২৭ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে আলোচিত ‘পানামা পেপার্স' কর ফাঁকি কেলেঙ্কারির শুনানি শুরু হয়েছে৷
ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর পানামার একটি ফৌজদারি আদালতে অভিযুক্ত ২৭ জনের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয়েছেছবি: Arnulfo Franco/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্ত ২৭ জনের মধ্যে ‘পানামা পেপার্স' কেলেঙ্কারির প্রধান সন্দেহভাজন মোজ্যাক-ফনসেকা কনসালটেন্সি ফার্মের প্রতিষ্ঠাতাও রয়েছেন৷ ‘মোজ্যাক-ফনসেকা' প্রতিষ্ঠানটির ফাঁস হওয়া নথি থেকেই বিশ্বব্যাপী ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ লুকিয়ে রাখার তথ্য প্রকাশ হয়েছিল৷
সোমবার (৮ এপ্রিল) ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর পানামার একটি ফৌজদারি আদালতে অভিযুক্ত ২৭ জনের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয়েছে৷
অর্থ পাচারের অভিযোগের মোজ্যাক, ফনসেকা ও তাদের প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মচারীরা বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন৷২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ প্রতিষ্ঠানটিই ‘পানামা পেপার্স' কেলেঙ্কারির গোপন নথি ফাঁস হওয়ার কেন্দ্রবিন্দু ছিল৷
'পানামা পেপার্স' কেলেঙ্কারি আসলে কী?
জার্মান সংবাদপত্র 'জুডডয়েচে সাইটুং'য়ে ২০১৬ সালে এক কোটি ১৫ লাখ গোপন আর্থিক নথি প্রকাশিত হয়েছিল৷বিশ্বের ধনী ব্যাক্তিদের অফশোর সংস্থায় তাদের সম্পদ লুকিয়ে রাখার তথ্য ফাঁস হওয়া নথি থেকে প্রকাশ পায়৷
‘পানামা পেপার্স’ সম্পর্কে আপনার যা জানা প্রয়োজন
কে, কী, কোথায় এবং কখন: তথাকথিত ‘পানামা পেপার্স’ ফাঁসের পর এ সব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে৷ আর বিপদে আছেন অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ যাদের এতকাল সৎ ভাবা হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
‘পানামা পেপার্স’ আসলে কী?
পানামা পেপার্স হচ্ছে এগারো দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডকুমেন্ট এবং দুই দশমিক ছয় টেরাবাইট তথ্য যা ই-মেল, আর্থিক বিবরণী, পাসপোর্ট এবং কর্পোরেট নথি আকারে আছে৷ আইন বিষয়ক সংস্থা মোসাক ফনসেকার কাছে এ সব তথ্য ছিল৷ রবিবার প্রকাশিত এই তথ্যে অনেক কাগুজে প্রতিষ্ঠানের খদ্দেরদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে, যারা ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ অবধি নিজেদের আয়ের সঠিক তথ্য গোপন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/J. Pelaez
মোসাক ফনসেকা কী?
দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকা ২০১২ সালে মোসাক ফনসেকাকে ‘অফসোর ফাইনান্সের’ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল, যারা নিজেদের সম্পর্কে কোনো তথ্যই প্রকাশ করতো না৷ শেল কোম্পানিদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান পানামাভিত্তিক এই আইন বিষয়ক সংস্থাটি৷ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো ‘ট্যাক্স হেভেন’ বলে পরিচিত প্রায় সব জায়গাতেই তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজ আছে৷
ছবি: Reuters/B. Yip
আইসিআইজে কে?
ওয়াশিংটনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম আইসিআইজে ফাঁস হওয়া দলিলদস্তাবেজ পরীক্ষা করে দেখেছে৷ বিশ্বের ৬৫টি দেশের ১৯০ জনের মতো সাংবাদিক এই কনসোর্টিয়ামের সদস্য, যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭৭ সালে৷
ছবি: ICIJ
জড়িত কারা?
ট্যাক্স ফাঁকি দিতে মোসাক ফনসেকার সহায়তা নেয়াদের মধ্যে বিশ্বের অনেক নামি-দামি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, তারকা এবং ক্রীড়াবিদরা রয়েছেন৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ঘনিষ্ঠদের অর্থের হদিশ পাওয়া গেছে ‘ফাঁস’ হওয়া তালিকায়৷ রয়েছে ভারতের অমিতাভ বচ্চন এবং আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির নামও৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/India Today
‘শেল কোম্পানি’ কী?
‘শেল কোম্পানি’ আইনগতভাবে বৈধ এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কোনো ব্যবসা নেই৷ তারা শুধু অন্যকে নানান নামে অর্থ খাটানোর সুযোগ করে দেয়৷ এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে কার অর্থ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা যাতে কোনোভাবে বের করা না যায়৷
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
‘অফশোর ট্যাক্স হেভেন’ ব্যবহার কি অবৈধ?
যেসব দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ খুব কম এবং আয়ের উপর কর প্রদানের পরিমান দফারফার মাধ্যমে অনেক কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশকে ‘অফশোর ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ সেসব দেশে অর্থ লগ্নি অপরাধ নয়, কিন্তু লগ্নিকারী ব্যক্তিটি যে দেশের সেদেশের কর কর্তৃপক্ষের কাছে সেটা অবৈধ হতে পারে, যদি তিনি সেই বিনিয়োগের কথা না জানিয়ে থাকেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে এটা অবৈধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
6 ছবি1 | 6
সেসময় ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার সুদূরপ্রসারী প্রভাবে বিভিন্ন দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতাকেই তাদের পদ ছেড়ে দিতে হয়৷আইসল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর গুনলাগসন ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেন৷
ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মরিসিও ম্যাক্রি ও স্প্যানিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা পেদ্রো আলমোদোভার৷তবে কেলেঙ্কারিতে নাম প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই অবৈধভাবে কাজ করার কথা অস্বীকার করেছেন৷
জার্মান প্রসিকিউটররা ২০২০ সালে কর ফাঁকি ও একটি অপরাধী চক্র গঠনের অভিযোগে মোজ্যাক ও ফনসেকার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে৷
তবে মোজ্যাক ও ফনসেকা দুজনেই বর্তমানে পানামার নাগরিক৷ পানামা তার নাগরিকদের প্রত্যর্পণ না করায়, মোজ্যাক ও ফনসেকা জার্মানিতে কখনও বিচারের মুখোমুখি হবেন কিনা সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়৷