সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের উদ্যোগে সোমবার সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সপ্তম পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে৷ তবে এই আলোচনা থেকে যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে বড় কোনো অগ্রগতির আশা কম৷
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালে প্রথম দুই পক্ষের মধ্যে এই ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়৷ ২০১১ সালের মার্চে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে এই আলোচনা চলছে৷ তবে দুই পক্ষই নিজেদের দাবিতে অটল থাকায় এখন পর্যন্ত ফলাফলে কোনো অগ্রগতি নেই৷ বিরোধী পক্ষের দাবি, সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে অবশ্যই যেতে হবে৷ আর সরকারি পক্ষ বলছে, প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আলোচনা চলবে না৷
ছয় বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে তিন লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷
জাতিসংঘের উদ্যোগে সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সবশেষ আলোচনাটি হয় গত মে মাসে৷ তখন সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের দূত স্টেফান ডি মিস্তুরা বলেছিলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে দূরত্ব এখনও রয়ে গেছে৷''
সিরিয়ায় ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা বন্ধ
সিরিয়ার দামেস্ক শহরের শিশু হাসপাতালে ক্যানসার ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা ওষুধ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে শিশুদের চিকিৎসা দিতে পারছেন না৷ তবে এটা যে শুধুমাত্র সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে হচ্ছে, তা নয়৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
যুদ্ধাবস্থায় হাসপাতালের পরিস্থিতি
চিকিৎসা সেবায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একসময় বেশ সুনাম ছিল সিরিয়ার৷ কিন্তু ছয় বছরের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ অর্ধেকেরও কম হাসপাতাল ঠিকমত কাজ করছে দেশটিতে৷ দামেস্কের হাসপাতালগুলোতে প্রতি সপ্তাহেই ভিড় করছে কমপক্ষে ২০০ শিশু, যাদের ৭০ ভাগই আসছে রাজধানীর বাইরে থেকে৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
নিষেধাজ্ঞার কারণে ওষুধপত্র অপ্রতুল
দামেস্কের শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে রোগীরা৷ স্থানীয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাবের কারণ হিসেবে সিরিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছে৷ কেননা বেশিরভাগ ওষুধপত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকেই আসতো সিরিয়ায়, যেগুলো তারা আর আসতে দিচ্ছে না দেশটিতে৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
ব্যয় কমিয়েছে সরকার
যুদ্ধ মানেই তা ব্যয়বহুল৷ আর এই ব্যয়ের কারণে সরকার স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমিয়েছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থের দাম পড়ে গেছে সিরিয়ায়৷ আর বিদেশি ওষুধ না পেয়ে রোগীরা দিন কাটাচ্ছে অসহায় অবস্থার মধ্যে৷ যুদ্ধ শুরুর আগে দেশে ব্যবহৃত ৯০ ভাগ ওষুধ নিজেরাই উৎপাদন করত সিরিয়া৷ তবে ক্যানসারের ওষুধগুলো বরাবরই আমদানি করতে হতো৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কম
একটি অসুস্থ শিশুর দেখভাল করছেন এক নার্স৷ সিরিয়ার অবস্থানরত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরুর পর সিরীয় সরকার স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কমানোর কারণে বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
সিরিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি এলিজাবেথ হফ জানান, দেশটির উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্যানসারবিরোধী বিশেষ কিছু ওষুধ আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
চিকিৎসার জন্য রোগীদের অপেক্ষা
ক্যানসারের রোগী ফাহাদ মোবাইল ফোন নিয়ে খেলছে আর তার মা বসে আছেন বিছানায়৷ চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন এরা৷ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বিদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে সিরিয়ায়৷ তাই ওষুধপত্র না থাকায় ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা৷
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
চিকিৎসায় বিলম্ব
বেসরকারি সংস্থা ‘বাসমা’ দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ক্যানসারের ওষুধ কিনতে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে৷ সংস্থাটির নির্বাহী ব্যবস্থাপক রিমা সালেম বললেন, ‘‘যুদ্ধ শুরুর পর সাহায্যপ্রার্থী পরিবারের সংখ্যা ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়েছে৷’’ কিন্তু চিকিৎসা শুরু হতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ সময়৷ তাই উদ্বিগ্ন সালেম জানান, ‘‘চিকিৎসা দিতে দেরি হলে যে কোনো দিন মারা যেতে পারে যে কোনো শিশু৷’’
ছবি: Reuters/O.Sanadiki
7 ছবি1 | 7
সোমবারের আলোচনায় প্রত্যাশা প্রসঙ্গে বিরোধী ‘হাই নেগোসিয়েশনস কমিটি'-র মুখপাত্র ইয়েহইয়া আল-আরিদি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তাঁর ‘সামান্য আশা' আছে৷
এদিকে, গত জানুয়ারি থেকে সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া ও ইরান এবং বিদ্রোহীদের সমর্থনদানকারী তুরস্কের উদ্যোগে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ ফলে জাতিসংঘের উদ্যোগে চলা আলোচনা অনেকখানি গুরুত্ব হারিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ সিরিয়ার বিদ্রোহীরা মনে করছেন, ঐ তিন দেশের উদ্যোগে আলোচনার মাধ্যমে সিরিয়ার সরকারপক্ষ আসলে আলোচনা প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে৷
গত মে মাসে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের আলোচনায় সিরিয়ায় চারটি ‘ডি-এস্কেলেশন জোন' তৈরির সিদ্ধান্ত হয়৷ তবে তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও জর্ডানের উদ্যোগে রবিবার থেকে দক্ষিণ সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে৷ এর আওতায় তিনটি রাজ্য পড়েছে৷ প্রস্তাবিত চার ‘ডি-এস্কেলেশন জোন'-এর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির আওতায় পড়েছে৷