আল্পসের স্কিয়িং রিসোর্টগুলোতে তুষারপাত কমার প্রভাব
২৭ মে ২০২৫
ব্যবসা ধরে রাখতে আল্পস এলাকার রিসোর্টগুলিতে তুষার কামানের ব্যবহার বাড়ছে৷ আল্পসে তুষারপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে বলে স্কিয়িংয়ের জন্য কৃত্রিম তুষারের ব্যবস্থা করতে তুষার কামান ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু এভাবে কতদিন চালানো যাবে?
ছবি: BARBARA GINDL/AFP
বিজ্ঞাপন
জার্মানির জনপ্রিয় স্কি রিসর্ট বালডারশোয়াংয়ে একসময় তুষারপাত প্রায় নিশ্চিত ছিল৷ কিন্তু এখন আর সেখানে আগের মতো তুষারপাত হয় না৷
আল্পস পর্বতমালায় তুষারপাতের পরিমাণ কমতে থাকায় সেখানে আর কতদিন স্কিয়িং এর জন্য যাওয়া সম্ভব হবে?
বালডারশোয়াং এর মেয়র কনরাড কিনলে বলেন, ‘‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাটানো ঠাণ্ডা দিনগুলোর কথা আমাদের খুব মনে পড়ে৷ ঐ সময় এখানে অনেকবেশি তুষারপাত হতো৷''
ওবারআলগয় এলাকার এই পাহাড়ি গ্রামটি এক হাজার ৪৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত৷ প্রচুর তুষারপাতের কারণে অঞ্চলটি ‘বাভেরিয়ান সাইবেরিয়া' নামে পরিচিত৷
এখন পর্যন্ত অনেক উঁচু আলপাইন স্কি রিসোর্টের চেয়ে বালডারশোয়াং-এ বেশি তুষারপাত হচ্ছে৷
নেই তুষার, তাই ভরসা তুষার কামানে
04:00
This browser does not support the video element.
শীতকাল তার সমস্ত জাঁকজমক নিয়ে এই অঞ্চলে এসে বসে, কিন্তু বালডারশোয়াং-এও আপনি পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারেন৷
কিনলে জানান, ২০ বছর আগেও স্কি এলাকায় ১৫০ দিন কাজ করা যেত, এখন যায় ১০০ দিন৷
আল্পসের অন্যান্য এলাকার মতো এখনও এখানে কোনো স্কি স্লোপ বা ঢাল বন্ধ করতে হয়নি৷ তবে দক্ষিণের ঢালের অবস্থা ভালো নয়৷
বালডারশোয়াং তার ৮০ শতাংশ ঢালে কৃত্রিম তুষার ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত৷
ইটালির সাউথ টিরল এর বলসানো৷ ইউরাক গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা আল্পস পর্বতমালায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন৷
বিশেষ করে ১৯৮০-র দশক থেকে আল্পসের সব এলাকায় তুষারপাত ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে৷
তুষার-শুভ্র ইউরোপ
ইউরোপে জেঁকে বসেছে শীত৷ এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত তুষারে ঢাকা৷ দেখুন ছবিঘরে....
ছবি: Sven Hoppe/dpa/picture-alliance
হিমশীতল এক রাজ্য
মাইনাস তাপমাত্রার কনকনে শীত৷ সেইসাথে অনবরত তুষারপাত৷ জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের এই বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে তুষারপাতের ফলে সাদা এক স্তর জমা হয়েছে৷ দেখে মনে হয় যেন বরফের পাত দিয়ে ঢেকে দেওয়া ভূমি৷ অবশ্য শুষ্ক আবহাওয়া এই অঞ্চলের বন্যায় আক্রান্ত এলাকাগুলোর জন্য সুসংবাদই বলা যায়৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture-alliance
ওয়ান্ডারল্যান্ডের চমক
বরফে ঢাকা শীতের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি নাকি দেখা যায় সুইজারল্যান্ডে৷ দেশটির লাউটেরব্রুনেন শহরের একটি স্কি-রিসোর্টের এই দৃশ্য পর্যটনপ্রেমীদের হৃদয় জুড়াবে৷ শীত যতে বাড়ছে এমন সৌন্দর্য দেখতে ততোই দেশটিতে ভিড় করছেন পর্যটকেরা৷ গত শীতে আল্পসে তেমন বরফের দেখা মেলেনি৷ তবে চলতি বছরের মাইনাস তাপমাত্রার সাথে তুষারপাতে যেন প্রত্যাশিত সুইজারল্যান্ডকেই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: FABRICE COFFRINI/AFP/Getty Images
বরফ খুড়ে মাছ ধরা
নর্ডিক দেশ ফিনল্যান্ডে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমেছে৷ তবে মজার বিষয় হলো, হিম হয়ে যাওয়ার মতো এমন শীতেও থেমে নেই বরফ খুড়ে মাছ ধরা৷ দেশটির লাপল্যান্ডে দেখা গেছে এমনই দৃশ্য৷ বরফ খুড়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ৷
ছবি: IRENE STACHON/Lehtikuva/AFP/Getty Images
ধোঁয়াচ্ছন্ন সুর্যোদয়
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে এ বছর এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন মাইনাস ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে৷ রাজধানীর মনোমুগ্ধকর দৃশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সেখানকার সুর্যোদয়৷ চিমনির ধোঁয়ার ফাঁকে উঁকি মারা সূর্যের সোনালি আলোয় ঝলমল করছে প্রাগের আকাশ৷
ছবি: MICHAL CIZEK/AFP/Getty Images
হাঙ্গেরিতে বরফের আসন
ছবিটি দেখে কী বুঝতে পারছেন? এটি আসলে পর্যটকদের বসার চেয়ার৷ কিন্তু মাইনাস তাপমাত্রার শীতে হাঙ্গেরির রাজধানীর বালাটোন লেকের সামনের এই চেয়ারটি দেখে মনে হয় যেন এটি বরফ দিয়ে বানানো৷ বসতে চান?
ছবি: Gyorgy Varga/dpa/MTI/AP/picture alliance
এমন শীতেও সার্ফিং!
জার্মানির মিউনিখ শহরের ইংলিশ গার্ডেনে সার্ফিংয়ে নেমেছেন একজন৷ সেখানকার তাপমাত্রা কত জানেন? গত বুধবার শহরের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২০ ডিগ্রি৷ এমন শীতে অনেকেই যখন ঘর থেকে বের হতে চান না, তখন তিনি নেমেছেন পুরোদস্তর সার্ফিংয়ে!
ছবি: Peter Kneffel/dpa/picture-alliance
কেমন আছে ফ্লেমিঙ্গোরা?
বরফ শীতল এমন তাপামাত্রা ফ্লেমিঙ্গোদের জন্য ভয়ানক৷ পিচ্ছিল বরফে পড়ে গিয়ে আহত হতে পারে তারা৷ বার্লিনের চিড়িয়াখানায় তাই তাদেরকে একটি উষ্ণ ঘরে রাখা হয়েছে৷
ছবি: Jens Kalaene/dpa/picture-alliance
রাজার জন্য মেনে নাও!
ব্রিটিশ রাজপরিবারের গার্ডদের নাকি হাসতে মানা৷ দায়িত্ব পালনের সময়ে কথা বলতেও মানা৷ ভাবুন তো- হাসে না, কথা বলে না এমন গার্ডদের দেখতে বরফের মতো স্থির মনে হয় না? লন্ডনের এখনকার তাপমাত্রাও অবশ্য সেরকম৷ মানুষের চোখমুখ থেকে হাসি উধাও৷
ছবি: TOBY MELVILLE/REUTERS
কেমন দেখায় আইফেল টাওয়ার
প্যারিসে সপ্তাহজুড়েই চলছে এমন হিম শীতল তাপমাত্রা৷ ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের আইফেল টাওয়ার কেমন দেখাচ্ছে এই শীতে? দূর থেকে তোলা টাওয়ারের সামনের এই ছবিটি দেখুন৷ মনে হয়, আকাশচুম্বী আইফেলকে ছুঁতে পেরোতে হবে বরফের রাজ্য৷
ছবি: LUDOVIC MARIN/AFP/Getty Images
স্পেনে রেকর্ড
আটলান্টিকের তীরে অবস্থিত ইউরোপের দেশ স্পেনে ডিসেম্বর মাসে পারদ ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছিল৷ ভাবা যায়, শীতকালে ইউরোপের কোনো এক দেশের তাপমাত্রা গ্রীষ্মের অনুভূতি দিচ্ছে? কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত ঠান্ডা জেঁকে বসেছে সেখানেও৷ পরিস্থিতি এখন এমন যে, গত কয়েক সপ্তাহে রাজধানী মাদ্রিদে যে পরিমান তুষারপাত হচ্ছে তা একশ বছরেও দেখা যায়নি৷
ছবি: Alvaro Barrientos/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
পরিবেশগত আবহাওয়াবিদ মিকেলে বজোলি বলেন, ‘‘৮০-র দশক পর্যন্ত তাজা তুষার, মৌসুমী তাজা তুষারের সামগ্রিক গড় প্রায় একই ছিল৷ এরপর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাওয়ায় তুষারপাত কমতে শুরু করে৷''
বলসানোর কাছে পাহাড়ে একটি পরিমাপ কেন্দ্র স্থাপন করা আছে৷ মিকেলে বজোলি এবং গবেষকদের একটি দল ১৯২০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আল্পস পর্বতমালায় তুষারপাতের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন৷ আর্কাইভে থাকা আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন তারা৷ সেইসঙ্গে বৃহত্তর আল্পস এলাকায় বসানো ৪৬টি পরিমাপ কেন্দ্রের তথ্যও বিশ্লেষণ করেছেন৷
বজোলি বলেন, ‘‘গত ১০০ বছরে তুষারপাতের পরিমাণ ৩০ শতাংশের বেশি কমেছে৷ এর অর্থ হলো ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক তুষার কম থাকবে৷ তাই এক থেকে দেড় হাজার মিটারের নীচে অবস্থিত স্কি অঞ্চলগুলিতে কম তুষারপাত হবে৷''
একটা বিষয় নিশ্চিত: তুষারপাত কমলে শীতকালীন পর্যটনে বড় পরিবর্তন আসবে৷
ফ্রান্সের হারিয়ে যেতে বসা হিমবাহ
ফ্রান্সের শামোনিক্স অঞ্চলে প্রতি বছর বহু পর্যটক আসেন এই আকর্ষণীয় হিমবাহ দেখতে। কিন্তু আর খুব বেশি দিন হয়ত সম্ভব হবে না সেটা।
ছবি: OLIVIER CHASSIGNOLE/AFP
উবে যাচ্ছে তুষার
ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ও আল্পস পর্বতমালার চতুর্থ বৃহত্তম হিমবাহ বা গ্লেসিয়ার শামোনিক্স অঞ্চলের ম্যের দে গ্লাস হিমবাহ। সেই হিমবাহের কাছেই মানুষের তৈরি তুষার-গুহা, গ্রোত দে গ্লাস, যা দেখতে বহু পর্যটক রওয়ানা দেন বিখ্যাত ‘ম ব্লা’ পাহাড়ের তল থেকে।
ছবি: David Ademas / Ouest-France/Maxppp/picture alliance
সাদার মাঝে একটু রঙ
শামোনিক্স থেকে এই হিমবাহের দূরত্ব প্রায় নয়শ কিলোমিটার, যা পেরোতে চড়তে হবে এই উজ্জ্বল রক্তবর্ণ ট্রেন। উনিশ শতকেই এখানে ছিল একটি কৃত্রিম হিমবাহ। কিন্তু তুষারস্রোতের গতি বদলের ফলে তা হারিয়ে যায়। কিন্তু হিসাবে প্রথম কৃত্রিম হিমবাহ এখানে তৈরি হয় সেই ১৮৬৩ সালেই।
ছবি: Bildagentur-online/Fischer/picture alliance
পায়ে হেঁটেই ভালো
এই গুহায় যেতে গেলে পর্যটকদের প্রায় পাঁচশ সিঁড়ি নামতে হয়। একশ বছরের কিছু বেশি সময়ে ম্যের দে গ্লাস তার ব্যাসের এক চতুর্থাংশ হারিয়েছে। তার প্রস্থ কমেছে প্রায় দুই কিলোমিটার, যা স্পষ্টতই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। প্রতি বছর নতুন করে আরো সিঁড়ি যোগ করতে হয় সে কারণে।
ছবি: PHILIPPE DESMAZES/AFP
বরফের বদলে যে দৃশ্য
ছবিতে দেখা যাচ্ছে গুহার সামনে সেতুতে পর্যটকদের ভিড়। এরা সবাই আশা করেন যে চারদিক বরফে ছেয়ে থাকবে। কিন্তু আসলে তা হয়না। কান পাতলে শোনা যায় বরফ গলার শব্দ। বাড়ন্ত তাপমাত্রা এখানে বরফ গলিয়ে শুধু পাথর রেখে যায়, যা দেখে হতাশ হন অনেকে।
ছবি: OLIVIER CHASSIGNOLE/AFP
নীল সুড়ঙ্গ
প্রতি গ্রীষ্মে হিমবাহটি প্রায় ২৩০ফুট সরে যাওয়ায় এখানকার কর্মীদের নতুন করে গোছাতে হয় এই নীল সুড়ঙ্গ। গবেষকরা বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত আল্পস পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু জায়গাগুলির মাত্র পাঁচ শতাংশেই তুষার দেখা যাবে।
ছবি: Sachelle Babbar/Zumapress/picture alliance
ফিরে দেখা তুষারময় দিন
তুষার সুড়ঙ্গের ভেতর পর্যটকেরা অত্যাধুনিক আলো-শব্দের খেলা দেখতে পারেন। চাইলে উনিশ শতকে কীভাবে এত উচ্চতায় দিন কাটাতেন পর্বতারোহীরা, তাও দেখা যাবে সেখানে।
ছবি: Pascal Deloche / Godong/picture alliance
বরফশীতল শিল্প
বরফের সিংহাসনে বসে আছেন পর্যটকেরা। বরফের আসবাব ছাড়াও এখানে দেখার আরো অনেক কিছু আছে, কারণ গ্রোত্তে দে গ্লাস, অর্থাৎ এই নীল সুড়ঙ্গ, ফ্রান্সের একমাত্র হিমবাহ জাদুঘর।
ছবি: OLIVIER CHASSIGNOLE/AFP
বিদায় তুষার, বিদায়...
সব দেখার পরও একবার এই হিমবাহকে ফিরে দেখতে চান পর্যটকেরা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই হিমবাহকে হয়তো কখনোই বাঁচানো যাবে না। ভবিষ্যতে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে ম্যের দে গ্লাস, যা পৃথিবীকে আরো উষ্ণ করে তুলবে।
ছবি: OLIVIER CHASSIGNOLE/AFP
8 ছবি1 | 8
কিনলে বলেন, ‘‘আমরা অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছি৷ যেমন এখন স্কিয়িংয়ের পাশাপাশি পর্যটকদের শীতকালীন অন্যান্য অভিজ্ঞতা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে৷ সেজন্য আমরা শীতকালীন হাইকিং ট্রেইলের পরিধি বাড়িয়েছি, যেন পর্যটকেরা শীতকালীন খেলাধুলা ও শীতকালীন অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি বেছে নিতে পারেন৷''
কিছু স্কি এলাকা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আবার কিছু এলাকা, যেমন বালডারশোয়াং, বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে৷ কারণ, যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই ভালো৷