জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে অভিবাসন এবং শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় দপ্তর বিএএমএফ৷ দপ্তরের কর্মী সংখ্যা কমে যাওয়া কি এর কারণ হতে পারে?
বিজ্ঞাপন
চলতি বছরের শুরুর দিকের চেয়ে এখন আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়াজাত করতে অনেক বেশি সময় নিচ্ছে জার্মান কর্তৃপক্ষ৷ জার্মান পত্রিকা ন্যুরেমবার্গার নাখরিশটেন জানিয়েছে এই তথ্য৷
বিএএমএফ-এর একটি অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্টের বরাতে পত্রিকাটি জানিয়েছে যে, চলতি বছরের শুরুতে যেখানে মাসে ৫০,০০০ আবেদন যাচাই করা হতো, সেখানে এখন ১৫,০০০ থেকে ১৮,০০০ আবেদন যাচাই করা হচ্ছে৷ একেকটি আবেদন প্রক্রিয়াজাত করতে আগে যেখানে দেড় সপ্তাহের মতো সময় লাগতো, এখন সেখানে দুইমাসের বেশি লাগছে বলেও জানা গেছে৷
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
10 ছবি1 | 10
এমনকি, ৫২,০০০ পুরনো আবেদন, যেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি ২০১৫ সালে করা হয়েছিল, এখনো সেগুলো যাচাই-বাছাই সম্ভব হয়নি বলেও জানিয়েছে পত্রিকাটি৷ অথচ কর্তৃপক্ষ আগে বলেছিল যে, ২০১৬ সালে জমা পড়া আবেদনগুলো ২০১৭ সালের মে মাসের মধ্যেই যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করা হবে৷
শরণার্থীদের জার্মান ভাষা শিক্ষা কোর্স প্রদান করার ব্যাপারেও বিএএমএফ-এর দৈনদশা ফুটে উঠেছে৷ সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ২৮,০০০ শরণার্থী জার্মান ভাষা শেখার সুযোগ পেয়েছেন৷ যদিও কর্তৃপক্ষ আগে জানিয়েছিল যে, ৫৬,০০০ শরণার্থীকে এই সুযোগ দেয়া হবে৷ জার্মান ভাষা শেখার সুযোগ পেতে একেকজন শরণার্থীকে গড়ে ছয় মাস অবধি অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷
যারা ভাষা শেখার সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ তা কাজে লাগাতে পারছেন না৷ সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিন হাজার শরণার্থী কথাবার্তা বলার মতো পর্যায়ের ভাষা শিখতে সক্ষম হলেও বাকি তিন হাজার তাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ আর জার্মান ভাষা শিখতে যারা ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের অর্ধেকের মতো নিয়মিত ক্লাসেই যাননি৷
প্রসঙ্গত, শরণার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়াজাত করতে দীর্ঘ সময় লাগার পেছনে বিএএমএফ-এর লোকবল কমানোকে দায়ী করছেন কেউ কেউ৷ আগে এই দপ্তরে দশ হাজার লোক কাজ করলেও সম্প্রতি তা কমিয়ে ৭,৮০০ জন করা হয়েছে৷ বর্তমানে চাকুরিরতদের অর্ধেক অস্থায়ী চুক্তিতে কাজ করছেন৷