জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউট ইমোশন রিকগনিশন নিয়ে কাজ করছে৷ ফেসিয়াল রিকগনিশনের মতো এই প্রযুক্তিও ভবিষ্যতে নজরদারিতে ব্যবহৃত হতে পারে৷
ছবি: Axel Bueckert/Zoonar/picture-alliance
বিজ্ঞাপন
একেক মানুষ একেকভাবে মনের ভাব প্রকাশ করে৷ তাই একই আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে একেকজনের মুখের অভিব্যক্তি একেকরকম হয়৷ জার্মানির ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে এসব অভিব্যক্তি চেনার সফটওয়্যার তৈরির চেষ্টা করছে৷ কিন্তু সব সংস্কৃতির মানুষই কি একইভাবে রাগ, ভালো লাগা প্রকাশ করে?
ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউটের ইয়েন্স গারবাস বলেন, ‘‘মুখের অনেক অভিব্যক্তি দেখে আবেগ বোঝা যায়৷ যেমন পেশীর নড়াচড়া, হাসি, রাগ, দুঃখ ইত্যাদি৷ বেশিরভাগ সংস্কৃতিতে বিষয়টা একই৷ মানুষ হিসেবে আমি মুখ দেখে যতটা আবেগ বুঝতে পারি সেটা সফটওয়্যারকেও শেখানো যায়৷ এবং এক্ষেত্রে সফলতার হার অনেক বেশি৷''
ফ্রাউনহফারের বিজ্ঞানীরা মুখের অভিব্যক্তির ছবি দিয়ে সফটওয়্যারকে প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু এটা প্রয়োজন কেন?
গারবাস বলেন, ‘‘একটা সাধারণ ব্যবহার হচ্ছে মেশিন ও মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময়৷ যেমন এর মাধ্যমে সোশ্যাল সিগন্যাল ও মুখের অভিব্যক্তি সম্পর্কে অটিস্টিক শিশুদের প্রশিক্ষণ দিতে রোবটকে ব্যবহার করা যায়৷ এছাড়া গাড়ি চালানোর সময়ও এর ব্যবহার আছে৷ চালকের মানসিক অবস্থা বোঝা, তিনি বেশি চাপে আছেন কিনা, কোনো কিছু নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে আছেন কিনা, তা বোঝা যেতে পারে৷’’
ইয়েন্স গারবাস বলেন, ‘‘এই প্রযুক্তি দিয়ে মানুষের উপর নজর রাখা, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে৷ তাই এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি৷ সেটা তখনই সম্ভব যখন আমরা ভালোভাবে জানবো যে, এটা দিয়ে কী করা যায়, আর কী যায় না৷ এছাড়া প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে থাকাটাও জরুরি৷’’
তাদের সফটওয়্যার দিয়ে এখনও নজরদারি করা হচ্ছে না বলে জানান ফ্রাউনহফারের বিজ্ঞানীরা৷
ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এখন সেটা দিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে৷
ভবিষ্যতে ইমোশন রিকগনিশন প্রযুক্তি কাজ শুরু করলে মানুষের আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে৷
আইটি বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক মার্কুস বেকেডাল বলেন, ‘‘তখন আমরা ভাব প্রকাশে আরো সতর্ক হবো৷ ফলে স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশ করতে পারবো না৷ সবসময় মনে হবে আমাদের কেউ দেখছে৷ সুতরাং হাসো৷ নইলে ভবিষ্যতে এই ছবি তোমার বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে৷ ইতিমধ্যে চীনে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া শুরু করেছে৷ আমার আশা, জার্মানিতে যেন কখনও এমন অবস্থা তৈরি না হয়৷’’
চীনে ব্যাপকভাবে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে৷ উদ্দেশ্য মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখা৷
হলিউডের মাইনোরিটি রিপোর্ট মুভিতে ২০ বছর আগে যা দেখানো হয়েছে এখন সেটা বাস্তবে চলে এসেছে৷ টম ক্রুজ যেমন নজরদারির মধ্যে ছিলেন, এখন চীনে সেটা হচ্ছে৷ অর্থাৎ আমরা যতটা ভাবছি, ভবিষ্যৎ তার চেয়েও কাছে চলে এসেছে৷
টোমাস হিলেব্রান্ডট/জেডএইচ
জার্মানিতে ভিডিও নজরদারি বিতর্ক
বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তার খাতিরে ভিডিও নজরদারি যন্ত্র ব্যবহার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী৷ জার্মানিতেও স্বল্পমাত্রায় চালু আছে এমন ব্যবস্থা৷ কিন্তু চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
ভিডিও নজরদারি
জার্মানির বিভিন্ন রেল স্টেশনে ভিডিও নজরদারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে অনেক দিন থেকেই৷ তবে তার পরিসর বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার৷ ২০২৪ সালের মধ্যে প্রধান সব রেল স্টেশনগুলোকে এই ধরনের নজরদারির আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ শুধু সিসি ক্যামেরা দিয়েই নয় তার সাথে চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও যোগ করতে চান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schreiber
চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি
বার্লিনের সুডক্রয়েজ রেল স্টেশনে সম্প্রতি চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প শেষ হয়েছে৷ এই স্টেশন ব্যবহারকারী ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী এক বছরের জন্য তাদের চেহারা শনাক্ত করার অনুমতি দেয় সরকারকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schreiber
যেভাবে শনাক্ত করা হয়
প্রকল্পটি শুরুর আগে স্বেচ্ছাসেবীদের ছবি পুলিশের ডেটাবেজে দেয়া হয়েছে৷ ট্রেন স্টেশনে বসানো ক্যামেরা যখনই তাদের চিহ্নিত করে সেই তথ্য পুলিশের কাছে চলে যায়৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
কতটা সঠিক?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রযুক্তিটি ৮০ ভাগ সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম হয়েছে৷ অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি ৫ জনের চারজনকে শনাক্ত করতে পারছে সিস্টেমটি৷ অন্যদিকে এক হাজার জনে একজনকে ভুলভাবে শনাক্ত করেছে এই সফটওয়্যার৷
ছবি: DW/J. Chase
ভুলের মাশুল
প্রযুক্তিটির ভুলের সংখ্যা কম হলেও তা নিয়ে উদ্বেগ আছে৷ কেননা শতভাগ নির্ভুল না হলে যেকোন একজন নিরপরাধী ব্যক্তিও হয়রানির শিকার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগ্রহী পুলিশ
জার্মানির পুলিশ চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে৷ ফেডারেল পুলিশ বিভাগের প্রধান ডিয়েটার রোমান মনে করেন, এর ফলে বিশেষ পুলিশি অভিযান ছাড়াই দ্রুত অপরাধীকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে, যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় অর্জন হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Sparta
আইনি বাধা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আগ্রহ থাকলেও জার্মানিতে এখনই চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার চালু করা সম্ভব না৷ কেননা এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির ভিডিও নজরদারি ব্যবস্থা চালুর জন্য এখনও আইনী কাঠামো নেই দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/picturedesk/H. Ringhofer
আদালতের রায়
আইনি কাঠামো না থাকলেও আদালতের সাম্প্রতিক একটি রায় অবশ্য পুলিশের পক্ষে গেছে৷ গত বুধবার হামবুর্গের প্রশাসনিক আদালত ২০১৭ সালে জি টুয়েন্টি সম্মেলনের বিক্ষোভে অংশ নেয়াদের ছবির বিতর্কিত তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণের অনুমতি দিয়েছে পুলিশকে৷ স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেহারা শনাক্তকরণ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঐ ঘটনায় সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করে৷
ছবি: picture-alliance /dpa/B. Thissen
উদ্বেগও আছে
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন নেতারা এ ধরনের প্রযুক্তির পক্ষে যেমন আছেন তেমনি বিপক্ষে থাকা রাজনীতিবিদের সংখ্যাও কম নয়৷ পুলিশ ও গোয়ান্দা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট ছবি অনুসন্ধানের বিষয়ে গত জুলাইতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে বেসরকারি সংগঠন সোসাইটি ফর সিভিল রাইটস৷