জনসংখ্যা বেড়ে চলছে, আমাদের জীবনযাত্রাও হয়ে উঠছে প্রযুক্তি নির্ভর৷ ফলে শারীরিক শ্রমও কমে চলেছে৷ এই অবস্থায় আলৎসহাইমার রোগ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে৷ একদল গবেষক তা প্রতিরোধের পথ বাতলে দিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক৷ আমরা সবাই প্রায় প্রতিদিন কত কিছুই না ভুলে যাই৷ কিন্তু স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গেলে বিষয়টি বেশ মর্মান্তিক – এমনকি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে৷ আলৎসহাইমার এমনই এক রোগ৷ শারীরিকভাবে সুস্থ, সবল মানুষের জীবনও প্রায় অর্থহীন করে তুলতে পারে এই রোগ৷ কাছের মানুষের পরিচয়ও মনে থাকে না৷ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে বিষয়টি বংশগত, অন্যরা পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার শিকার৷
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের হিসাব অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ আলৎসহাইমার রোগে আক্রান্ত হবেন৷ ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ কোটি৷ এমন এক পরিস্থিতি এড়াতে এই রোগ প্রতিরোধের পথ খোঁজা হচ্ছে৷
কোনো কিছুতেই আগ্রহ বা উৎসাহ নেই, কেমন যেন ক্লান্ত বোধ হয়৷ এমনটা সাধারণত হয়ে থাকে ভিটামিন ডি-র অভাবে৷ এ সম্পর্কে আরো কিছু জানা যাক এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানরা ভিটামিন ডি-র অভাবে ভোগেন
শতকরা ৮০জন জার্মানেরই শরীরের রয়েছে ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতা৷ সাধারণভাবে অনেকে বলে থাকেন, যে তারা যথেষ্ট ফল আর সবজি খান৷ যদিও এ সবে ভিটামিন ডি তেমন নেই ঠিক দুধের মতোই৷ ‘দিনে যতটুকু ভিটামিন ডি প্রয়োজন, তা পূরণ করতে একজন প্রাপ্তবয়স্ককে বেশ কয়েক লিটার দুধ পান করতে হয়’৷ মন্তব্য ডা.স্পিটস-এর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরীক্ষার উপায়
ভিটামিন ডি-র অভাব রয়েছে কিনা, তা জানার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রফেসর ডা.ইয়র্গ স্পিটস-এর ৪টি প্রশ্ন রয়েছে৷ চারটি প্রশ্নের মধ্যে কমপক্ষে ২টির উত্তর যদি কারো হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে তাঁর শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে৷
ছবি: Fotolia
মাত্র ৪টি প্রশ্ন
প্রথম প্রশ্ন: আপনি কি প্রায়ই ক্লান্ত বোধ করেন? কোনো কিছুতেই আগ্রহ বা উৎসাহ নেই? দ্বিতীয় প্রশ্ন: প্রায়ই কি আপনার মেজাজ খিঁচড়ে থাকে? তৃতীয় প্রশ্ন: সহজেই সর্দি-কাশি বা সংক্রমণে আক্রান্ত হন? চতুর্থ প্রশ্ন: দিনের বেশিরভাগ সময় কি বন্ধ ঘরে থাকেন?
ছবি: Fotolia/Doc RaBe
ঘাটতি পূরণের উপায় কী?
প্রফেসর ডা. ইয়র্গ স্পিটস বলেন, শীতপ্রধান দেশে মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকে৷ তাই রোদ থেকে ভিটামিন ডি-র প্রয়োজন পূরণ করা সেভাবে সম্ভব নয়৷ গরমের দেশের মানুষেরও যে ভিটামিন ডি-র ঘটতি হয়না তা নয়৷ এক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-ট্যাবলেট সেবন করা প্রয়োজন, তবে তা দীর্ঘদিন নয়৷
ছবি: Fotolia
সূর্যের তাপের অভাব
তিনি বলেন, যদিও সূর্যের তাপের সাহায্যে শরীরে ভিটামিন ডি-তৈরি হয়, কিন্তু যারা অনেক বেশি বন্ধ ঘরে থাকেন, তাদের জন্য পুরোপুরি ভিটামিন ডি গ্রহণ করা কখনো সম্ভব হয়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিশুদের প্রয়োজন ভিটামিন ডি
গরমের দেশে আগে দেখা শীতকালে যেতো, ছোট শিশুদের গায়ে তেল মেখে রোদে শুইয়ে রাখা হতো ভিটামিন ডি গ্রহণের জন্য৷ আর শীতপ্রধান দেশে জন্মের পর বাচ্চাদের দুধের সাথে গুলে খাওয়ানো হয় ভিটামিন ডি-ট্যাবলেট৷ তাই ভিটামিন ডি-র প্রয়োজন সবার৷
ছবি: imago/imagebroker
ফ্যাকাশে এবং দুর্বল
ফ্যাকাশে এবং দুর্বল চেহারা দেখেই কিন্তু বোঝা যায়, যে তাদের শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি রয়েছে৷ পুরোপুরি ফিট অনুভব করতে এবং নানা সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ডি-র কথা সবারই মনে রাখা উচিত৷ খাদ্য তালিকায় ডিম, দুধ, মাছের মতো ভিটামিন ডি-যুক্ত সবকিছুই থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি৷ আর পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী সূর্যের তাপ গ্রহণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতকালের রোদ
এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে জার্মানরা একটুখানি সূর্যের তাপ পেতে প্রচণ্ড শীতেও বেরিয়ে পড়েন বাইরে৷ বলা বাহুল্য যে এরকম রোদ কিন্তু প্রতিদিন দেখা যায়না৷ আর সেকারণেই এত ভিড়৷ তবে বসন্ত বা গরমকালের চেহারা অবশ্যই ভিন্ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
কেমব্রিজের গবেষকদের মতে, কোনো কড়া ওষুধ বা কঠিন ব্যায়াম নয়, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মধ্যে সামান্য রদবদল ঘটিয়েই নাকি স্মৃতিভাণ্ডার স্বাভাবিক রাখা সম্ভব৷ গবেষকদলের প্রধান ক্যারল ব্রেন সাত রকমের ঝুঁকি চিহ্নিত করেছেন, যেগুলি আলৎসহাইমার রোগের উৎস হিসেবে পরিচিত৷ এগুলি হলো ডায়াবেটিস, মাঝবয়সি মানুষের ক্ষেত্রে হাইপার-টেনশন এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মোটা হওয়ার প্রবণতা, শারীরিক শ্রমের অভাব, ডিপ্রেশন বা অবসাদ, ধূমপান এবং শিক্ষার অভাব৷
২০১১ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী আলৎসহাইমারের প্রতি দুটি ঘটনার মধ্যে একটি প্রতিরোধ করা সম্ভব৷ সে ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলির মাত্রা মাত্র ১০ শতাংশ কমালেই ২০৫০ সালের মধ্যে ৮.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে আলৎসহাইমার প্রতিরোধ করা সম্ভব৷
সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে অবশ্য এই ঝুঁকিগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টিরও উল্লেখ করা হয়েছে৷ যেমন অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক শ্রমের অভাবের কারণেই ডায়াবেটিস, হাইপার-টেনশন বা মোটা হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়৷ ফলে চিকিৎসাবিদ্যার সঙ্গে জড়িত একাধিক মহল শুধু অঙ্কের হিসেবে এমন রোগ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে নারাজ৷