জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ তাদের আবেদনপত্র সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে অভিবাসন অফিস৷ প্রক্রিয়াটি দ্রুত করতে এখন ডাক পড়েছে সেনাবাহিনীর৷ তবে এ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির কোলন শহরে সেনা কার্যালয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনপত্রগুলো যাচাই বাছাইয়ের জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া নবীন সদস্যদের৷ জার্মানির কেন্দ্রীয় অভিবাসন অফিসে কাজ করতে ডাক পড়েছে তাদের৷
সেনা সদস্যদের এ কাজে যুক্ত করার ব্যাপারে লেঃ কর্নেল মাইকেল ব্যাক হসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, অভিবাসন অফিসের অনুরোধেই তারা এ কাজটি করছেন৷ এ কাজে ১,৭০০ সেনাকে নিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে দ্বিগুন নিয়োগ
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ এবং এসডিপি জোটের সমঝোতার অন্যতম ইস্যু ছিল রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী৷ তাই তাদের চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে আবেদন যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে৷ এটি জার্মানির শরণার্থীদের জন্য ভালো খবর বলে মনে করছেন অনেকে৷ তবে অভিবাসন কার্যালয়ের পক্ষে এই সময়ের মধ্যে এই কার্য সম্পাদন করা কঠিন৷
জার্মানিতে বাড়ি সমস্যায় অভিবাসীরা
অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ তবে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷এ সমস্যা জার্মানিতে বসবসারত তুর্কিদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়৷ কারণ জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ তুর্কি আছেন৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
অভিবাসী তুর্কিদের সমস্যা বেশি
জার্মানিতে অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ এগুলোর মধ্যে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ জার্মানিতে অভিবাসীদের মধ্যে তুর্কিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ লাখ৷ কাজেই সমস্যাটাও ওদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট পায়
তুর্কিদের সাধারণত বাসা ভাড়া দেওয়া হয় পুরনো এলাকায় বহু বছরের পুরনো বাড়িগুলোয়৷ সেই সব বাড়িতে হয়ত দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না বা জানালা দিয়ে বাতাস ঢোকে বা খানিকটা খোলা থাকে৷ অথবা শীতকালে হিটার কাজ করে না, অর্থাৎ ঠান্ডায় কাটাতে হয়৷ বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলেও ঠিক করানো যায়নি৷ এভাবেই জানান তিন দশক আগে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসা আহমেদ খালিফি৷
ছবি: DW/C. Ruta
বাড়ির অবস্থা অস্বাস্থ্যকর
আহমেদ খালিফির ছেলে আদেলের বাড়িতেও প্রায় একই সমস্যা৷ বাড়িটি ৪০ বছরের পুরনো হওয়ায় খুবই স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার এবং অস্বাস্থ্যকর৷ এ ব্যাপারে অবশ্য বাড়িওয়ালার মাথা ব্যথা নেই, কয়েকবার বলেও কোনো কাজ হয়নি৷
ছবি: DW/C. Ruta
অবশেষে নিজেই দায়িত্ব নেন
আবদাল ১৫ বছর এ বাড়িতে আছেন, কিন্তু একবারও রঙ করা হয়নি৷ আর সেকথা বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে তিনি যেন নিজেই এ কাজ করে নেন৷ তাই আবদাল এ কাজ ভালো না জানা সত্ত্বেও নিজেই করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
শীতের কথা ভেবে ভীত
একটি মাত্র ঘর আর সেখানেই বাচ্চাদের নিয়ে থাকেন আলিয়া৷ ঘরে যেসব জিনিসের জায়গা হয় না, সেসব জিনিস স্থান পেয়েছে বাড়ির বারান্দায়৷ কিন্তু শীতের সময় এসব প্রয়োজনীয় জিনিসের কি হবে – তা ভেবে অস্থির আলিয়া৷ এই অবস্থা অবশ্য শুধু আলিয়ার একার নয়৷
ছবি: DW/C. Stefanescu
অভিবাসীদের বেশি সন্তান
অভিবাসীদের বাড়ির বড় সমস্যা৷ তার কারণ, তাঁরা বড় শহরগুলোর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করতে পছন্দ করেন৷ তাছাড়া জার্মানদের তুলনায় অভিবাসীরা কম রোজগার করেন এবং তাঁদের সন্তান সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাড়ি পেতেও অসুবিধা হয়৷ এছাড়া একই ধরণের বাড়ির জন্য জার্মানদের তুলনায় তাঁদের কাছে বেশি ভাড়াও চাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বাড়ির অবস্থা করুণ
অভিবাসীদের বাসস্থান সমস্যা অবশ্য নতুন সমস্যা নয়৷ অভিবাসীরা যেসব এলাকায় থাকেন সেই পুরনো বাড়িগুলোকে ঠিকঠাক না করানোয়, দিনদিন সেগুলি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থা নিদিষ্ট কোনো শহরে নয়, প্রায় শহরেই এই একই অবস্থা৷
ছবি: Fars
আগুনে পরিবারের আট জনের মৃত্যু
প্রায় চার মাস আগে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের বাকনাং শহরে একটি বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন ছিল বিপজ্জনক এবং একথা বারবার মালিককে বলার পরও তা ঠিক করা হয়নি৷ যার ফল হয় মর্মান্তিক৷ ঘর গরম বা পানি গরমের জন্য ব্যবহার করা হতো কাঠের চুল্লি৷ ঐ বাড়িতেই আগুন লেগে একজন তুর্কি মা তাঁর সাত সন্তানসহ মারা যান৷ ছবিতে বাকনাং শহরের কিশোর-কিশোরীরা মৃত পরিবারের প্রতি ফুল আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ি মালিকদের মত
বাড়িওয়ালাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, তুর্কি পরিবারগুলো অনেক বড়, সবসময় হৈচৈ লেগে থাকে এবং তেমন পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন নয়৷ আর সেজন্যই তাঁদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি থাকে বাড়িওয়ালাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তরুণদের ভিন্নমত
বয়স্ক অভিবাসীরা বাসস্থানের ব্যাপারে যতটা বৈষম্যের শিকার হন বলে মনে করেন, এই প্রজন্মের তুর্কিরা তেমনটা মনে করে না৷ সম্ভবত এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা জার্মান ভাষা ভালো জানার কারণেই এমনটা ঘটছে৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
10 ছবি1 | 10
২০১২ সালের চেয়ে এ বছর আবেদনপত্রের সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে৷ গত কয়েক মাস ধরে ১৩০ জন কেন্দ্রীয় পুলিশ কর্মকর্তা এ কাজে নিয়োজিত আছেন৷ এর ফলে এক একটি আবেদনপত্র প্রক্রিয়া হতে গড়ে আট মাস সময় লেগেছে৷ ফলে পর্যাপ্ত কর্মী না পাওয়া পর্যন্ত অভিবাসন অফিস এ কাজে কোনো পরিবর্তন আনছে না৷ অভিবাসন অফিসের প্রধান মানফ্রেড স্মিট ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তাদের এখন যে অবস্থা তাতে এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই অতিরিক্ত কর্মী প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল সেনারা কি এই কাজের যোগ্য? এর উত্তরে স্মিট জানালেন, তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার৷
সেনাদের অন্যতম কাজ হবে শরণার্থীদের ছবি তোলা এবং তাদের আঙ্গুলের ছাপ নেয়া৷ তবে শরণার্থী অধিকার সংস্থার কর্মী প্রো আসিল-এর এই পদ্ধতি পছন্দ নয়৷ সামরিক সদস্যরা বেসামরিক নাগরিকদের দায়িত্ব পালন করছে এটা তিনি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, অল্প কিছু ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো যেতে পারে, কিন্তু বৃহৎ পরিসরে নয়৷