প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে ঠিক সময়ে আগাম সতর্কতা ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির মাত্রা অনেক কমাতে পারে৷ আল্পস পর্বতে বড় ধস সম্পর্কে সতর্ক করতে বিজ্ঞানীরা নানারকম প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
আল্পস পর্বতের একটি অংশে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ ঘনমিটার অংশ ভেঙে পড়েছে৷ আট জন পর্বতারোহী সে সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন৷ আজও তাঁরা নিখোঁজ৷ সেই ধ্বংসলীলার কিছু সময় পর কাদামাটির বন্যা বোন্ডো শহরের মধ্যে নেমে এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে৷
অস্ট্রিয়ার টিরোল অঞ্চলের হিন্টারহর্নবাখ ধস নামলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও কাদামাটির স্রোত সেখানেও পৌঁছতে পারে৷ সেখানকার মানুষ ও পর্বতারোহীদের ঠিক সময় সতর্ক করতে বিজ্ঞানীরা পাহাড়ের চূড়ার নড়াচড়ার উপর অবিরাম নজরদারি চালাতে চান৷ প্লাস্টিকের পাইপের মধ্যে দূরত্ব মাপার যন্ত্র রয়েছে৷ টেলিস্কোপের মতো সেগুলি আরও লম্বা বা ছোট করা যায়৷ ফাটলের মাপ বাড়লেও সেটি তা নথিভুক্ত করতে পারে৷ তারপর বেতার সংকেতের মাধ্যমে উপত্যকায় সেই তথ্য প্রেরণ করা হয়৷
আল্পস ভ্রমণ – অতীত এবং বর্তমান
এ বছর গ্রীষ্মে একদল পর্যটক সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতচূড়া ভ্রমণে গিয়েছিলেন৷ ১৮৬৩ সালে প্রথম পর্বতারোহীরা যে পথ ধরে আল্পস-এ গিয়েছিলেন, সেই পথ ধরেই গিয়েছিলেন তাঁরা৷
ছবি: PHOTOPRESS/Anthony Anex/Tourism Switzerland
পূর্বসূরিদের পথ ধরে
১৮৬৩ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি পর্যটন সংস্থা সুইজারল্যান্ডের আল্পস-এ একটি ভ্রমণের আয়োজন করেছিল৷ এ বছরের সুইস গ্র্যান্ড ট্যুর ২০১৩-তে একটি দল সেই সময়ের পথ ধরেই আল্পস ভ্রমণ করল৷ লিউকারবাড এবং কান্ডেরস্টেগের মধ্যকার গেমি পাস-এ দলটির অনেকে পর্বতারোহণও করেছে৷
ছবি: PHOTOPRESS/Anthony Anex/Tourism Switzerland
নোট নেয়া
সে সময়কার একজন পর্যটক মিস জেমিমা মোরেল ঐ ভ্রমণের পুরো বর্ণনা একটি ডাইরিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন৷ সেই ডায়রির বর্ণনা নতুন দলটিকে সাহায্য করেছে পথ বেছে নিতে৷ জেমিমা সেসময় ইংল্যান্ডের অনেক স্থান ভ্রমণ করলেও বিদেশে সেটাই ছিল তাঁর প্রথম ভ্রমণ৷
ছবি: Thomas Cook
সঠিক পোশাকে পর্বতারোহণ
১৮৬৩ সালের ২৬শে জুন ‘জুনিয়র ইউনাইটেড আল্পাইন ক্লাব’ লন্ডন ব্রিজ থেকে তাদের তিন সপ্তাহের যাত্রা শুরু করেছিল৷ এই ছবিতে বাম দিক থেকে তৃতীয় নারীটিই জেমিমা৷ জেমিমা মোরেলসহ তখনকার নারীরা ভিক্টোরিয়া-যুগের পোশাকে অভ্যস্ত ছিলেন এবং তাঁদের হাতে থাকত একটি করে ছাতা৷
ছবি: Thomas Cook
আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থা
১৮৬৩ সালের ঐ ভ্রমণের মাধ্যমে আধুনিক পর্যটন ব্যবসা শুরু হয় বলে অনেকের ধারণা৷ ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের থমাস কুক ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে তাঁর পর্যটন সংস্থাটি প্রথম চালু করেন৷ সুইজারল্যান্ড পর্যটন কোম্পানিগুলো তখন কুকের সাথে ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী হয়৷ তিনি ব্যবসার চেয়ে আগ্রহী ছিলেন তাঁর প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পরিচিত করতে৷
ছবি: Thomas Cook
ভ্রমণের টিকেট
১৮৬৩ সালের আগেও কিছু পর্যটন সংস্থা ছিল, কিন্তু কুক তাঁর ভ্রমণে এমন কিছু বিষয় জুড়ে দিলেন, যাতে তা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠল৷ যেমন রেল, বাস কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাঁর কোম্পানির সাথে যুক্ত করা৷ বিদেশের হোটেল বুকিং-এমন অনেক কিছু যুক্ত করেছিলেন কুক, যা পর্যটন ব্যবসায় একেবারেই নতুন ছিল৷
ছবি: Thomas Cook
গাইডস এবং ট্রাভেলারস চেক
এখানে যেমন দেখা যাচ্ছে – এ ধরনের ভ্রমণ বই দিয়ে প্রথমদিকে বেশ কিছু অর্থ উপার্জন করেছিলেন কুক৷ সেখানে থাকত ট্রেনের টাইমটেবিল৷ সেইসাথে তিনি ট্রাভেলারস চেকও আবিষ্কার করেছিলেন৷
ছবি: Thomas Cook
দরিদ্র কিন্তু সুন্দর
১৮৬০ সালে সুইরজারল্যান্ডের অবস্থা আজকের মতো এত ভালো ছিল না৷ অর্থাৎ, অর্থনীতির দিক দিয়ে দেশটি ছিল দরিদ্র৷ মোরেল তাঁর ডাইরিতে সুইজারল্যান্ডের গ্রামগুলোর তখনকার চিত্র তুলে ধরেছেন৷ কিন্তু কুকের পর্যটন সংস্থা সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে, বিশেষ করে সুইস আল্পসকে৷
ছবি: PHOTOPRESS/Anthony Anex/Tourism Switzerland
আল্পসের স্বর্ণযুগ
সুইজারল্যান্ডে কুকের পর্যটন ব্যবসা সেদেশে পর্বতারোহণকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ এ কারণে সেই সময়টাকে আল্পসে পর্বাতারোহণের স্বর্ণযুগ বলা হয়৷ অনেক ব্রিটিশ পর্বতারোহী সুইস আল্পসে প্রথমবারের মতো আরোহন করেছিলেন৷ এডওয়ার্ড উইম্পার তাঁদেরই একজন, যিনি আল্পস পর্বত চূড়ায় প্রথম উঠেছিলেন ১৮৬৫ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
পাহাড়ের দক্ষিণের অংশ ভেঙে পড়লে উত্তরে আলগয় অঞ্চলেও তার পরিণতি টের পাওয়া যাবে৷ সেখানে কোনো লোকালয় না থাকলেও পর্বতারোহী ও পাহাড়প্রিয় মানুষের পছন্দের এক ট্রেল বা গিরিপথ রয়েছে৷ জিওমর্ফোলজিস্ট হিসেবে মিশায়েল ডিৎসে মনে করেন, ‘‘সেখানে এক ধাক্কায় পাহাড় ভেঙে পড়লে চূড়ার অংশেও আমূল পরিবর্তন ঘটবে৷ ভারসাম্য সম্পূর্ণ বদলে গেলে আরও ধস নামবে৷’’
ফ্লোরিয়ান মেডলার ও সিমন গিলিশ পাহাড়ের উপর একটি ড্রোনও ওড়াচ্ছেন৷ ড্রোনের ক্যামেরা দিয়ে ফ্লোরিয়ান এমন ছবি তুলছেন, যার সাহায্যে পাহাড়ের ত্রিমাত্রিক চেহারা ফুটে উঠছে৷ তাতে মাত্র এক থেকে দুই সেন্টিমিটার ত্রুটির অবকাশ রয়েছে৷ সেই ছবি দেখে সামান্য চিড়ও শনাক্ত করা সম্ভব৷ এই উদ্যোগের আওতায় বিজ্ঞানীরা নজরদারির বিভিন্ন প্রযুক্তি হাতেনাতে পরীক্ষার সুযোগও পাচ্ছেন৷
ক্রাউটব্লাটার ও তাঁর সহকর্মীরা বড় ফাটলগুলিতে দূরত্ব মাপার ডাণ্ডাও বসাচ্ছেন৷ তবে তাতে সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ সন্ধ্যা পর্যন্ত সব পরিমাপ যন্ত্র বসানো সম্ভব হয়েছে৷ এভাবে ধস নামার কয়েক দিন আগেই উপত্যকার মানুষ ও পর্বতারোহীদের সতর্ক করার আশা করছেন তাঁরা৷