিনিয়োগ নীতির সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন দেশে নিজেদের অবস্থান জোরদার করে চলেছে৷ প্রভাব বিস্তারের এই উদ্যোগে তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও পাচ্ছে৷ অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানিগুলি চীনে ব্যবসা করতে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখীন হয়৷ এমনকি তাদের প্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞানও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়৷ কিন্তু চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের খাতিরে এতকাল তেমন কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতির আওতায় চীনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছেন৷ এমনকি প্রয়োজনে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতেও পিছপা হচ্ছেন না তিনি৷ তবে এমন সংঘাতের প্রবল ঝুঁকি সম্পর্কে তাঁর প্রশাসন কতটা সচেতন, সে বিষয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছে৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকায় কর্মসংস্থানের উপর এর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে৷ শুক্রবার এমনই এক সংঘাতের দিন৷ শুধু চীন ও অ্যামেরিকা নয়, এমন সংঘাতের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আরও বড় আকারের বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত এড়ানো সম্ভব হবে বলে আশার মাঝেই হুমকি অনুযায়ী ওয়াশিংটন শুক্রবার চীন থেকে আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে৷ ফলে প্রায় ২০,০০০ কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের আমদানির উপর ১০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হলো৷ তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি৷ ফলে শুক্রবারও চীনের পুঁজিবাজার ও মুদ্রা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে৷ উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও চীনের উপর বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে৷ চীনও পালটা পদক্ষেপ নিয়েছে৷
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বাণিজ্যমন্ত্রী স্টিভ মেনুচিন, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার ও চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী লিউ হে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বোঝাপড়ার লক্ষ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেন৷ শুক্রবারও তাঁদের আলোচনায় বসার কথা৷ তাঁদের মধ্যে রফা হলে সংঘাত আপাতত এড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এমনকি দুই দেশ নীতিগতভাবে সাধারণ অবস্থান নিলে আগামী কয়েক সপ্তাহে খুঁটিনাটি বিষয়গুলির নিষ্পত্তির সম্ভাবনাও রয়েছে৷
আলোচনার মাঝে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ায় ৷ অ্যামেরিকার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই মন্তব্য করা হয়েছে৷ তবে পালটা পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি৷ তবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশা এখনো ত্যাগ করেনি চীনা কর্তৃপক্ষ৷
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা
২০১৭ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার৷ ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে৷ চীন পালটা জবাব দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Minneapolis Star Tribune
তদন্তের ঘোষণা
২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিন পর মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনের অন্যায় আচরণের তদন্তের ঘোষণা দেন৷ ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারা অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই কোনো দেশের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
চীনের প্রতিনিধি প্রেরণ
গত মার্চ মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা লিউ হে-কে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান৷ সেখানে তিনি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টেভেন মানুশিন ও বাণিজ্য প্রতিনিধি লাইটহাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এই সময় বাণিজ্য ক্ষেত্রে উত্তেজনা প্রশমন নিয়ে দুই পক্ষ কথা বলে৷ লিউ হে এখন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: Reuters/J. Lee
চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
চলতি বছরের ২২ মার্চ ৬০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ চীনের বিরুদ্ধে তিনি মেধাসত্ত্ব চুরির অভিযোগ আনেন৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
চীনের জবাব
পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও ৫০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের মতোই তারা এসব পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হবে বলে জানায়৷ ট্রাম্প সমর্থক ভোটাররা বেশি বাস করেন এমন সব রাজ্যের সয়াবিন, মাংস, হুইস্কিকে শুল্কের আওতায় আনার কথা জানায় চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা?
গত এপ্রিলে যাত্রীবহণকারী গাড়ি আমদানির উপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয় চীন৷ এ ধরনের গাড়ির উপর ধার্য থাকা শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে বলে জানায় দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Li Xueren
হুমকি স্থগিত
মে মাসের ২০ তারিখে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টেভেন মানুশিন জানান, দুই দেশ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাই যুক্তরাষ্ট্র আপাতত চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের বিষয়টি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: Reuters/A.P. Bernstein
আবারও ঘোষণা
শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখার তিন সপ্তাহ পর ট্রাম্প প্রশাসন আবারও ৫০ বিলিয়নের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়৷ পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে৷
ছবি: picture-alliance/MediaPunch/CNP/C. Kleponis
কার্যকর
অবশেষে ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে, ৬ জুলাই থেকে ৩৪ বিলিয়নের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে৷ চীন বলেছে, এর ফলে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে৷ বিষয়টি নিয়ে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে বলেও জানায় চীন৷