ঢাকার দুই সিটিতে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত চলবে। দুই সিটি মিলিয়ে প্রায় ৫৪ লাখ ভোটার ভোট দিচ্ছেন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে।
বিজ্ঞাপন
দুই সিটিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ের আশা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, ভোট নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা।
ফল যাই হোক মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
উত্তরার নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আতিকুল। বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা প্রকাশ করে সবাইকে ভোট দিতে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আতিকুল বলেন, ‘‘আমি এর আগে বিজিএমই নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের বিষয়টি আমার কাছে নতুন নয়। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হোক এটাই প্রত্যাশা। ভোটারদের আহ্বান জানাই, আপনারা সবাই ভোট কেন্দ্রে আসুন ভোট দিন।''
অন্যদিকে, ভোট দিয়েই নিজের শঙ্কার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উত্তর সিটির বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। তবে ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে মাঝপথে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালেও এবার মাঠে শেষ পর্যন্ত দেখার কথা বলেছেন তিনি।
সকালে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের তাবিথ বলেন, ‘‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার কাছে মনে হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে আমরা যাচ্ছি না। ভয়ভীতি, হামলা, পরিস্থিতির ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা সকাল থেকে করা হচ্ছে।''
নিজের ভোটকেন্দ্র গুলশানের মানারাত স্কুল এন্ড কলেজে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে না পাওয়ার ও ইভিএম নিয়ে ত্রুটির অভিযোগও করেন তিনি। অভিযোগ করেন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড, কালা চাঁদপু্র হাইস্কুল ও বনানী মডেল স্কুল কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
তাবিথও সবাইকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
দক্ষিণ সিটিতে ইভিএমে নির্বিঘ্নে নিজের ভোট দিতে পারলেও শঙ্কা কাটছে না বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনের। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘ইভিএমে প্রথমবারেই আমি ভোট দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এতে কোনো ত্রুটি নেই। আমরা আশংকা করছি, এসব মেশিনে পোগ্রামিংয়ে ত্রুটি থাকতে পারে যাতে পক্ষপাতিত্বমূলক ভোট হয়।''
তবে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা সাংবাদিকদের বলেননি ইশরাক।
এদিকে দক্ষিণ সিটির অন্য নানা কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি, এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস।
ধানমন্ডির কামরুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দেন তিনি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সাংগঠনিক শক্তি না থাকাতেই বিএনপি সব কেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারেনি। এখন পর্যন্ত কোনো কেন্দ্রে কোনো ধরনের অভিযোগ পাননি বলেও জানান তাপস।
ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের পরীক্ষা
আগামী এক ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন৷ সংসদ নির্বাচন ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে এটিকে নির্বাচন কমিশনের পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন অনেকে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
তারিখ নিয়ে নাটক
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের জন্য ২২ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন৷ নির্বাচনের তারিখ ছিল ৩০ জানুয়ারি৷ কিন্তু সেদিন সরস্বতী পূজা থাকায় আপত্তি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে৷ শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও৷ প্রথমে অনড় থাকলেও শেষ পর্যন্ত গত ২১ জানুয়ারি নতুন তারিখ ঘোষণা করে কমিশন৷ পরিবর্তীত তারিখ অনুযায়ী নির্বাচন হবে এক ফেব্রুয়ারি৷
ছবি: DW/A. Mahmud Ove
উত্তরে ভোট
উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা মোট ৫৪টি৷ সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি৷ মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে এক হাজার ৩১৮টি, যাতে রয়েছে সাত হাজার ৮৪৬ টি কক্ষ৷ মোট ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন৷ এর মধ্যে ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন পুরুষ আর ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন নারী৷
ছবি: bdnews24.com
দক্ষিণে ভোট
দক্ষিণে মোট সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ৭৫টি৷ আছে ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড৷ এক হাজার ১৫০ টি ভোটকেন্দ্রে মোট কক্ষ ছয় হাজার ৫৮৮টি৷ পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ জন আর নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন৷ মোট ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন৷
ছবি: bdnews24.com
আচরণবিধি
মনোনয়নপত্র জমার দিন থেকে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে৷ রিটার্নিং কর্মকর্তারা কড়াকড়ির কথা বললও অনেকটা ‘নির্বিকার’ ছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
ইভিএম বিতর্ক
প্রধান নির্বাচন কমিশন শুরুতে বলেছিলেন, যদি সব দল না চায় তাহলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে না৷ তবে পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, সব কেন্দ্রেই ভোট হবে ইভিএমে৷ যদিও এ নিয়ে বিভিন্ন প্রার্থী আপত্তি জানিয়ে আসছে৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
সিইসির আশ্বাস
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের কালচারটা অনেকদিন ধরেই এরকম নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল৷ নির্বাচনের কালচার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি৷ ইভিএম যদি দাঁড় করাতে পারি, তাহলে কারো ভোট কেউ দিতে পারবে না৷’’
ছবি: DW/M. M. Rahman
পোস্টার
নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকাকে এখন পোস্টারের নগরী বলা যায়৷ কিন্তু এসব পোস্টারের অধিকাংশই মোড়ানো ক্ষতিকর পলিথিনে৷ যা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট৷ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বুধবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লেমিনেটেড পোস্টার ছাপা ও প্রদর্শন বন্ধের এ নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে৷
ছবি: Imago/MD Mehedi Hasan
প্রচারে হামলা
বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথের প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটে৷ গাবতলীর পর্বতার কলাবাজার এলাকায় মঙ্গলবার জনসংযোগে নামলে তিনি ও তার কর্মীরা হামলার শিকার হন৷ তাবিথ অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষ আতিকুলের লোকজনই হামলায় জড়িত৷ জবাবে আতিকুল তার এই মন্তব্যকে ছেলেখেলা হিসেবে অভিহিত করেছেন৷
ছবি: bdnews24.com
তথ্য গোপনের অভিযোগ
উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ ওঠে৷ সুইডেনভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে তাবিথ সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেডের মালিকানায় রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে৷ হলফনামায় ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দেখালেও এই প্রতিষ্ঠানের নাম তিনি উল্লেখ করেননি৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan
নৌকা এগিয়ে চলবে: আতিক
ঢাকা উত্তরে আতিকুল ইসলাম মেয়র প্রার্থী হিসেবে বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে৷ … নৌকার কোনো ব্যাক গিয়ার নাই৷ নৌকা এগিয়ে চলবে৷’’
ছবি: Sazzad Hossain
ঢাকাবাসীর জন্য নবসূচনা: তাপস
আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘‘আমি আশা করি, ঢাকাবাসীর জন্য একটি নবসূচনা করতে পারব৷ … আমরা সব সময় চেষ্টা করব নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়৷ ঢাকাবাসী যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই নির্বাচনে ভোট দেয়৷’’
ছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan
শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব: তাবিথ
উত্তরে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘‘একটা বিতর্কিত নির্বাচন অতীতে হয়েছে৷ আর বিতর্ক না বাড়িয়ে ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে না৷ … আমরা অত্যন্ত সিরিয়াস৷ নির্বাচনে যত সমস্যাই আসুক, আমরা সবগুলোকে অতিক্রম করে চেষ্টা করব, এগিয়ে যেতে৷ শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব৷’’
ছবি: bdnews24.com
নির্বাচন কমিশনের দ্বিতীয় সুযোগ: ইশরাক
দক্ষিণের বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘‘এই নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে৷ ক্রান্তিকাল চলছে, কোনো গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই৷ সবাইকে নিয়ে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করব৷ …আস্থা অর্জনে নির্বাচন কমিশনের কাছে এটি দ্বিতীয় সুযোগ৷’’