ভোজনবিলাসীদের সুইজারল্যান্ডের এক বিশেষ খাবারের স্বাদ পেতে হলে উঠতে হবে বেশ খানিকটা উঁচুতে, সুইস আল্পসে৷ সেখানে ছোট্ট এক গ্রামে রয়েছে এক রেস্তোরাঁ, যার শেফের তৈরি খাবারের খ্যাতি জগৎজোড়া৷
বিজ্ঞাপন
আল্পসের গ্রামের যে খাবারের খ্যাতি জগৎজোড়া
04:45
রান্নার এক ভিন্ন স্বাদ পেতে চাইলে যেতে পারেন সুইস আল্পসে৷ ভালস নামের এক হাজার মানুষের এই গ্রামটিকে অবশ্য শুরুতে দেখলে বোঝা যায় না পানভোজনবিলাসীদের মন্দিরের অবস্থান এখানে৷ তবে ‘৭১৩২ সিলভার’ নামের এই হোটেল-কাম-রেস্তোরাঁটি দুই বছরের মধ্যে দু'টি মিশিলান স্টার পেয়েছে৷ রেস্তোরাঁর পাচক স্ভেন ভাসমার বলেন, ‘‘আমার নিজের পন্থা বের করাটা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে৷ অন্যরা কী করছে সেটা আমি অনুসরণ করি না৷ এরকম অতুলনীয় পরিবেশের মাঝে বসে অতুলনীয় কুজিন তৈরিটা আমার জন্য সহজ হয়েছে৷’’
রেস্তোরাঁটিতে বারোপদের এক মেনুর দাম কমপক্ষে ২০০ ইউরো৷ এটি তৈরি করা হয় মূলত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে৷ তবে থাকা আমদানি করা উপাদানও৷ ২৯ বছর বয়সি পাচকের প্রতিটি খাবারের পেছনে গল্প রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আপনি যা রান্না করছেন, তার সঙ্গে আপনার একটা সম্পর্ক থাকতে হবে৷ আমি এমন কিছু রান্না করতে পারি না, যা আমার কাছে অর্থহীন৷ আমি একসময় আমাদের বাগানের স্ট্রবেরি খেতাম৷ ভালসে অনেক বুনোস্ট্রবেরি পাওয়া যায়৷ আমরা জঙ্গলে গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করি এবং বোতলে ভরে রাখি৷ এক বিশেষ মেন্যুর সঙ্গে আমরা তা পরিবেশন করি৷’’
আল্পস ভ্রমণ – অতীত এবং বর্তমান
এ বছর গ্রীষ্মে একদল পর্যটক সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতচূড়া ভ্রমণে গিয়েছিলেন৷ ১৮৬৩ সালে প্রথম পর্বতারোহীরা যে পথ ধরে আল্পস-এ গিয়েছিলেন, সেই পথ ধরেই গিয়েছিলেন তাঁরা৷
ছবি: PHOTOPRESS/Anthony Anex/Tourism Switzerland
পূর্বসূরিদের পথ ধরে
১৮৬৩ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি পর্যটন সংস্থা সুইজারল্যান্ডের আল্পস-এ একটি ভ্রমণের আয়োজন করেছিল৷ এ বছরের সুইস গ্র্যান্ড ট্যুর ২০১৩-তে একটি দল সেই সময়ের পথ ধরেই আল্পস ভ্রমণ করল৷ লিউকারবাড এবং কান্ডেরস্টেগের মধ্যকার গেমি পাস-এ দলটির অনেকে পর্বতারোহণও করেছে৷
ছবি: PHOTOPRESS/Anthony Anex/Tourism Switzerland
নোট নেয়া
সে সময়কার একজন পর্যটক মিস জেমিমা মোরেল ঐ ভ্রমণের পুরো বর্ণনা একটি ডাইরিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন৷ সেই ডায়রির বর্ণনা নতুন দলটিকে সাহায্য করেছে পথ বেছে নিতে৷ জেমিমা সেসময় ইংল্যান্ডের অনেক স্থান ভ্রমণ করলেও বিদেশে সেটাই ছিল তাঁর প্রথম ভ্রমণ৷
ছবি: Thomas Cook
সঠিক পোশাকে পর্বতারোহণ
১৮৬৩ সালের ২৬শে জুন ‘জুনিয়র ইউনাইটেড আল্পাইন ক্লাব’ লন্ডন ব্রিজ থেকে তাদের তিন সপ্তাহের যাত্রা শুরু করেছিল৷ এই ছবিতে বাম দিক থেকে তৃতীয় নারীটিই জেমিমা৷ জেমিমা মোরেলসহ তখনকার নারীরা ভিক্টোরিয়া-যুগের পোশাকে অভ্যস্ত ছিলেন এবং তাঁদের হাতে থাকত একটি করে ছাতা৷
ছবি: Thomas Cook
আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থা
১৮৬৩ সালের ঐ ভ্রমণের মাধ্যমে আধুনিক পর্যটন ব্যবসা শুরু হয় বলে অনেকের ধারণা৷ ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের থমাস কুক ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে তাঁর পর্যটন সংস্থাটি প্রথম চালু করেন৷ সুইজারল্যান্ড পর্যটন কোম্পানিগুলো তখন কুকের সাথে ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী হয়৷ তিনি ব্যবসার চেয়ে আগ্রহী ছিলেন তাঁর প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পরিচিত করতে৷
ছবি: Thomas Cook
ভ্রমণের টিকেট
১৮৬৩ সালের আগেও কিছু পর্যটন সংস্থা ছিল, কিন্তু কুক তাঁর ভ্রমণে এমন কিছু বিষয় জুড়ে দিলেন, যাতে তা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠল৷ যেমন রেল, বাস কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাঁর কোম্পানির সাথে যুক্ত করা৷ বিদেশের হোটেল বুকিং-এমন অনেক কিছু যুক্ত করেছিলেন কুক, যা পর্যটন ব্যবসায় একেবারেই নতুন ছিল৷
ছবি: Thomas Cook
গাইডস এবং ট্রাভেলারস চেক
এখানে যেমন দেখা যাচ্ছে – এ ধরনের ভ্রমণ বই দিয়ে প্রথমদিকে বেশ কিছু অর্থ উপার্জন করেছিলেন কুক৷ সেখানে থাকত ট্রেনের টাইমটেবিল৷ সেইসাথে তিনি ট্রাভেলারস চেকও আবিষ্কার করেছিলেন৷
ছবি: Thomas Cook
দরিদ্র কিন্তু সুন্দর
১৮৬০ সালে সুইরজারল্যান্ডের অবস্থা আজকের মতো এত ভালো ছিল না৷ অর্থাৎ, অর্থনীতির দিক দিয়ে দেশটি ছিল দরিদ্র৷ মোরেল তাঁর ডাইরিতে সুইজারল্যান্ডের গ্রামগুলোর তখনকার চিত্র তুলে ধরেছেন৷ কিন্তু কুকের পর্যটন সংস্থা সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে, বিশেষ করে সুইস আল্পসকে৷
ছবি: PHOTOPRESS/Anthony Anex/Tourism Switzerland
আল্পসের স্বর্ণযুগ
সুইজারল্যান্ডে কুকের পর্যটন ব্যবসা সেদেশে পর্বতারোহণকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ এ কারণে সেই সময়টাকে আল্পসে পর্বাতারোহণের স্বর্ণযুগ বলা হয়৷ অনেক ব্রিটিশ পর্বতারোহী সুইস আল্পসে প্রথমবারের মতো আরোহন করেছিলেন৷ এডওয়ার্ড উইম্পার তাঁদেরই একজন, যিনি আল্পস পর্বত চূড়ায় প্রথম উঠেছিলেন ১৮৬৫ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
গ্রীষ্ম এবং শরতে ভাসমার এবং তাঁর দল প্রতি সপ্তাহে পাহাড়ে যান বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করতে৷ এরপর সেগুলো শীতের জন্য সেদ্ধ করে, শুকিয়া বা গাঁজিয়ে রাখা হয়৷ ভাসমার বলেন, ‘‘আমার কাছে এটা সুপার ফুড, পাহাড়ি খাবার৷ আমরা ভূপৃষ্ঠ থেকে দু'হাজার মিটার উচুঁ থেকে সেই খাবার সংগ্রহ করি, যেখানে প্রকৃতি এখনো অক্ষত আছে৷ আর ব্যবধানটাও পরিষ্কার বোঝা যায়৷ বেরিগুলো পাকতে বেশি সময় নেয়, কেননা টিকে থাকার সংগ্রাম করতে গিয়ে সেগুলো বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷ খাবারের স্বাদেও তা বোঝা যায়৷’’
উচ্চমানের আন্তর্জাতিক পণ্য আর বহু সংস্কৃতির মিশ্রণ সম্ভবত সুইজারল্যান্ডকে রন্ধনশীল্পে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে৷ রেস্তোরাঁ বিষয়ক ম্যাগাজিন মিশেলিনের সুইস সংস্করণ অনুযায়ী, ইউরোপের মধ্যে সুইজারল্যান্ডে জনসংখ্যার বিচারে তারকাখচিত রেস্তোরাঁর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ আর স্ভেন ভাসমার খদ্দেরদের নতুনত্বের স্বাদ দিতে চেষ্টা করেন৷ নতুন আইডিয়া আর উপাদান খুঁজে পেতে তাঁর জুড়ি নেই৷
অটি টুরুনেন/এআই
ওজন কমানো এবং স্লিম থাকার অভিনব ৭ উপায়
ওজন বেড়ে যাওয়া সারা বিশ্বেই একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এতে যে দেখতে অসুন্দর লাগে তা-ই নয়, মোটা শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ-বিসুখও৷ জেনে নিন, অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রেখে স্লিম থাকার সহজ কিছু ট্রিকস৷
ছবি: Colourbox
চোখের আড়াল, মনের আড়াল
‘চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল’ – এই প্রবাদবাক্যটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কিন্তু খুবই প্রযোজ্য, কারণ, খাবার দেখলেই যে অনেকের খিদে পেয়ে যায়৷ তাই তৈরি বা রান্না করা খাবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার দিয়ে ঢেকে রাখুন, যেন প্রথমেই চোখে না পড়ে৷ খাবার না দেখলে খাওয়ার আগ্রহও কমে যাবে৷ আর এতে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Junos
রান্নাঘরেই টিভি বা কম্পিউটার
টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় অনেকেই চিপসের প্যাকেট বা এ ধরনের ফ্যাটযুক্ত খাবার সাথে নিয়ে সোফায় আরাম করে বসেন৷ আর সারাক্ষণ খেতে থাকেন৷ এ সব খাবার ওজন বাড়ানোয় বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ আপনি যদি টিভি বা কম্পিউটারটা রান্না ঘরেই রাখেন, তাহলে এ সব যন্ত্রই হয়ত আপনাকে খাওয়া থেকে দূরে রাখবে৷
ছবি: Colourbox/Andy Dean Photography
কীভাবে ?
অ্যামেরিকার পুষ্টি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ব্রায়ান ওয়েজনিকের করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, কিচেনে বসে বিনোদনমূলক কোনো অনুষ্ঠান দেখার সময় অংশগ্রহণকারীরা কমপক্ষে ২০০ ক্যালোরি কম গ্রহণ করেছেন এবং এতে করে বছরে ১০ কেজি ওজন কমেছে৷
ছবি: Colourbox
সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখুন
রান্নাঘর যতটা গুছানো আর ছিমছাম থাকবে, ওজন কমানো কিন্তু ততটাই সহজ হবে৷ রান্নাঘরে খাবার-দাবার বা জিনিসপত্র একদমই এলোমেলো করে না রেখে যেখানে যা রাখার ঠিকঠাকমতো রাখুন৷ তখন আপনার এমন অনুভূতি হবে যে মনে হবে সবকিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে, এমনকি আপনার শরীরের ওজনটাও! এতে মানসিক শক্তি পাবেন৷ যে কোনো নতুন কিছু করার জন্য তো এই মানসিক শক্তিই বেশি প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ফ্রিজ গুছিয়ে রাখুন
যেসব খাবার মোটা করে সেই খাবারগুলো ফ্রিজে ভেতরের দিকে রাখুন৷ আর যেসব খাবার তেমন মোটা করেনা বা ওজন বাড়ায় না, সেগুলো সামনের দিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখুন৷ কিচেনের গ্লাস লাগানো আলমারিগুলোর ক্ষেত্রেও ট্রিকস প্রযোজ্য৷ অর্থাৎ চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট, বাদাম বা চকলেট জাতীয় খাবার একটু আড়াল করে রাখুন৷
ছবি: Colourbox
টেবিলে ফলমূল রাখুন
রান্নাঘর এবং বসার ঘরের টেবিলে ফলমূল রাখুন৷ বসার ঘরের টেবিলে এমন সব ফল রাখুন যেন হালকা খিদের ভাব হলে তা সেগুলো না কেটেই চট করে মুখে দেওয়া যায়৷ সোজা কথা, খিদের ভাব হলে যেন চোখের সামনে রাখা ফল খেতে পারেন৷
ছবি: Colourbox
ফুলের সুগন্ধ খিদে কমায়
খাবার ঘর বা রান্না ঘরের টেবিলে অন্তত একটি করে তাজা ফুল রাখুন, কারণ, ফুলের সুগন্ধ খাবারের সুগন্ধকে ছাপিয়ে যায়৷ মাঝে মাঝে ফুলের কাছে নাক নিয়ে সুগন্ধ গ্রহণ করুন৷ এতে করে বার বার খাওয়ার ইচ্ছে বা ‘খাই খাই’ ভাবটা দমন হবে৷ যদি তাজা ফুল রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর গোলাপ বা জেসমিন ফুলের গন্ধযুক্ত ‘রুম স্প্রে’ ছড়িয়ে দিন৷ সুবাসিত মোমবাতি জ্বালিয়েও কিন্তু একই ফল পেতে পারেন!