ক্রিসমাস মৌসুমের শুরুতে প্রতি ডিসেম্বরেই রাইনের পাড়ের ফরাসি শহরটি আলোয় সেজে ওঠে৷ ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন চলে আসছে উনিশ শতক থেকে৷ দিনের আলো ফুরিয়ে এলে লাইটিং আর্টিস্টরা বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আলো ফেলে নানা রকম ইল্যুশন তৈরি করেন৷

২০১৯ সালের ১৮ থেকে ২১ জানুয়ারি গ্রেট ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত হবে ‘লুমিয়ের লন্ডন’ উৎসব৷ সারারত জুড়ে টেমসের পাশের রাস্তা ও স্থাপত্যগুলো আলোকিত হবে নানা রঙে৷

বছরের প্রথম পূর্ণচন্দ্রকে দ্বিতীয় নববর্ষ হিসেবে পালন করেন কোরিয়ানরা৷ ২০১৯ সালের এই ‘জিয়ংওল ডায়বোরেয়াম’ উৎসব পালন হবে ৪ ফেব্রুয়ারি৷ পিরামিড আকৃতির আগুন আর আধুনিক এলইডি আলোর খেলায় দুর্ভোগ দূরে সরিয়ে সৌভাগ্যকে আমন্ত্রণ জানাবেন কোরীয়রা৷

ক্যানাডিয়ান এই শহরে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ‘মন্ট্রিয়েল এন লুমিয়েঁ’ অনুষ্ঠিত হয়৷ তবে প্লাসে দেস আর্তস সাবওয়ে স্টেশনে প্রতিদিনই থাকে আলোর খেলা৷ ১৩ মিয়ার লম্বা গ্লাস টিউবে শতাধিক ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের আলোয় সেখানে বলা হয় সুরের গল্প৷

প্রতি বছর মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহর পরিণত হয় আলোর শহরে৷ শহরের বন্দর এলাকায় চলে আলোকে কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের উদ্ভাবনী খেলার প্রদর্শনী৷

অস্ট্রেলিয়ার এই শহরে বছরজুড়ে নানা ধরনের উৎসব চলতে থাকে৷ বিশেষ করে জুন মাসের আয়োজনে আলোর দৃষ্টিনন্দন ইনস্টলেশনগুলো দেখতে প্রতি বছর শহরটিতে জড়ো হন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ৷

গ্রীষ্মকালে জেরুজালেমের পুরোন শহরে চলে উৎসব৷ থ্রিডি প্রজেকশনে শহরের দৃশ্যই পালটে ফেলা হয়৷ জেরুজালেম শহরটি ইহুদি, খ্রীস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র শহর বলে বিবেচিত৷

গ্রীষ্মের শেষের দিকে রুশ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘সার্কল অব লাইট’ উৎসব৷ আশেপাশের সব ভবনকে ক্যানভাস বানিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা চিত্র৷

জার্মান রাজধানীর আলোয় মেতে ওঠার সময় হচ্ছে অক্টোবর৷ ফ্যাস্টিভাল অব লাইটস দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষ আসেন শহরটিতে৷

এক বছর পর পর মাইন নদীর তীরে অবস্থিত জার্মান শহরটিতে আয়োজন হয় আলোক উৎসবের৷ শুধু শহরে নয়, ফ্রাঙ্কফুর্টের আকাশজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় আলোর নানা শিল্প৷ পরবর্তী ‘লুমিনালে’ আয়োজিত হবে ২০২০ সালে৷

বেলজিয়ামের এই শহরটির আলোক উৎসব দেখতে আসেন পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ৷ এই উৎসবের আয়োজন হয় তিন বছর পর পর৷ ২০১৮ সালের উৎসবে ৪০টি বিশাল লাইট ইনস্টলেশন প্রদর্শিত হয়৷ পরবর্তী আয়োজন ২০২১ সালে৷

বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে পালিত হয় আলোর উৎসব দীপাবলি বা দিওয়ালি৷ মূলত হিন্দুদের হলেও অন্য ধর্মাবলম্বীরাও আনন্দে শামিল হন৷ প্রতিটি ঘরের সদর দরজা থেকেই শুরু হয় আল্পনা বা রাংগোলি দিয়ে মেঝে সাজানো৷ আল্পনা আঁকা হলে তার ওপর জ্বালানো হয় প্রদীপ৷ সারি সারি প্রজ্বলিত প্রদীপের আলোয় দূর হয় সমস্ত আঁধার৷

আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বার্লিনকে আলো আর রংয়ের উজ্জ্বল এক মঞ্চ বলে মনে হতে পারে৷ এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো, ‘ আলোর চলাচল’ এবং ‘আগামীর নির্মাণ’৷

দর্শণার্থীদের এবার বার্লিনের টিভি টাওয়ারের মাধ্যমে মহাবিশ্ব থেকে আসা আলোকছটা দেখারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ এর বাইরেও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্মারকের মধ্যে ব্রানডেনবুর্গ গেইট, বার্লিন ডোম এবং পোটসডামের প্লাটজেও চমত্কার এক মহানগরের ছাপ পাওয়া যায়৷

উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হলো বার্লিন ডোম৷এখানকার আলোকসজ্জাই যেন বলছে, ‘‘কেউ মিস করবেন না৷’’

সেরা পারফরম্যান্সের জন্য প্রতি বছর দর্শনার্থীরা ভোট দেন আর যিনি বিজয়ী হন তিনি পুরস্কার হিসেবে পান প্রায় ২ হাজার ইউরো৷

রাজধানীর সৌন্দর্য আরও বাড়াতে সারা পৃথিবী থেকে আসা শিল্পীরা এই আয়োজনে অংশ নেন৷ এতে শুধু বিখ্যাত জায়গাগুলোই নয়, বিভিন্ন স্কয়ার, রাস্তাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতেও দেখা যায় এমন অসাধারণ আলোকসজ্জা৷

বেবেলপ্লাৎসে হুমবোলডট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদকে এত সুন্দর কী কেউ কখনও দেখেছেন?

এই আলো উত্সবে কেবল চমকপ্রদ সব আলোক শিল্পের সংযোজন হয় না, বরং থ্রিডি-তে বিভিন্ন ভিডিও এবং প্রজেক্টও দেখানো হয়৷ সেন্ট হেডভিগস কাথিড্রালেও সেই আয়োজন আছে৷

১৭ দিনের জন্য উৎসুক পর্যটকরা আলোর মাধ্যমে প্রতীকীভাবে তুলে ধরা একটি শহরের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন, সংস্কৃতি, রাজনীতি, এমনকি ব্যক্তির বিশেষ বিষয়গুলোও উপভোগ করতে পারবেন৷

গ্রেনডারমেনমার্কটের বিখ্যাত কনসার্ট হলটি দেখলে মনে হবে যেন জার্মান কবি ফ্রিডরিশ শিলারকে নিবেদন করতেই সব প্রস্তুতি৷ হলের সামনে থাকা কবির আলোকিত মূতিটি দেখা যাবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত৷

দর্শকদের বিশেষ বিশেষ আলোকসজ্জা দেখার জন্য নানা রকম ট্যুর দেয়া হচ্ছে যেন উত্সবের সমস্ত আয়োজনই তারা উপভোগ করতে পারেন৷

‘গণতন্ত্র’ বিষয়টি নিয়ে করা আলোকসজ্জার জন্য একটি বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হ৷ বিজয়ীর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷