অতিক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণী কম্ব জেলির মস্তিষ্ক গঠিত হয়েছে পৃথিবীর অন্যসব প্রাণীর চেয়ে আলাদাভাবে৷ আর এই আবিষ্কারের পর আল্সহাইমার অথবা পারকিনসন্স ডিজিজের মতো রোগ নিরময়ে নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
মাত্র দুই সেন্টিমিটার দীর্ঘ এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি সব সাগরেই দেখা যায়৷ নামের সঙ্গে ‘জেলি' শব্দটি থাকলেও এটি জেলি ফিশ নয়৷ দেহের সঙ্গে আটটি সারিতে চিরুনির মতো কাঁটা থাকে বলে বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘কম্ব জেলি'৷
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিওনিড মোরোজ জানান, কম্ব জেলির মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র যেভাবে কাজ করে তা পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের সঙ্গে মেলে না৷ এদের কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলে নতুন করে গজায়৷ অনেক অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রেও এরকম ঘটে৷ কিন্তু কম্ব জেলির ক্ষেত্রে মস্তিষ্কও নতুন করে তৈরি হতে পারে, যা জটিল মস্তিষ্কের অন্য প্রাণীর বেলায় ঘটে না৷
‘‘এতদিন ভাবা হতো জটিল স্নায়ুতন্ত্রের মস্তিষ্ক কেবল একভাবেই তৈরি হতে পারে৷ কিন্তু কম্ব জেলি আমাদের জানাল – মস্তিষ্ক গঠনের আরো উপায় আছে৷''
স্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয়
স্ট্রোক! শুনলেই কেমন যেন আঁতকে উঠে সবাই৷ মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে হতে পারে স্ট্রোক৷ ফলে শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে৷ বাকশক্তিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ সারাজীবন হয়তো বা হুইলচেয়ারে চলতে হতে পারে৷
ছবি: Sebastian Kaulitzki - Fotolia.com
স্ট্রোক বিপজ্জনক
মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে এই রোগ যে কোনো সময় যে কারও হতে পারে একেবারে হঠাৎ করেই৷ স্ট্রোক হলে বাকশক্তি, দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যেতে পারে৷ শরীরের যে-কোনো অংশ অবশ হতে পারে৷ সারাজীবন হয়তো বা হুইলচেয়ারে চলতে হতে পারে৷ তবে এটা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশে স্ট্রোক হয়েছে বা আঘাতটা কত বেশি তার ওপর৷
ছবি: Sebastian Kaulitzki - Fotolia.com
স্ট্রোকের লক্ষণ ও ঝুঁকি
মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, চোখে ঘোলাটে দেখা এসব অসুবিধা দেখা দেয় স্ট্রোক হওয়ার আগে৷ ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মোটা, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপান, মদ্যপান, স্ট্রেস ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: PeJo - Fotolia.com
একেবারেই দেরি নয়
যে-কোনো জায়গায় যে-কোনো সময় মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে৷ তখন দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তা না হলে হয়তো দেরি হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Robert Kneschke - Fotolia.com
জার্মানিতে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
প্রতি বছর জার্মানিতে ২৬০,০০০ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে৷ মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্ট্রোকের স্থান তৃতীয় ৷ সারা বিশ্বেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গবেষণা
আর সে কারণেই স্ট্রোক নিয়ে গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ জার্মানিতে গত ২০ বছরে স্ট্রোক থেরাপি বেশ শক্তিশালী হয়েছে, বলেন প্রফেসর ইওয়াখিম রোটার, হামবুর্গ আসক্লেপিয়োস ক্লিনিক৷ স্ট্রোকে আক্রান্ত গড় আয়ু মেয়েদের ৭৫ আর পুরুষদের ৭০ বছর৷ স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে শিশু কিশোররাও৷
শিশুরাও এর বাইরে নয়
জার্মানিতে প্রতিবছর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় ৩০০ শিশু ৷ এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আবার নবজাতক শিশু৷শুধু তাি নয় মাতৃগর্ভেও আক্রান্ত হতে পারে শিশু৷ তাছাড়া বংশগত কারণে এমনটা হতে পারে৷শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর হয়তো মস্তিষ্কের ক্ষতি ঠিক মতো বোঝা যায়৷
ছবি: Cristina Quicler/AFP/Getty Images
নিয়মমতো চলতে হবে
স্ট্রোক হলে মানুষ মুহূরতেই অথর্ব হয়ে যেতে পারে৷ তাদের হতে হয় পরের উপর নির্ভরশীল৷ তাদের বুঝে শুনে খাওয়া-দাওয়া করতে হয়৷ করতে হয় নিয়মিত ব্যায়াম৷ এড়িয়ে চলতে হয় বাড়তি স্ট্রেস৷ কারণ যদি কারও দ্বিতীয়বার স্ট্রোক হয় তাহলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷ কাজেই প্রথমবার স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়৷ নিয়মিত ব্লাডপ্রেশার মাপা প্রয়োজন এবং হাসিখুশি থাকাটাও জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
7 ছবি1 | 7
মোরোজ ও তাঁর সহকর্মীদের এই গবেষণা প্রতিবেদন গত বুধবার বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, কম্ব জেলির শরীরে এমন কিছু জিন রয়েছে যা অন্য প্রাণীর তুলনায় আলাদা৷ মানুষ ও অন্য অধিকাংশ প্রাণীর মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ সেরোটোনিন, ডোপামিন, এসিটিলকোলিন-এর মতো রাসায়নিক যৌগের ওপর নির্ভর করলেও কম্ব জেলির স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয় কয়ক ধরনের পেপটাইড ও গ্লুটামেট নিউরাল সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে৷
মানব মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোন উৎপাদনকারী কোষগুলোর মৃত্যু ঘটলে পারকিনসন্স ডিজিজ হয়৷ এ রোগে স্নায়ুক্ষয়ের ফলে ক্রমাগত হাত-পা কাঁপতে থাকে৷ আঙুল দিয়ে কলম বা সুঁই ধরার মতো কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়ে৷ আর ডিমেনশিয়া বা আল্সহাইমার, অর্থাৎ ‘স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া রোগ' হলে ধীরে ধীরে রোগীর স্মৃতি লোপ পেতে থাকে৷ এক পর্যায়ে শারীরিক ক্রিয়াকর্মেও এর প্রভাব পড়ে এবং রোগীর মৃত্যু হয়৷ এ দুটি রোগের কোনো চিকিৎসা এখনো বিজ্ঞানীদের জানা নেই৷
মানুষ বা জটিল মস্কিষ্কের প্রাণীর স্নায়ুক্ষয় শুরু হলে বিজ্ঞানীরা তা থামানোর চেষ্টা করতে পারেন৷ কিন্তু ডোপামিন উৎপাদনকারী কোষ নতুন করে তৈরির কোন পথ এখনো তারা খুঁজে পাননি৷ কিন্তু কম্ব জেলির মস্তিষ্ক কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আবার নতুন করে তৈরি হয়৷ এমনকি গবেষণাগারে একটি কম্ব জেলির মস্তিষ্ক চারবারও তৈরি হতে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা৷