আগামীতে সরকারি চাকরিজীবীদেরও ডোপ টেস্ট করাতে হবে৷ কবে থেকে তা শুরু হবে এখনো জানা যায়নি৷ পুলিশে এ কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চলছে৷ তাতেই এ পর্যন্ত চাকরি হারিয়েছেন ৩০ জন৷
বিজ্ঞাপন
আগামীতে সরকারি চাকরিজীবীদেরও ডোপ টেস্ট করাতে হবে৷ কবে থেকে তা শুরু হবে এখনো জানা যায়নি৷ পুলিশে এ কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চলছে৷ তাতেই এ পর্যন্ত চাকরি হারিয়েছেন ৩০ জন৷
বাংলাদেশ পুলিশে ডোপ টেস্ট শুরু হয়েছে গত বছর থেকেই৷ এখন সরকারি সব ধরনের চাকরিতে কর্মরতদের ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও ডোপ টেস্টের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট৷
ফারুক হোসেন
পুলিশে গত বছরের জুন থেকে ডোপ টেস্ট শুরু হয়৷ এ পর্যন্ত ডোপ টেস্ট করে ১০০ জন পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৩০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে৷ বাকিদের সাসপেন্ড, পদাবনমনসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ তবে যাদের এই টেস্টের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তারা রয়েছেন৷ এরা সবাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-র কর্মকর্তা৷ সিনিয়র কর্মকর্তাদের গণনজরদারি ও অভিযোগের মাধ্যমে ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হয়৷ কিন্তু এরই মধ্যে নজরদারির মাধ্যমে সাধারণ ডোপ টেস্ট বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা পজিটিভ ইস্যু থেকে এটা শুরু করেছিলাম৷ কিন্তু এটা নিজেদের মধ্যে নেগেটিভলি প্রতিফলিত হয়৷ এই কারণে আমরা গড়ে টেস্ট করা বন্ধ করে দিয়েছি৷ এখন আর এটা চলে না, সীমিত আকারে আছে৷ যদি কোনো ডিভিশন থেকে কারো অ্যাটিচুড সমস্যা বা সন্দেহজনক মুভমেন্টের অভিযোগ পাই, তাহলে তার ডোপ টেস্ট করা হয়৷’’
গত ১৭ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ‘‘মাদককে নিরুৎসাহিত করতে সরকারি চাকরিতে ঢোকার সময় এবং বছরে একবার সরকারি চাকরিজীবীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হবে৷''
তবে এই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এখনো হয়নি৷ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন৷ ওখানেই যা বলার বলে দিয়েছেন৷ উনি বলার পর তো আমি কিছু বলতে পারি না৷ পরবর্তী অগ্রগতি সম্পর্কে এখন আমার জানা নেই৷ অফিসে গেলে হয়ত বলতে পারবো৷ আমার মনে নেই৷’’
ডা. টিটু মিয়া
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ডোপ টেস্টের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিটু মিয়াকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত পজিটিভ৷ এখন দেখতে হবে এটা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা আছে কিনা৷ আমরা এই সপ্তাহেই একটি বৈঠক করবো, যারা ডোপ টেস্ট করছে তাদের সাথেও আমরা যোগাযোগ করছি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেডিকেল সেন্টার আছে, সেখানে লোকবল বাড়ানো যায়৷ যন্ত্রপাতি কিনতে হবে৷ তাই এটা কবে শুরু করা যাবে তা বলা যাচ্ছে না৷’’
তিনি জানান, ‘‘আপাতত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত হলো সব ছাত্রের ডোপ টেস্ট করা এবং প্রতি বছর করা৷’’
এদিকে পিএসপির চেয়ারম্যান শাহজাহান আলি মোল্লা বলেন, ‘‘বিসিএস এবং অন্যান্য নন-ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগের ব্যাপারে ডোপ টেস্টের ব্যাপারে আমরা কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি৷ পেলে ডোপ টেস্ট করবো৷ এখন শুধুমাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিধান আছে৷’’
পুলিশের চলতি ডোপ টেস্টে যারা যারা পজিটিভ হয়েছেন তাদের মধ্যে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের মতো মাদকে আসক্তরা আছেন৷ আর করোনার মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ৪৫ জন মাদকাসক্ত ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তারা ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের পাশাপাশি আইস ও এলএসডির মতো মাদকে আসক্ত৷
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের যত অভিযান
মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে৷ সেই সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হওয়া মাদকের পরিমাণও বাড়ছে৷ পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও তুলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ ছবিঘরে বিস্তারিত..
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাদক চোরাচালান
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদক চোরাচালানের পরিমাণ বাড়ছে৷ সরকারের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটককৃত মাদকের পরিমাণ ও এর সাথে জড়িতদের সংখ্যা তার আগের বছরগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে৷
ছবি: AFP
বেড়েছে ইয়াবা
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ২০১৯ সালে এর পরিমান ছিল তিন কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার পিস। ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে করোনার বছরে বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।
ছবি: Getty Images/Afp/Y. A. Thu
গাঁজা আটকও বাড়ছে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালেদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ৩৯ হাজার নয়শ ৬৮ কেজি গাঁজা আটক করে৷ ২০২০ সালে আটকের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার দুইশ ৭৯ কেজি৷
ছবি: Fadel Senna/AFP/Getty Images
হেরোইন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২০১৫ সালে একশ সাত দশমিক ৫৪ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে৷ ২০২০ সালে উদ্ধারের পরিমাণ ছিল দুইশ ১০ দশমিক ৪৪ কেজি৷
ছবি: Bulgarian Prosecutor's Office/picture-alliance/AP
সরকারের বিশেষ অভিযান
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার ২০১৮ সালের মে মাসে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে৷ বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ‘সাড়াশি অভিযান’ চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
হাজার হাজার আটক
মাদকবিরোধী এ অভিযান শুরুর প্রথম দুই মাসের মাথায় প্রায় ২৫ হাজার মামলা দায়ের হয়৷ এসব মামলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি লোককে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো৷
ছবি: bdnews24.com/A. Al Momin
শতাধিক আত্মসমর্পন
অভিযান চলার সময় মাদকব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পনের সুযোগ দেওয়া হয়৷ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ১০২জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করেন৷
ছবি: Getty Images/Afp
সমালোচনায় মাদকবিরোধী অভিযান
এদিকে অভিযানের প্রায় পুরোসময় জুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের খবর পাওয়া যায়৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, এ সময় ‘৪৬৬ জন বিচারবহির্ভূত’ হত্যার শিকার হয়৷ বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার৷
ছবি: bdnews24.com
কতটা সফল মাদকবিরোধী অভিযান?
কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও তাদের বিচারের আওতায় না আনার অভিযোগ ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলেরই এক কাউন্সিলরের মৃত্যুর পর প্রশ্নের মুখে পড়ে অভিযান৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অভিযানে সময়িকভাবে ঠেকানো গেলেও মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
বাড়ছে মাদকাসক্ত রোগীর সংখ্যা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানায়, ২০১৯ সালে ১১৪জন রোগী সরকারি-বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০৪ জন আর ২০১৭ সালে ৬৯জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Buchanan
নতুন মাদকের আবির্ভাব
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল৷ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডি নামের এক মাদকের সন্ধানও পায় গোয়েন্দা বিভাগ৷ পুলিশের দাবি, রাজধানীতে ১৫টি গ্রুপ রয়েছে, যারা এক বছর ধরে এলএসডি বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত৷