1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আশির দশকের আন্দোলন অনেক বেশি পরিপক্ক ও সম্ভাবনাময় ছিল

সমীর কুমার দে ঢাকা
৫ আগস্ট ২০২৩

সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি দেওয়ার পর ক্রসফায়ার, গুম, বিরোধীদের উপর দমন পীড়ন অনেকটাই কমেছে, মত আনু মুহাম্মদের
যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি দেওয়ার পর ক্রসফায়ার, গুম, বিরোধীদের উপর দমন পীড়ন অনেকটাই কমেছে, মত আনু মুহাম্মদেরছবি: Mortuza Rashed/DW

বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারা পরিবর্তন হয়েছে৷ আগের মত এখন আর হরতাল-অবরোধ দেখা যাচ্ছে না৷ রাজনৈতিক মাঠে খুব বেশি সহিংসতাও নেই৷ হঠাৎ করেই রাজনৈতিক আন্দোলনে কেন এই পরিবর্তন? আগের আন্দোলনের থেকে বর্তমান সময়ের আন্দোলনের পার্থক্যটা কী? হরতাল-অবরোধের কার্যকারিতা কী শেষ হয়ে গেছে? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ৷

ডয়চে ভেলে : আগের আন্দোলন থেকে এবারের আন্দোলনের পার্থক্য কী?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ : আগে বলে তো নির্দিষ্ট কিছু নেই৷ একেক সময় একেক ধরনের আন্দোলন হয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধের আগেও আন্দোলন হয়েছে, পরেও হয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধের পরে যেটা দেখেছি, তখন তো ধর্মপন্থি দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল৷ তখন যে দলগুলো ছিল তাদের প্রায় সবাই বিপ্লবের কথা বলত, সমাজতন্ত্রের কথা বলত৷ আওয়ামী লীগও এটা বলত, যারা সমালোচনা করত তারাও বলত৷ প্রথম সরকারের সময় যেটা ছিল সশস্ত্র সংগ্রাম৷ যেটা পরে দুর্বল হয়ে যায়৷ জিয়াউর রহমানের সময়ও নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন হয়েছে৷ সেটা বেশি দিন হয়নি৷ এরপর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় আমরা দীর্ঘ একটা আন্দোলন দেখেছি৷ আমার ধারণা আশির দশকের আন্দোলন অনেক বেশি পরিপক্ক ও সম্ভাবনাময় ছিল৷ তখন আন্দোলন শুধু স্বৈরাচারের পতন না, সমাজিক একটা রূপান্তরের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল৷ তখন শ্রমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, নারীরা একত্রিত হয়েছিল, পেশাজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল৷ তখনও দলীয় ভিত্তিতে কোন কিছু ভাগ হয়নি৷ তখন আন্দোলনের জনভিত্তি ছিল খুব শক্তিশালী৷ কিন্তু সেই সম্ভাবনাও কাজে লাগেনি৷ কারণ পরে যখন সবকিছু বাদ দিয়ে এক দফার আন্দোলন শুরু হয়৷ তখন তিন দলীয় জোটের যে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে সেটার বাস্তবায়ন হলে বর্তমানে যে সংকট সেটা আর হত না৷ একানব্বই থেকে নতুন ধারা তৈরী হয়৷ তখন বিশেষ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়েছিল৷ সেই থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়েই আন্দোলন হচ্ছে৷ জনগনের অন্যান্য দাবি দাওয়ার চেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন, ভোটাধিকার এ নিয়েই আন্দোলনটা হচ্ছে৷ ১৯৯৬ সালে বিএনপি ভোটার ছাড়া একটা নির্বাচন করেছিল৷ তখন দীর্ঘ আন্দোলন হয়েছিল৷ হরতাল অবরোধ ছিল৷ পরে আপসরফা হিসেবে ওই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পাশ হয়৷ সেই আন্দোলনে কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াত ও জাতীয় পার্টি ছিল৷ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আর আন্দোলন হয়নি৷ কারণ দুই দলই তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিল৷ এরপর পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যায়৷

'বাংলাদেশিরা সংঘাত পছন্দ করে না'

This browser does not support the audio element.

আপনি যে আন্দোলনের কথা বললেন, সেখানে তো হরতাল-অবরোধ ছিল৷ এখন সেটা নেই কেন? হরতাল-অবরোধের কার্যকারিতা কী এখন আর নেই?

২০০৬ সালে অনেক হরতাল অবরোধ হয়েছিল৷ তখন বিএনপি নিজেদের মতো করে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির চেষ্টা করেছিল৷ সেটার বিরোধিতায় সহিংসতাও হয়েছিল৷ এরপর আমরা ১/১১ এর ঘটনা দেখলাম৷ ২০০৮ সালে আবার নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হল৷ এরপরে যে আন্দোলন হচ্ছে সেটা গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোটাধিকারের দাবিতে৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়৷ তখন তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে স্বাধীনতার পরে কোন সরকারই প্রমাণ করতে পারেনি দলীয় সরকারের অধীনে কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে৷ সেই থেকে নির্বাচনটা কে পরিচালনা করবে সেটাই একটা বড় ইস্যু৷ ২০১৪ সালে যে নির্বাচন হয়েছে সেটা একদলীয়৷ আর ২০১৮ সালে যেটা হয়েছে, সেটা কোন নির্বাচনই না৷ ২০১৩-১৪ সালে যে আন্দোলন হয়েছিল, সেখানে কিন্তু হরতাল-অবরোধে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল৷ যেহেতু হরতালে মানুষের অভিজ্ঞতা তিক্ত, হরতালে শুধু সহিংসতা নয় অনেক ধরনের দুর্ভোগ হয়, মানুষেরও হরতালে আগ্রহ কমে আসছিল ফলে হরতালের আবেদনটা আর নেই৷

বর্তমানে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের যে ধারা তাতে সফলতার সম্ভাবনা কতটুকু?

অশান্তি বা সহিংসতাই যে পরির্তন আনতে পারে তা কিন্তু না৷ আন্দোলনে মানুষ কতটা জমায়েত হবে বা মানুষকে কতটা আকর্ষণ করতে পারবে সেটার উপরই নির্ভর করে৷ পাকিস্তান আমলে যেটা হয়েছিল, মানুষকে অনেক বেশি সম্পৃক্ত করা গেছে৷ যে কারণে কিন্তু গণঅভ্যুত্থান করা গেছে৷ এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও কিন্তু মানুষকে অনেক বেশি আকর্ষণ করা গেছে৷ সেখানে হরতাল একটা মাধ্যম হতে পারে৷ মূল কথা হল, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আন্দোলনে কতটা যুক্ত হচ্ছে৷ সেটার উপরই নির্ভর করে কতটা সফল হবে৷ বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান স্বাধীন থাকার কথা, বর্তমান সরকার কিন্তু সফলতার সঙ্গে সবগুলো প্রতিষ্ঠানকেই দলীয়করণ করে ফেলেছে৷ যার ফলে পুলিশ, র‌্যাব, আইন আদালত কোন কিছুই আর স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না৷

বর্তমানে যে আন্দোলন হচ্ছে, এর মধ্যে বিদেশিদের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

এটা কিন্তু আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার৷ এখানে বিদেশিদের ভুমিকা থাকে এবং নানানভাবে সেটা কাজও করে৷ এর আগে নব্বইয়ের দশকেও যত আন্দোলন হয়েছে, সেখানেও আমরা বিদেশিদের তৎপরতা দেখেছি৷ সবসময় যে কাজ করে তা নয়, যেমন ২০০৬ সালে কাজ করেনি৷ তখনও কিন্তু নানা ধরনের তৎপরতা দেখেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১/১১ এসেছে৷ বর্তমানে বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্যে এখন একটা বাক বদল হচ্ছে৷ একটা টালমাটাল অবস্থা চলছে৷ তার মধ্যে বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি হয়েছে৷ এখন যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তা হচ্ছে তারা চীনকে মোকাবেলা করতে চায়৷ ভারতের উপর তারা পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে পারছে না৷ ফলে বাংলাদেশ তার কাছে কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আবার চীন তার বাণিজ্যিক স্বার্থে অবস্থান নিচ্ছে৷ এবার চীনের যে ভুমিকা সেটা আগে কখনও এতটা খোলামেলা অবস্থান নিতে দেখা যায়নি৷ রাশিয়ার ক্ষেত্রেও তাই৷

ভারত তো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ বর্তমান সরকার ২০১৪, ২০১৮ সালে যে নির্বাচন করল সেখানে তো ভারতের সমর্থন একটা বড় ভিত্তি ছিল৷ সরকার যদিও বলছে, আমরা বিদেশিদের কথা শুনি না৷ কিন্তু আমরা যেটা দেখলাম যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি দেওয়ার পর ক্রসফায়ার, গুম, বিরোধীদের উপর দমন পীড়ন অনেকটাই কমেছে৷ এটা বড় ধরনের কোন পরির্বতনের জন্য নির্ধারক নাও হতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের নিজেদের এজেন্ডাই মুখ্য৷ সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা না৷ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাদের কৌশলগত স্বার্থ হাসিল করা৷ সেটার জন্য তারা চাপ দিচ্ছে৷ এর ফল কী হবে সেটা তো আর এখনই বলা যাবে না৷

বর্তমান আন্দোলন তো এখনো অহিংস অবস্থায় আছে৷ ভবিষ্যতে কী এটা সহিংসতার দিকে যেতে পারে?

এটা সরকারের উপর নির্ভর করবে৷ এমনিতেও বাংলাদেশের মানুষ সংঘাত পছন্দ করে না৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তো একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে বা সমাধানে আসতে হবে৷ এখন যদি কোন সমাধান না হয় তাহলে অস্থিরতার মধ্যে তো নানা ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে৷ তবে বলা মুশকিল কোন ধরনের সংহিসতা হবে৷ দ্রব্যমূল্যসহ নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে এটাও একটা৷ এই পরিস্থিতি মানুষের সামাজিক জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলছে৷

আগে কী কখনও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন আন্দোলন সফল হয়েছে?

প্রাসাদ ষড়যন্ত্র বলে তো একটা কথা আছে৷ সফল হওয়া মানে কী? সরকারের পরিবর্তন? সামরিক শাসনের মাধ্যমেও তো সরকারের পরিবর্তন হয়৷ যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের কথা বলি, তাহলে জনগণের অংশগ্রহণ একটা বড় বিষয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ