সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমের ইদলিব অঞ্চলে আসাদবাহিনীর আক্রমণে কোণঠাসা বেসামরিক নাগরিক ও বিদ্রোহীরা৷ রাশিয়াকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধের কথা ট্রাম্পকেও জানিয়েছেন ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টেফেন সাইবার্ট জানিয়েছেন গত সপ্তাহে বার্লিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সাথে বৈঠকে সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে ইদলিবে হামলা বন্ধে বাধ্য করার অনুরোধও পুটিনকে করেছেন ম্যার্কেল৷
সাইবার্ট সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনালাপে পুটিনের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি জানিয়েছেন ম্যার্কেল৷ তিনি জানান, ‘‘সিরিয়ার সরকারকে চাপ দিয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়া ঠেকাতে রাশিয়াকে অনুরোধ করা হয়েছে৷''
আসাদ ২০১৫ সালে রুশ সামরিক সহায়তায় বিদ্রোহীদের দখল থেকে সিরিয়ার বিশাল এলাকা পুনরুদ্ধার করেছেন. বর্তমানে দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল সরকারি বাহিনীর দখলে৷
সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদুল্লাহ আইয়ুব রোববার জানিয়েছেন যে, আসাদ ইদলিবের দখল নিতে বদ্ধপরিকর৷ আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব পাশে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতেই সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র চাপ প্রয়োগ করছে বলেও তাঁর অভিযোগ৷
এদিকে শুক্রবারও মস্কো সফরে গিয়ে সিরিয়াকে ইদলিবে ‘সেনা আক্রমণের' ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট চাভুসোগলু৷ প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ আটকে পড়েছেন তুরস্কের সীমান্তবর্তী সিরীয় শহর ইদলিবে৷ ইদলিবে বেশকিছু বিদ্রোহী গ্রুপকে সহায়তা করে তুরস্ক৷ সেখানে বেশ কয়েকটি সামরিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন আছে দেশটির৷ অন্যদিকে ইদলিবের দক্ষিণ-পূর্বের অংশ আছে আসাদবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে৷
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সুনর্দিষ্ট মন্তব্য জানা না গেলেও শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মন্তব্য অনেকটাই স্পষ্ট করেছে দেশটির অবস্থান৷ তাঁর আশংকা, ইদলিবে বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘সন্ত্রাসীরা'৷
সিরিয়া সংকট নিরসনে আসছে সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির সঙ্গে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছে একটি তুর্কি টেলিভিশন৷ ইরানের তিবরিজে বৈঠকটি হওয়ার কথা৷
শীতল যুদ্ধ কি ফিরে আসছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বার্লিন প্রাচীর পতনের সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলেছে৷ সিরিয়াসহ আরও কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে সংঘাত বেড়ে চলেছে৷
ছবি: AP
শীতল যুদ্ধের চরিত্র
শুধু দুটি পরাশক্তি নয়, পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত দুই শিবির যে কোনো সময়ে একে অপরের উপর হামলা চালাতে পারে৷ অথচ বাস্তবে সেরকম হামলা অথবা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে একটি কাঠামো সফলভাবে কাজ করেছে৷ ‘শান্তিপূর্ণ’ সেই সহাবস্থানে আঁচ পড়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wieseler
উত্তেজনা সত্ত্বেও ‘স্থিতিশীলতা
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে সামরিক জোট ন্যাটো ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ জোট আজকের দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট স্থিতিশীল ছিল৷ রাতারাতি কোনো আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনাও ছিল অকল্পনীয়৷ এমনকি জোটের বাইরেও ওয়াশিংটন ও মস্কোপন্থি দেশগুলির অবস্থান সহজে বদলায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শান্তির ‘অলীক’ প্রত্যাশা
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর রাশিয়া তথা পূর্ব ইউরোপে প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তনের ফলে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বৈরি মনোভাবের চূড়ান্ত অবসান ঘটবে, এমন আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো প্রায় রাশিয়ার দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছে যায়৷ খোদ রাশিয়াকেও পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে গণ্য করা হতে থাকে৷
ছবি: Reuters/Axel Schmidt
‘দুর্বল রাশিয়া’
মিখাইল গর্বাচভ ও বরিস ইয়েলৎসিন শীর্ষ নেতা হিসেবে রাশিয়ার গৌরব খর্ব করে সে দেশের পতন তরান্বিত করেছেন, অনেক মানুষের মনে এমন অভিযোগ রয়েছে৷ ভ্লাদিমির পুটিন সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট সফল হয়েছেন বলে মনে করেন তাঁরা৷ রাশিয়ার স্বার্থ জোরদার করতে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতেও ভয় পান না, এমন ধারণা তাঁকে ক্রমশ আরও শক্তিশালী করে তুলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP/SZ Photo
স্বার্থের সংঘাত
ইউক্রেন, ইরান, সিরিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থের সংঘাত তীব্র হয়ে উঠছে৷ নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও রাশিয়া প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তার ঘোষিত স্বার্থ কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ প্রশাসনের প্রতি সমর্থন ও সাহায্য তারই অন্যতম দৃষ্টান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
অস্থায়ী আনুগত্য
শীতল যুদ্ধের সময়ে দুই পরাশক্তির কোনো একটির প্রতি বাকি দেশগুলির স্থায়ী আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি৷ আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ তুরস্কের মতো ন্যাটো সদস্য দেশ জোটসঙ্গীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে৷ পূর্ব ইউরোপের কিছু ইইউ সদস্য দেশও পুটিন প্রশাসনের প্রতি বেশি ঝুঁকতে শুরু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Saribas
সিরিয়াকে ঘিরে আবার বিশ্বযুদ্ধ?
আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এর আগেও রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে রাশিয়াকে সতর্ক করে সিরিয়ার উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন, তার ফলে দুই শক্তির মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ শেষ পর্যন্ত এমন সংঘাত এড়ানো সম্ভব হলেও এমন যুদ্ধ এড়ানোর কাঠামো দুর্বল হয়ে উঠেছে৷