1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলোচনায় ব্যাংক আমানতের ওপর শুল্ক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ জুন ২০১৭

প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের আগে আলোচনায় ছিল ভ্যাট৷ তবে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট পেশের পর আলোচনার তুঙ্গে এখন ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক৷ এর আরো বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে রবিবার ব্যাংক খোলার পর৷

Bangladesch Parlament Gebäude in Dhaka Nachtaufnahme
বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রীছবি: picture-alliance/Dinodia Photo

বাংলাদেশের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ এটা মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ৷ এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)'র পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা৷

এবারের বাজেটে রাজস্ব আহরণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা৷ এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ট এনবিআর খাতে আসবে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা৷ এনবিআর বহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬ ২২ কোটি টাকা৷ কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা৷

এবারের বাজেটে ঘাটতি রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা৷ ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা৷ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা৷  প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ৷

এবার বাজেটের আগে থেকেই ভ্যাট ছিল আলোচনায়৷ ব্যবসায়ীরা শতকরা ১৫ ভাগের পরিবর্তে ১৩ ভাগ ভ্যাটের দাবি জানিয়ে আসছিলেন৷ অর্থমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত ভ্যাট ১৫ শতাংশেরই ঘোষণা দিয়েছেন৷

বাজেটে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে ও আমদানির ক্ষেত্রে এগুলোর প্রভাব পড়বে৷ এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে৷

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে, তার মধ্যে রয়েছে গুড়া দুধ, মাখন, শুকনা আঙুর, যে কোনও ধরণের তাজা ফল, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, চকলেট, শিশু খাদ্য, পটেটো চিপস, সস, আইসক্রিম, লবণ, জ্বালানি তৈল, পেইন্ট, বার্নিশ, সৌন্দর্য অথবা প্রসাধনী সামগ্রী, শেভিং কিটস, শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, টয়লেট সামগ্রী, রুম সুগন্ধি, সাবান, ডিটারজেন্ট, মশার কয়েল, অ্যারোসল ও মশা মারার সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, প্লাস্টিকের দরজা, জানালা, ফ্রেম, মোটর গাড়ির টায়ার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ওভেন ফ্রেবিক্স, কার্পেট ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফ্লোর আচ্ছাদন৷

এছাড়া শিশুদের গার্মেন্টস পণ্য, বিদেশি জুতা, ইমিটেশন জুয়েলারি, স্টেইনলেস স্টিলের সিঙ্ক, ওয়াশ বেসিনের যন্ত্রাংশ, ওয়াটার ট্যাপ, বাথরুমের ফিটিংস, স্টেইনলেস স্টিল বেল্ট, দুই ও চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটোরিকশা/থ্রি হুইলার ইঞ্জিন, সিলিং ফ্যান ও এর যন্ত্রাংশ, রঙিন টেলিভিশন, সিম কার্ড, সিসি ভেদে গাড়ি ইত্যাদির দামও বাড়বে৷

স্থানীয় বা সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূরক শুল্কারোপের ফলে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে, তার মধ্যে রয়েছে– সব ধরনের বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হট ডগ, পিৎজা, ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংক, পাস্তা, লাজারানো, মিনারেল ওয়াটার (৩ লিটার পর্যন্ত), কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুল প্রভৃতি৷

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভ্যাট ১৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হলেও সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পন্য ভ্যাটের বাইরে  রাখা হয়েছে৷ এই বাজেটটি মনে হচ্ছে উন্নয়নবান্ধব৷ সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো হলেও আনুপাতিক হারে তা কমেছে৷ ফলে এই বাজেট জনবান্ধব কিনা তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে৷’’

এই বাজেট জনবান্ধব কিনা তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে: ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

এবারের বাজেটে এখন থেকে যারা ব্যাংকে কমপক্ষে এক লাখ টাকা রাখবেন, বছর শেষে তাদের আবগারি শুল্ক গুনতে হবে৷ আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেউ ব্যাংকে রাখলে তাকে আবগারি শুল্ক দিতে হবে ৮০০ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত কেউ আমানত রাখলে তাকে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা,  ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে রাখলে তার ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ১২ হাজার টাকা৷ এছাড়া ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার ওপরে রাখলে তাতে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ২৫ হাজার টাকা৷’’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদ ৫ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে৷ এদিকে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ৷ এখন ব্যাংকে এক লাখ টাকা আমানত থাকলে বছর শেষে যে ৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে তার মধ্যে উৎসে কর আবগারি শুল্ক ও মূল্যস্ফীতি বাবদ কেটে রাখার পর মূল মূলধনই কমে যাবে আমানতকারীর৷

এনিয়ে ব্যাংক গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷ সাধারণ মানুষ সব কিছু বাদ দিয়ে এখন এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করছেন, কথা বলছেন৷ কেউ কেউ বলছেন, ‘‘আমাদের বোধ হয় এখন আবার মাটির ব্যাংকের যুগে ফিরে যতে হবে৷’’ পুরনো ঢাকার গৃহিনী কবিতা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা অনেক কষ্ট করে ব্যাংকে টাকা জমাই৷ মায়ের কাছ থেকে নিই৷ স্বামীর কাছ থেকে নিই৷ টুকটাক কাজ করেও টাকা জমাই৷ পরিবারের বিপদে, ছেলে মেয়ের লেখা পড়া, চিকিৎসার কাজে লাগে৷ এখন এই টাকাও কেটে নেবে৷ এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না৷ এটা অর্থমন্ত্রীর একটা তুঘলকী সিদ্ধান্ত৷’’

এটা অর্থমন্ত্রীর একটা তুঘলকী সিদ্ধান্ত: গৃহিনী কবিতা আক্তার

This browser does not support the audio element.

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদও এর বিরোধিতা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘১ লাখ টাকার সিলিংটা ঠিক নয়৷ সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষও তার বিপদের সময়ের জন্য এক লাখ টাকা ব্যাংকে রাখেন৷ এটা অনেক বেশি টাকার জন্য হতে পারে৷ কারণ, তারা বিনিয়োগ করতে পারেন অন্য খাতে৷’’

এদিকে সিপিডি মনে করে, এই বাজেটের ফলে মধ্যবিত্বের ওপর চাপ বাড়বে৷ মূল্যস্ফীতি বাড়বে৷ সিপিডি'র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘বাজেটে যে কর ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, বাড়বে ভোগ ব্যয়, এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে৷ এতে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বেন৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সামগ্রিকভাবে বাজেটে যে আয় ও ব্যয় ধরা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই৷ শুধুত্ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করা যাবে না৷ বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করার একটা রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে৷ সেটা হলো, জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করা, কিন্তু বাস্তবে আমরা বাজেট প্রনয়ন ও বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা দেখি না৷’’

আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত শুক্রবার বিকেলে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা হলেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না৷ কারণ, অনেক পণ্যে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভ্যাট বাড়লে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য হবে না৷’’

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘নতুন বাজেটে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি রেখেছি৷ পাইপ লাইনেও অনেক বেশি টাকা আছে৷ আমরা এই টাকার সদ্ব্যবহার করতে পারি না৷ টোটাল টাকা ব্যবহার করতে পারছি না৷ এরপরেও বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ বেশি রেখেছি৷ কারণ, এর মধ্যদিয়েই এই টাকা ব্যবহারের সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ