আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পেমেন্ট কার্ডের অনুমতি জার্মান সংসদের
১৪ এপ্রিল ২০২৪
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পেমেন্ট কার্ড চালু করার অনুমতি দিয়েছে জার্মান সংসদ৷ শুক্রবার পার্লামেন্টের ভোটে এ বিষয়ক আইনটি পাশ হয়৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে খসড়া আইন তৈরির পর চলতি সপ্তাহে আইনপ্রণেতারা পেমেন্ট কার্ড চালুর পক্ষে ভোট দেন৷ তবে জোট সরকারের এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে লেফট পার্টি এবং সিডিউ/সিএসইউ৷
জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের ক্ষমতাসীন দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস৷ কট্টর ডানপন্থি দল এএফডিরও এমন চেষ্টায় সম্মতি রয়েছে৷
এই কার্ড চালুর পেছনে অন্যতম উদ্দেশ্য এটি নিশ্চিত করা যে, রাষ্ট্র সমর্থিত ব্যক্তিরা এই অর্থ যে কাজে দেয়া হচ্ছে, সে কাজে যেন ব্যবহার করেন৷ যেমন, তাদের সাপ্তাহিক মুদির দোকানের খরচ, কিংবা জার্মানিতে চলার জন্য৷ বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে না।
তাছাড়া এই কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে টাকা পাঠানো যাবে না৷ তবে এই কার্ড দিয়ে খুব সীমিত পরিসরে নগদ অর্থ উত্তোলন করা যাবে৷
আশ্রয়প্রার্থীরা সরকারের দেওয়া অর্থ যেন তাদের পরিবার-পরিজনের বা বন্ধু-বান্ধবের কাছে পাঠাতে না পারেন, কিংবা পাচারকারীদের কাছে পাঠাতে না পারেন সেই ব্যবস্থার অংশ হিসেবেই ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে সরকার৷
আইন প্রণেতাদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আশ্রয় চান এবং যাদের জার্মানিতে সহযোগিতা প্রয়োজন, তাদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে৷ তবে এই কার্ড চালুর বিষয়টি বলছে যে, সামাজিক সুযোগের সুবিধার আওতায় পাওয়া এই অর্থ মানবপাচারকারীদের পাঠানো যাবে না৷
চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এবং জার্মানির ১৬টি রাজ্যের প্রধানেরা এই ব্যবস্থার সাথে গত নভেম্বর থেকেই সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করে আসছেন৷
যদিও পেমেন্ট কার্ড চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আইন প্রয়োজন আছে কিনা এবং এই আইনের কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছে সরকারের একটি অংশ৷
এদিকে হামবুর্গ, বাভারিয়াসহ কিছু রাজ্য এর মাঝে পরীক্ষামুলকভাবে এমন কার্ড চালু করেছে৷
শুক্রবার সংসদের নিম্নকক্ষে ক্ষমতাসীন এসপিডি-গ্রিন-এফডিপির বেশির ভাগ সদস্যই আইনটির পক্ষে ভোট প্রদান করেছে৷ তাছাড়া কট্টর ডানপন্থি দল এএফডিও আইনটি সমর্থন করেছে৷
তবে ক্ষমতার বাইরে থাকা লেফট পার্টি এবং রক্ষণশীল দল সিডিউ/সিএসইউ আইনটির বিপক্ষে ভোট দেয়৷ তারা বলছেন, আশ্রয়প্রার্থীরা যেন ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতিমাসে ৫০ ইউরোর বেশি নগদ ওঠাতে না পারে৷
এদিকে জার্মান প্যারিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আইনটির বিপক্ষে মতামত প্রদান করেছে৷ তারা বলছে, এমন আইন শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার৷
জার্মানির অভিবাসন নীতিতে যেসব পরিবর্তন আসছে
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জার্মানি আরো অনাকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে৷ তবে সহজ হবে দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Uwe Zucchi/dpa/picture alliance
আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘ডিপোর্টেশন’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আগেই জানিয়েছেন, নতুন বছরটি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে৷ ডেয়ার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিসেম্বরে শলৎস বলেছেন, তিনি আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘বড় আকারে ডিপোর্টেশন’ বা প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
প্রত্যাবাসন আইনের পরিবর্তন
সরকারি হিসাবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জার্মানি সাত হাজার ৮৬১ জনকে ডিপোর্ট করেছে৷ ‘প্রত্যাবাসন উন্নয়ন আইন’ নামের একটি বিল পাস হলে সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে৷ এই আইনে আগে থেকে ডিপোর্টেশনের ঘোষণা দেয়ার ইতি টানা হবে, বাড়ানো হবে বন্দি রাখার সময়সীমা৷ সেই সঙ্গে যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের তল্লাশি ও ফোনের মতো ব্যক্তিগত সম্পত্তি জব্দের বাড়তি ক্ষমতা পাবে পুলিশ৷ অপরাধীদের ক্ষেত্রে ডিপোর্ট আরো দ্রুত হবে৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
‘নিরাপদ দেশ’-এর সংখ্যা বাড়বে
যেসব দেশে তেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই তাদেরকে ‘নিরাপদ দেশ’ এর তালিকায় রাখে সরকার৷ এসব দেশের নাগরিকেরা আশ্রয়ের জন্য কম বিবেচিত হন এবং দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়৷ এমন দেশের সংখ্যা বাড়াতে চায় জার্মানি৷ সবশেষ নভেম্বরে এই তালিকায় ঢুকেছে জর্জিয়া ও মলডোভা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের একটি চুক্তি পুনর্নবায়ন হলে দেশটির আশ্রয়প্রার্থীদেরও দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে৷
ছবি: Alexander Pohl/NurPhoto/picture alliance
আশ্রয় প্রক্রিয়ায় গতি
আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চায় জার্মানি৷ বর্তমানে একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই বছরের বেশি পর্যন্ত সময় লাগে৷ প্রস্তাবিত আইনে তা তিন মাস থেকে ছয় মাসে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷ আশ্রয় আবেদনকারীদের ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধাগুলোও কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ বর্তমানে ১৮ মাস পরে ‘কল্যাণভাতা’ পাওয়া যায়, যা তিন বছর পর মিলবে৷ রাষ্ট্রীয় আবাসনে যারা থাকবেন তাদের খাবার খরচ কেটে নেয়া হবে৷
ছবি: DW
‘ক্যাশ’-এর বদলে কার্ড
ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাশ বা অর্থ প্রদানের বদলে কার্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য, যাতে তারা পরিবারকে বা অন্য কাউকে অর্থ পাঠাতে না পারে৷ হ্যানোফার গত ডিসেম্বরে ‘সোশ্যাল কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছে৷ পূর্বের রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়াও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য কার্ড ইস্যু করেছে৷ ২০২৪ সালে এই ব্যবস্থা চালু করবে হামবুর্গ ও বাভারিয়াও৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/piture alliance
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিবাসন
মার্চ থেকে বিদেশিরা দক্ষতার ভিত্তিতে সরাসরি জার্মানিতে এসে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন৷ আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্য আনার প্রক্রিয়াও সহজ হবে৷ ব্যয় বহনের সামর্থের প্রমাণ দিতে পারলে কর্মীরা তাদের উপর নির্ভরশীলদের নিয়ে তিন বছরের বসবাসের অনুমতি পাবেন৷ কিছু দেশের জন্য বিশেষ অভিবাসন কোটার সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ যেমন জুনে বলকান দেশগুলোর জন্য এই সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি করে ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে৷