আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় দেশে পাঠাতে চায় জার্মানির সিডিইউ
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
জার্মানির রক্ষণশীল বিরোধী দল দেশটিতে আশ্রয় প্রার্থনা করা অভিবাসীদের যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মডেল অনুসরণ করে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে চায়৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এমন পরিকল্পনা বিষয়ে দ্বিধান্বিত৷
বিজ্ঞাপন
রক্ষণশীল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন - সিডিইউ ডিসেম্বরের শুরুতে 'বেসিক প্রিন্সিপলস প্রোগ্রাম' নামে একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেছে৷ এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করা অভিবাসীদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো হবে৷ ২০২৪ সালে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত রূপ পেতে পারে৷
খসড়াটি প্রকাশের পর সিডিইউ এর আইনপ্রণেতা ইয়েন্স স্পান দাবি করেছেন, এমন পরিকল্পনা জার্মানিতে 'অনিয়মিত অভিবাসন’ ব্যাপক হারে কমিয়ে দেবে৷ বড়দিনের আগে নয়ে ওসনাব্র্যুকার সাইটুংকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি এই কাজ চার, ছয় বা আট সপ্তাহ ধরে চালু রাখতে পারি, তাহলে (আশ্রয়প্রার্থনার) এই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাবে৷
স্পান বলেন, এই পরিকল্পনার ফলে অভিবাসীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নিরুৎসাহিত হবেন৷ অনেক দেশই আশ্রয়প্রার্থীদের প্রক্রিয়াকরণে রাজি হবে বলেও ধারণা তার৷ স্পান বলেন, ‘‘সম্ভবত রুয়ান্ডা রাজি হবে৷ ঘানাও রাজি হতে পারে৷ আমাদের এ বিষয়ে জর্জিয়া এবং মলডোভার মতো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গেও কথা বলা উচিত৷''
রুয়ান্ডার সঙ্গে এমন একটি চুক্তি ২০২২ সালে করেছিল যুক্তরাজ্য৷ তবে এ বছরের নভেম্বরে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট 'অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠালে তারা দুর্ব্যবহারের শিকার হতে পারেন' বলে উল্লেখ করে এই চুক্তি স্থগিতের পক্ষে রায় দেয়৷ আদালত মনে করে রুয়ান্ডার আশ্রয়ব্যবস্থা সুষ্ঠু এবং মানবিক কিনা, তা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই৷
জার্মানিতে অভিবাসন: কে, কেমন সুবিধা পাচ্ছে?
জার্মানিতে শরণার্থীরা কী ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পান তা নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের বক্তব্য দেন রাজনীতিবিদরা৷ এই নিয়ে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়৷ চলুন জেনে নেই এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য৷
ছবি: Bodo Schackow/dpa/picture alliance
স্বাস্থ্যসেবা
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা শুধুমাত্র অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা এই দাঁতের চিকিৎসা পেয়ে থাকেন৷ এধরনের সেবা বলতে শারীরিক আঘাত পাওয়ার মতো ব্যাপার বোঝানো হয় যার চিকিৎসা হাসপাতালে হয়ে থাকে৷ জার্মানির সমাজ কল্যাণ দপ্তর সেই সেবার খরচ বহন করে৷
ছবি: picture alliance/dpa/I. Wagner
রাজ্যভেদে নিয়ম আলাদা
জার্মানির ষোলো রাজ্যে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ তবে অধিকাংশ রাজ্যে, আশ্রয়প্রার্থীরা চিকিৎসা নেয়ার আগে সমাজ কল্যাণ দপ্তর থেকে সেটির অনুমতি নিতে হয়৷
ছবি: Paul Zinken/dpa/picture alliance
নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা
তবে, জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেলে কিংবা আশ্রয় মঞ্জুর হয়ে গেলে তখন সেই ব্যক্তি নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন, যার খরচ সংবিধিবিদ্ধ স্বাস্থ্য বিমা তহবিল থেকে আসে৷ কসমেটিক সার্জারির খরচ স্বাস্থ্যবিমা বহন করে না৷
ছবি: Friso Gensch/dpa/picture alliance
প্রাথমিক আশ্রয় ও আবাসন
জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীরা শুরুতে বিভিন্ন প্রাথমিক অভ্যর্থনাকেন্দ্রে থাকার সুযোগ পান৷ এগুলোতে সাধারণত অনেক মানুষ একত্রে থাকেন৷ সেখানে রুম শেয়ার করে থাকতে হয়৷ তবে সেখানে নিজেদের রান্নাবান্না করার আয়োজন থাকার পাশাপাশি সব বেলা খাবার সরবরাহও করা হয়৷ এসব কেন্দ্রে কয়েক সপ্তাহ থেকে ১৮ মাস অবধি থাকতে হতে পারে৷
ছবি: Patrick Pleul/picture alliance/dpa
আশ্রয়প্রার্থীদের ছড়িয়ে দেয়া হয়
অভ্যর্থনাকেন্দ্র থেকে আশ্রয়প্রার্থীদেরকে একপর্যায়ে বিভিন্ন শহরে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ এসবকেন্দ্রে কয়েক ডজন থেকে কয়েকশত মানুষ একত্রে থাকেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
আর্থিক সহায়তা
একজন আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে সাধারণত প্রয়োজনীয় সবকিছু পেয়ে থাকেন৷ এসবের মধ্যে রয়েছে, খাবার, থাকার ব্যবস্থা, হিটার, পোশাক, প্রসাধনী, এবং গৃহস্থলিতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য৷ পাশাপাশি একক ব্যক্তিরা পকেট খরচ হিসেবে মাসে ১৫০ ইউরো অবধি পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তবে ব্যতিক্রমও আছে
যদি আশ্রয়প্রার্থীকে খাদ্য, পোশাক এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ সম্ভব না হয়, তখন তাকে প্রতিমাসে সেসবের জন্য প্রতিমাসে ৩৬৭ ইউরো দেয়া হয়৷ পাশাপাশি তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারেন৷ কিন্তু সেজন্য মাসে ২০০ ইউরোর বেশি নিতে পারবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
জার্মান রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে৷ এ নিয়ে বিতর্কও দেখা দেয়৷ কারণ, সেখানে অতিরঞ্চিত তথ্যও থাকে৷ ডয়চে ভেলে তাই এধরনের কিছু তথ্য যাচাই করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
8 ছবি1 | 8
একইপথেডেনমার্কও
আদালতের রায়ের পরও অবশ্য ব্রিটিশ সরকার রুয়ান্ডা পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি৷ বরং কিছু সংশোধন করে রুয়ান্ডার সঙ্গে নতুন এক চুক্তি সই করেছে ব্রিটিশ সরকার৷ ব্রিটেন অবশ্য এরই মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রুয়ান্ডাকে ২৪০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা) দিয়েছে৷ আগামী বছর দেয়ার কথা রয়েছে আরো ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৭০০ কোটি টাকা)৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত একজন অভিবাসীকেও সেখানে পাঠানো হয়নি৷
অন্য নানা সমস্যার পাশাপাশি ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট এটাও জানিয়েছে যে, ২০১৩ সালে রুয়ান্ডার সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করেছিল ইসরায়েল৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার চুক্তিটি করার আগে আগের সেই চুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখেনি৷
ডেনমার্কও একই ধরনের পরিকল্পনা করতে রুয়ান্ডার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে একা নয়, বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে এমন চুক্তি করতে চায় ডেনমার্ক৷ গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে৷ পরিকল্পনা অনুসারে আশ্রয়প্রার্থীদের ইউরোপের সীমান্তেই যাচাইবাছাই করা হবে৷ আবেদন খারিজ হলে তাদের সেখান থেকেই ফেরত পাঠানো হবে৷
অভিবাসন নিয়ে তথ্যচিত্র- ভূ'মৃত্যু'সাগরের ওপারে
31:43
আশ্রয়পরিকল্পনা 'অর্থবহপরিবর্তনআনতেপারবেনা'
আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন ভিনদেশে প্রক্রিয়া করার পরিকল্পনা নতুন নয়৷ জার্মানির মধ্যবামপন্থি সরকার ২০২১ সালে জোট সরকারের রূপরেখায় 'বিশেষ ক্ষেত্রে অভিবাসীদের আবেদন যাচাই তৃতীয় দেশে প্রক্রিয়া করার বিষয়টি শরণার্থী কনভেনশন এবং ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা' তা যাচাই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷
এই লক্ষ্য অর্জনে নানা মডেল নিয়ে আলোচনা চলছে৷ তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা এর মধ্যে আইনগত এবং কাঠামোগতভাবে সবচেয়ে কম কার্যকর হবে৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি অপেক্ষাকৃত বাস্তবসম্মত মডেল পাওয়া গেছে ইটালি এবং আলবেনিয়ার মধ্যে হওয়া চুক্তি থেকে৷ এই চুক্তির আওতায় ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় নেয়া হবে৷ সেখানে অবস্থান করে তারা ইউরোপে আশ্রয় আবেদন করবেন৷
এই চুক্তির নৈতিকতা এবং আইনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ তবে কিছু বিষয়ে শর্তও রাখা হয়েছে চুক্তিটিতে৷ যেমন, নারী, শিশু এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এই চুক্তি খাটবে না৷ যেসব অভিবাসীকে ইটালির জলসীমা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তারাও এই চুক্তির আওতায় পড়বেন না৷ আলবেনিয়ায় গিয়ে যারা আশ্রয় আবেদন করার সুযোগ পাবেন, তাদের আবেদনও ইইউ এর আশ্রয় আইন মেনেই যাচাই করা হবে বলেও জানিয়েছেন ইটালির কর্মকর্তারা৷
আশ্রয় আবেদন গ্রহণ বা খারিজ, যাই হোক না কেন, আবেদন প্রক্রিয়া নিষ্পত্তির পর অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়া হবে ইটালিতে৷ আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হওয়া অভিবাসীরা ইটালিতে থাকবেন, খারিজ হওয়াদের ইটালি থেকে ফেরত পাঠানো হবে৷
কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু দ্বিধা রয়েছে৷ ইটালির রবার্ট শুমান সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ এর অভিবাসন নীতি বিষয়ক গবেষক লরেঞ্জো পিকোলি এর মতে, ‘‘এই পরিকল্পনার কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷ কারণ এটি অনেক ব্যয়বহুল এবং খুব কম মানুষের ক্ষেত্রেই এটি কাজে লাগবে্৷''
২০১৮ সালে ইউরোপীয় কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইইউ এর বাইরে ইইউ এর আইন কার্যকর করা যাবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ ফলে ইটালির দাবি অনুযায়ী আলবেনিয়াতে ইইউ এর আইন কার্যকর নাও হতে পারে৷
দ্বিতীয়ত, এটাও স্পষ্ট নয় যে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইটালি কিভাবে অভিবাসীদের আলাদা করে কাউকে আলবেনিয়া পাঠাবে, কাউকে ইটালি নিয়ে আসবে৷
তৃতীয় দেশে আশ্রয় আবেদন যাচাইয়ের আরেকটি পদ্ধতি এখনই কার্যকর রয়েছে৷ ইউএনএইচসিআর-এর রিসেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম এর আওতায় ট্রানজিট দেশেই (যেমন জর্ডান) আবেদন যাচাই করা হয়৷ আবেদন মঞ্জুর হলে ইউএনএইচসিআর সেই অভিবাসীকে কোন দেশ নিতে রাজি হয়, তা খোঁজার দায়িত্ব নেয়৷ এই শেষ ধাপেই তৈরি হয় জটিলতা৷
ইউরোপে বৈধ অভিবাসন: যে তথ্যগুলো জানা দরকার
উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা, আশ্রয়- নানা কারণেই অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য ইউরোপ৷ প্রতিবছর অনেক মানুষ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে বসবাস ও কাজের সুযোগ পান৷ অন্যদিকে অবৈধভাবে আসা বড় একটি অংশকে ফেরতও পাঠানো হয়৷
ছবি: DW/Ani Ruci
অভিবাসীর সংখ্যা
দুই কোটির বেশি অভিবাসী মানুষের বসবাস ইউরোপের ২৭টি দেশে৷ এ অঞ্চলের শ্রমবাজারে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৮ লাখ৷ ২০১৯ সালে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে প্রথমবার রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়া তৃতীয় দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
কারা অনুমতি পান
৩৮ ভাগ অভিবাসী রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছেন পরিবারের কোনো সদস্য ইউরোপে থাকার কারণে৷ কাজের সূত্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ১৭ ভাগ৷ আশ্রয়াপ্রার্থী ছিলেন নয় ভাগ৷ শিক্ষাগত কারণে সুযোগ পেয়েছেন চার ভাগ৷ বাকি ৩২ ভাগ অন্যান্য৷
ছবি: Wolfgang Kumm/dpa/picture alliance
অভিবাসীদের দেশ
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রেসিডেন্স পারমিট পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ইউক্রেনের নাগরিক৷ প্রথম দশের মধ্যে বাকিরা যথাক্রমে মরক্কো, চীন, ব্রাজিল, সিরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও বেলারুশের নাগরিক৷
ছবি: DW/V. Muscella
কর্মসংস্থান
তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ইউরোপে চাকুরি নিয়ে আসা দক্ষ কর্মীরা পান ব্লু কার্ড৷ এটি নির্ভর করে চাকরির চুক্তিপত্র, পেশাগত যোগ্যতা ও বেতনের উপরে৷ ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি নাগরিক ব্লু কার্ড পেয়েছেন ইউরোপে৷ এর বাইরে প্রতি বছর এক লাখের বেশি মানুষ মৌসুমি কর্মী হিসেবে বিভিন্ন খাতে কাজের জন্য আসেন৷ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার কর্মী বা স্বনিয়োজিত কাজেও ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পান অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
পারিবারিক পুনর্মিলন
কোনো অভিবাসী ইউরোপে বৈধভাবে বসবাস ও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদেরও আনতে পারেন৷ স্বামী বা স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত সঙ্গী, প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল সন্তান, নির্ভরশীল বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিও অনুমতি পেয়ে থাকেন৷ নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর তাদেরকে রেসিডেন্স পারমিট নিতে হয়৷ শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রশিক্ষণও নিতে পারেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/W. Rothermel
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
এজন্য আগ্রহীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অনুমতি, হেলথ ইন্সুরেন্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের অনুমতি, কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে ইউরোপের কোনো দেশে আসার আবেদন করতে পারেন৷ কিছু দেশে পড়াশোনার টিউশন ফি নেই, আছে বৃত্তির সুযোগও৷ এছাড়াও খরচ মেটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রয়েছে৷ পড়াশোনা বা গবেষণা শেষে কর্মসংস্থানের জন্য মেলে নয় মাস সময়৷
ছবি: Getty Images/J. Juinen
দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স
ইউরোপের কোনো দেশে টানা পাঁচ বছর অবস্থানের পর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অভিবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন৷ এর ফলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়তা এবং পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির মতো কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপের নাগরিকদের মতোই অধিকার ভোগ করতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে আলাদা অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি অনুসরণ করে আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
আশ্রয়প্রার্থী
২০১৯ সালে প্রায় সাত লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷ প্রথমবারের মতো যারা এমন আবেদন করেছেন, তাদের ১২ ভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ আফগানিস্তানের আট দশমিক ছয় ভাগ, ভেনেজুয়েলার সাত দশমিক এক ভাগ, কলম্বিয়ার পাঁচ ভাগ, পাকিস্তানের ছিলেন প্রায় চার ভাগ৷ ঐ বছর দুই দশমিক এক ভাগ বা ১৩ হাজার ১৯০টি আবেদন পড়েছিল বাংলাদেশিদের৷ ২০২০ সালে প্রথম দশ মাসে ইউরোপে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷
ছবি: AFP
অবৈধদের ফেরত
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জন অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন৷ এটি তার আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ১০ ভাগ কম৷ যারা এভাবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশকে এক পর্যায়ে ফেরত পাঠানো হয়৷ ২০১৯ সালে চার লাখ ৯১ হাজার জনকে ইউরোপ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ এক লাখ ৪২ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Papaniko
9 ছবি1 | 9
ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় ১৪ লাখ মানুষের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে্৷ এদের মধ্যে কোনো দেশে আশ্রয় পেয়েছেন কেবল ৬৩ হাজার৷ ২০২৩ সালে সেটেলমেন্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি৷
পিকোলি মনে করেন, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়, বরং রাজনৈতিক৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা দেখাতে চায় যে তারা আশ্রয়প্রার্থীদের পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে চাচ্ছে৷ আর এর মাধ্যমে তারা নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়৷''
পিকোলি বলেন, ‘‘বাস্তবে আমরা যুক্তরাজ্য এবং রুয়ান্ডার চুক্তি থেকে দেখলাম, এই ধরনের প্রস্তাবগুলো আইনসম্মত নয় এবং যারা আসবেন, তাদের সংখ্যাতেও কোনো অর্থবহ পরিবর্তন আনবে না৷''