বাংলাদেশে ব্লগার হত্যার বিচার না হওয়ায় এবং প্রকৃত হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় হামলা থামছে না, মনে করেন প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল)৷ গত অক্টোবরে দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হন তিনিসহ দুই ব্লগার৷
বিজ্ঞাপন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় প্রায় একই সময়ে দু'টি হামলা চালায় অজ্ঞাত পরিচয়ের দুর্বৃত্তরা৷ একটি হামলা হয় ঢাকার লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে৷ এতে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল) এবং দুই ব্লগার রণদীপম বসু এবং তারেক রহিম গুরুতর আহত হন৷ ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটে অপর হামলায় প্রাণ হারান প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন৷ তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷
জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার আল-ইসলাম' এ সব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দু'জন প্রকাশকই ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়ের একাধিক বই প্রকাশ করেছিলেন৷ নাস্তিকতা, সমকামিতার বিভিন্ন বিষয় প্রাধাণ্য পেয়েছে রায়ের লেখায়, যা ধর্মীয় মৌলবাদীদের পছন্দ হয়নি৷ ধারণা করা হয়, তাদের উপর হামলার কারণ সেটাই৷
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
9 ছবি1 | 9
রায়ের সমকামিতা, অবিশ্বাসের দর্শন (১ম, ২য় সংস্করণ), ভালোবাসা কারে কয়, শূন্য থেকে মহাবিশ্ব – ইত্যাদির প্রকাশক টুটুল ডয়চে ভেলেকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন কেন ব্লগার এবং প্রকাশকরা, বিশেষ করে যারা মুক্তমনা, হামলার শিকার হচ্ছেন৷
ডয়চে ভেলে: আপনার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?
আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল): আগের চেয়ে অনেক ভালো৷ আঘাতজনিত কারণে কিছু সমস্যা আছে৷ সেগুলো সারতে আরো সময়ের প্রয়োজন৷
আপনার উপরে হামলার কারণ কী?
হামলার দায় যারা স্বীকার করেছে (আনসারাল আল-ইসলাম, আল-কায়েদা), তারাই তো বলেছে কেন হামলা করেছে৷ মুক্তমনা লেখকদের মুক্তচিন্তা বিষয়ক বই প্রকাশের কারণে, নিজে মুক্তচিন্তার ধারক হওয়ার কারণে এবং এইসব চিন্তা ও অ্যাক্টিভিস্টদের পৃষ্টপোষক হওয়ার কারণে আমি প্রত্যক্ষ হুমকি পেয়েছিলাম গত ফেব্রুয়ারিতে৷ হামলার সময়, আমাকে প্রথম কোপ মারার সময় একজন ‘আল্লাহু আকবর' বলেছিল এটা মনে আছে৷
আপনার সঙ্গে আরো দুই ব্লগার হামলার শিকার হয়েছেন? হামলার লক্ষ্য কি তারাও ছিল?
হামলাকারীরা কি চাপাতি ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেছিল? তারা এমন কি কিছু বলেছিল, যা দিয়ে তাদের পরিচয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়?
ওদের হাতে কী কী অস্ত্র ছিল আমি মনে করতে পারছি না৷ আমাকে প্রথম আঘাত করেছিল একটা ছোট তলোয়ার জাতীয় কিছু একটা দিয়ে৷ আমি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চেয়ার ও টেবিলের মাঝখানে পরে যাই৷ জ্ঞান হারাই৷ পরে শুনেছি আমাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়েছিল৷ রণদা (রণদীপম বসু) পা দিয়ে চেয়ার ছুড়ে মারায় সেটা লক্ষ্যভ্রস্ট হয়ে যায়৷ রণদা শুনেছেন ওরা তখন বলেছিল সময় শেষ৷ এরপর বাইরের দরজায় তালা লাগিয়ে ওরা চলে যায়৷
আমাকে আঘাত করার সময় ‘আল্লাহু আকবর' বলেছিল, এটা মনে আছে৷ আর কোনো কথা শুনেছি কিনা বা আক্রমণকারীদের চেহারা কোনো কিছুই মনে নেই৷
ব্লগার অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর আপনার উপরে হামলা হতে পারে এরকম আশঙ্কার কথা শোনা গিয়েছিল৷ এই শঙ্কা থাকার উপর আপনি কি পুলিশের কাছে কোনো নিরাপত্তা চেয়েছিলেন বা পেয়েছিলেন?
২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ নিহত হওয়ার পর, সেদিন রাতেই আমাকে দেয়া হুমকির বিষয়টি আমি জানতে পারি৷ হুমকি দেয়া হয়েছিল ১৬ ফেব্রুয়ারিতে৷ আমি ২৮ ফেব্রুয়ারিতে মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছিলাম৷ পুলিশ ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বার আমার অফিস পরিদর্শন করেছে৷ মাঝে মধ্যে সামনের রাস্তায় টহল মোটর সাইকেল দেখেছি৷ নিরাপত্তা চাওয়া এবং পাওয়ার ব্যাপারটি এইটুকুই৷
অভিজিতের খুনের সঙ্গে আপনার উপর হামলার কি কোনো সম্পর্ক আছে? মুক্তমনা ব্লগ এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্তরা, বিশেষ করে যারা নাস্তিকতার চর্চা করেন, তারাই হামলাকারীদের লক্ষ্য? আপনার কী মনে হয়?
হত্যার হুমকি পাওয়া এক ব্লগার
তাঁর বাবা হুমায়ুন আজাদের ওপরও হামলা হয়েছিল৷ বাবা তাঁর ছেলে অনন্যকে বলেছিলেন, ‘এরপর তুমি...’৷ হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই ব্লগার অনন্য আজাদকে হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷ তাঁকে নিয়েই আজকের ছবিঘর...
ছবি: DW/Gönna Ketels
লিখে যেতে চান অনন্য
ঢাকায় জন্ম৷ ঢাকা শহরকে তাই খুব ভালোবাসেন অনন্য আজাদ৷ এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে চাননি, তবে হত্যার হুমকি দেয়ার পর থেকে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল৷ তারপরও লেখলেখি থামাননি৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
চিন্তা মুক্ত, মতামত নয়
২৪ বছর বয়সি ব্লগার অনন্য নিজেকে ‘মুক্তচিন্তক’ মনে করেন৷ তিনি মনে করেন, ধর্ম বা যে কোনো কিছুকে বিশ্বাস করা বা না করার অধিকার সবারই থাকা উচিত৷ এই ভাবনা নিয়েই লেখালেখি করেন৷ এ কারণে ইসলামি জঙ্গিরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
আত্মরক্ষার চেষ্টা
২০১৩ সালে ৮৪ জন ব্লগারের নামের তালিকা প্রকাশ করে তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ পরের ৩ বছরে মোট ৯ জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে৷ হালে দিনের আলোয়, জনাকীর্ণ স্থানে ব্লগার হত্যার ঘটনার পর তাঁকেও হত্যার হুমকি দেয়ায় অনন্য সাবধানে চলাফেরা শুরু করেন৷ ঢাকায় তো হেলমেট না পরে বেরই হতেন না তিনি৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
চিন্তার জগতে এক
ইসলামি জঙ্গি এবং তাদের ভাবধারায় বিশ্বাসীরা ব্লগারদের ঢালাওভাবে ‘নাস্তিক’ বলছে৷ কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের খুব কম ব্লগারই ধর্মের সমালোচনা করে লেখালেখি করেন৷ সরকার শুধু ব্লগারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থই নয়, উল্টো ব্লগারদের ওপরই বিধিনিষেধ আরোপ করতে সচেষ্ট৷ অনেক ক্ষেত্রে ব্লগারদেই বরং বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
ঐতিহাসিক বিরোধ
একাত্তরে নয় মাসের যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ৷ যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি দল পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে, তাদের অনেক কর্মী হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে অংশ নিয়েছে৷ ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগাররা আন্দোলন শুরু করে৷ শাহবাগে সমবেত হয় লাখো মানুষ৷ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা প্রকাশ করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
এরপর তুমি...
বাবা হুমায়ুন আজাদ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং লেখক৷ তাঁর ওপরও হামলা হয়েছিল৷ হুমায়ুন আজাদ তার কিছুদিন পরই মারা যান৷ একদিন হুমায়ুন অনন্যকে বলেছিলেন, ‘‘এরপর তুমি...৷’’ হুমায়ুন তাঁর লেখায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেন৷ তাই হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়৷ অনন্যকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/Gönna Ketels
‘গৃহবন্দিত্ব’ থেকে মুক্তি
হত্যার হুমকির পরও লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন অনন্য৷ লিখছেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান ধরে রেখে৷ কয়েকদিন হলো বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন অনন্য আজাদ৷ প্রিয় শহর ঢাকায় নিজের বাড়িতেই প্রায় বন্দি থাকার যন্ত্রণা থেকে আপাতত মুক্তি!
ছবি: DW/Gönna Ketels
7 ছবি1 | 7
সম্পর্ক তো আছেই৷ মৌলবাদ কখনোই তাদের মতের বাইরের কোনো মতের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না৷ বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ক্রমাগত সামরিক শাসন ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এর কারণে সুষ্ঠু পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে মৌলবাদ চর্চার পথ সুগম হয়ে গিয়েছিল৷ মৌলবাদের চারণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ৷ বিকল্প আদর্শ দাঁড়াতে পারছিল না৷ পরিকল্পিত ভাবে পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার, খেলাধুলা, বিজ্ঞানভাবনা, জীবনজগত বিষয়ে শিশুকিশোরদের মনে জিজ্ঞাসা তৈরির যেসব আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম; সবগুলোকেই নষ্ট করে দেয়া হয়েছিল৷ এই পরিস্থিতিতে এই শতাব্দীর প্রথম দিকে ইন্টরনেট প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে আবারো মুক্ত চিন্তার বিষয়টা সামনে চলে আসে৷ তরুণরা দ্রুত প্রযুক্তি ও চিন্তার এই মুক্তধারায় যুক্ত হতে থাকেন৷ অনলাইনের স্ক্রিন থেকে এই লেখা, ভাবনাগুলো ছাপার অক্ষরেও চলে আসে৷ বাড়তে থাকে এই ধারার চর্চা৷ মৌলবাদীদের কাছে এটি খুবই আতঙ্কের৷ এজন্যই ওরা মরিয়া হয়ে উঠে এই ধারার স্রোত রুদ্ধ করতে৷ এর প্রেক্ষিতেই ওরা মাস্টার প্ল্যান করে হত্যা করে রাজিব, অভিজিৎ, অনন্ত, বাবু, নীল ও দীপনকে৷ হত্যা করতে চেয়েছিল আমাকে৷
আপনার উপর হামলা হওয়ার আগে বাংলাদেশে চলতি বছর চার ব্লগার খুন হয়েছেন৷ এবং আপনার উপর যেদিন হামলা হয় সেদিন আরেক প্রকাশক খুন হয়েছেন৷ ব্লগার, প্রকাশক সর্বোপরি মুক্তমনাদের রক্ষায় সরকার কি যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে?
এটা ঘটনারও যদি বিচার হতো তাহলে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করা যেত৷ কিন্তু জানি না কি কারণে অপরাধীদের ধরা যাচ্ছে না বা বিচার করা যাচ্ছে না৷