সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে যে মানুষগুলো ইউরোপে আসার চেষ্টা করছেন, তাঁদের আশ্রয় আবেদনের নিয়ম সহজ করার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি৷ ফলে সিরীয় আশ্রয়প্রত্যাশীদের আর তাঁদের প্রথম পা রাখা ইউরোপের দেশটিতে ফেরত পাঠাবে না জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
বিষয়টা এরকম – আশ্রয়প্রত্যাশীরা বর্তমানে যে উপায়ে সিরিয়া থেকে জার্মানিতে আসছেন, তার জন্য তাঁদের প্রথমে সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস কিংবা ইটালির কোনো দ্বীপে পৌঁছাতে হচ্ছে৷ এরপর সেখান থেকে তাঁরা সড়কপথে কয়েকটি দেশ পার হয়ে জার্মানিতে পৌঁছে আশ্রয়ের আবেদন করছেন৷ এতদিন এরকম আবেদন বিবেচনা করত না জার্মানি৷ নিয়ম মেনেই সেটা করত তারা৷ কারণ নিয়ম বলছে, একজন আশ্রয়প্রার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করবে সে দেশকেই ঐ আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন বিবেচনা করতে হবে৷ আর এখানেই পরিবর্তন আনছে জার্মানি৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলছেন, বর্তমান শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় ইউরোপের সব সদস্যরাষ্ট্রকে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে৷
জার্মানির এই নতুন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র নাতাশা ব্যারটোড বলেছেন, ‘‘জার্মানির এই ঘোষণা এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করে যে, শরণার্থী সংকট মোকাবিলার ভার শুধু ইউরোপের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর উপর ছেড়ে দিলে হবে না৷''
শরণার্থীদের যেভাবে সাহায্য করছে জার্মানরা
গত বছর ২ লক্ষ শরণার্থী এসেছে জার্মানিতে৷ এ বছর সংখ্যাটা সাড়ে সাত লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা৷ নতুন দেশে, নতুন পরিবেশে শরণার্থীদের টিকে থাকতে নানাভাবে সহায়তা করছে জার্মানরা৷ তারই কিছু নমুনা দেখুন আজকের ছবিঘরে...৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
শরণার্থীদের জন্য লাইব্রেরি
গ্যুন্টার রাইশার্ট পেশায় স্থপতি৷ নুরেমব্যার্গে শরণার্থীদের জন্য একটা দারুণ লাইব্রেরি তৈরি করেছেন তিনি৷ বই তো আছেই, সঙ্গে বিনা খরচে জার্মান ভাষা শেখার সব ব্যবস্থাই আছে সেই লাইব্রেরিতে৷ সেখানে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সন্তানদের লিখতে শেখানোর জন্য আলাদা ক্লাসও নেন গ্যুন্টার৷ যুদ্ধ চলছে এমন দেশ থেকে আসা শিশুদের আতঙ্ক থেকে বের করে আনার জন্য লাইব্রেরিতে বিশেষ ব্যবস্থাও রেখেছেন গ্যুন্টার রাইশার্ট৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Schamberger
দোভাষীদের সহায়তা
জার্মানিতে জার্মান ভাষা না জানলে অনেক সময়ই মুশকিলে পড়তে হয়৷ তার ওপর ইংরেজিও না জানলে তো চলা দায়৷ তাই বার্লিনে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন অনেক জার্মান তরুণ-তরুণী৷ নাটালিয়া তাঁদেরই একজন৷ অন্য দোভাষীদের মতো অবসর সময়ে তাঁরও কাজ ডাক্তার দেখানো, কাজ খোঁজার মতো কিছু কাজের সময় অভিবাসীদের সঙ্গে থাকা এবং তাঁদের কথা সব জায়গায় বুঝিয়ে বলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/G. Fischer
ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া
ডর্টমুন্ডের ৪০০ শরণার্থীকে এখন আর ইন্টারনেট নিয়ে ভাবতে হয় না৷ তাদের ঘরে বিনা খরচে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সভেন বোরশার্ট এবং তাঁর বন্ধুরা৷
ছবি: picture alliance/dpa/B. Thissen
হটলাইনে তাঁরা আছেন
বার্লিনের ‘গুটে-টাট ডট ডিই’ ফাউন্ডেশন শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবসময় প্রস্তুত৷ তাদের এই অফিসে হটলাইনে ফোন করে স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তা পেতে পারেন শরণার্থীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa/G. Fischer
শিক্ষকদের পাশে শিক্ষার্থীরা
শরণার্থীদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন দেশে যাঁরা শিক্ষকতা করতেন৷ জার্মানিতে তাঁদের উপযোগী কাজ জোগাড় করে দিতে অনেক জার্মানই আগ্রহী৷ তাঁদের বেশির ভাগই ছাত্র-ছাত্রী৷ তাঁরা সবাই মিলে অ্যাকাডেমিক এক্সপেরিয়েন্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড (এইডাব্লিউ) নামের একটি অ্যাকাডেমি গড়েছেন যার কাজই হলো শরণার্থী শিক্ষাবিদদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়া এবং তাঁদের জার্মান ভাষা শিখতে সহায়তা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Schmidt
ফেসবুকের সহায়তায় দোকান
ম্যুলহাইমের এই দোকানটি শরণার্থীদের জন্যই তৈরি করেছেন রাইনহার্ড সেহলস৷ এক বছর আগে তিনি ফেসবুকে সবার উদ্দেশ্যে কিছু ইরাকি শরণার্থী পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ তারপর থেকে ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যায় দোকানটি৷ রাইনহার্ড দোকানটির নাম দিয়েছে ‘ওয়েলকাম ইন ম্যুলহাইম’৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Hitij
খেলাচ্ছলে অর্থসংগ্রহ
নিকোল ট্সানাকিস এবং কর্নেলিয়া কপ ড্যুসেলডর্ফ থেকে হামবুর্গ গিয়েছেন এই লংবোর্ডে চড়ে৷ এভাবে ৪৪৪ কিলোমিটার অতিক্রম করার উদ্দেশ্য ছিল শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা৷ হামবুর্গে পৌঁছাতে পাঁচ দিন লেগেছে তাঁদের৷ ওই পাঁচ দিনে ৭ হাজার ইউরো উঠিয়েছেন তাঁরা৷ পুরো টাকাটাই যাবে শরণার্থী কল্যাণ সংস্থা ‘স্টে’-র তহবিলে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Hitij
তারকারাও পাশে
শরণার্থীদের সহায়তায় জার্মানির অনেক তারকাও এগিয়ে এসেছেন৷ টিল শোয়াইগার গড়ে দিচ্ছেন অস্থায়ী বাড়ি, যাতে তাঁর দেশের নতুন অতিথিদের খোলা আকাশের নীচে কষ্ট করে থাকতে না হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Carstensen
নিজের বাড়িই যখন আশ্রয়শিবির
সিডিইউ-এর সাংসদ মার্টিন পাটসেল্ট নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন ইরিত্রিয়া থেকে আসা দুই শরণার্থীকে৷ পরিবারে দুজন নতুন সদস্য আসায় সাংসদের স্ত্রী-ও নাকি খুব খুশি৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
ব্যারাকই এখন শরণার্থী শিবির
নর্থ ফ্রিজিয়ার একটি শহরে কিছুদিন আগেও যে ব্যারাকটি ছিল এখন তা হয়ে গেছে শরণার্থী শিবির৷ ৬০০ শরণার্থী থাকেন সেখানে৷ তাঁদের জীবন চলে সরকার এবং স্থানীয়দের সহায়তার ওপর৷ অনেক পরিবারে তো ছোট ছোট বাচ্চা আছে, তাঁদের কথা ভেবে ডায়াপার দিতে এসেছেন ব্রিগিটে ভোটকা৷
ছবি: picture alliance/dpa/B. Marks
10 ছবি1 | 10
শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে ম্যার্কেল
ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ হওয়ায় শরণার্থীদের মূল লক্ষ্য থাকে যে করেই হোক জার্মানিতে পৌঁছানো৷ কিন্তু বিষয়টা মেনে নিতে পারছেন না জার্মান সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ, বিশেয করে নব্য নাৎসি মতবাদে বিশ্বাসীরা৷ ফলে জার্মানিতে শরণার্থীদের আশ্রয়স্থলের উপর কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ গত সপ্তাহান্তে এমন একটি হামলার শিকার হয়েছে পূর্বাঞ্চলের ড্রেসডেন শহরের হাইডেনাউ এলাকার একটি কেন্দ্র৷ এই ঘটনায় ৩০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন৷ জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ঐ হামলার তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ বুধবার তিনি সেখানে যাচ্ছেন৷ শিবিরে আশ্রয় নেয়া শরণার্থী সহ স্বেচ্ছাসেবী ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন৷ এর আগে সোমবার আক্রান্ত ঐ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জার্মানির ভাইস-চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল৷
এদিকে জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউকও বুধবার বার্লিনে একটি শরণার্থী কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন৷