শুরু হতে যাচ্ছে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার৷ রাষ্ট্রপক্ষের ‘পাবলিক প্রসিকিউটর' আনোয়ারুল কবির জানান, পলাতক ২৪ জন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিবেদন ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দেয়ার নির্দেশ আদালতের৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
আনোয়ারুল কবির জানান, ‘‘সোমবার আদালত মোট ৪১ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে৷ এখন পুলিশ পলাতক ২৪ জন আসামিকে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে আটক অথবা পলাতক বলে প্রতিবেদন দেবে৷ আর সেই প্রতিবেদন দাখিলের পরই শুরু হবে বিচার৷''
তিনি জানান, ‘‘যারা আটক হবে না, তাদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে এবং তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘এরপর বিচারিক আদালত মামলায় অভিযোগ গঠন এবং বিচারকাজ শুরু করবে আদালত৷ অভিযোগ গঠনই বিচার শুরুর প্রথম ধাপ৷ আর এ কাজ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সম্ভব হবে৷''
ফিরে দেখা: আগুন, ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক খাত
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক ইউরোপ, অ্যামেরিকার প্রায় সব শপিং মলেই পাওয়া যায়৷ পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি৷ আর এই খাত যেসব দুর্ঘটনায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সেগুলো থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
২৫.০২.২০১০: ‘গারিব এন্ড গারিবে’ আগুন
সুইডেনের একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন চেইনের জন্য কাপড় তৈরি করার সময় আগুনে প্রাণ হারান গারিব এন্ড গারিব ফ্যাক্টরির কমপক্ষে ২১ শ্রমিক৷ নিহতদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন নারী আর কারখানাটি ছিল গাজীপুরে৷
ছবি: Imago/Xinhua
১৪.১২.২০১০: দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়ারে আগুন
সে আগুন প্রাণ হারান কমপক্ষে ২৯ ব্যক্তি, আহত অন্তত ২০০৷ হাম্মিম গ্রুপের কারখানাটি আধুনিক ভবনে অবস্থিত হলেও অভিযোগ রয়েছে অগ্নি নির্বাপকের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তাতে ছিল না৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক উৎপাদন হতো কারখানাটিতে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/AP
২৪.১১.২০১২: তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশন ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত কমপক্ষে ১১২, আহত কয়েকশত৷ নয় তলা ভবনটিতে আগুন লাগার পর অনেক পোশাক কর্মী লাফিয়ে পড়তে গিয়েও প্রাণ হারান৷ কেউ কেউ হয়েছেন জীবন্ত দগ্ধ৷ ভবনটির জরুরী বাইরে যাওয়ার গেটগুলো হয় বন্ধ ছিল, অথবা ব্যবহার অনুপযোগী ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাজরীনের মালিকের বিচার শুরু
আশার কথা হচ্ছে, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও তাঁর স্ত্রীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে৷ ঢাকার একটি আদালতে বিচার কাজ চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৪.০৪.২০১৩: রানা প্লাজা ধস
ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধসে প্রাণ হারান কমপক্ষে ১,১৩৮ ব্যক্তি, আহত কয়েক হাজার৷ ইতিহাসের অন্যতম বড় দুর্ঘটনা এটি৷ রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাননি৷ এই ঘটনায় দায়ীদের বিচার নিয়েও গড়িমসি চলছে৷
ছবি: Reuters
০৯.০৫.২০১৩: মিরপুর টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে আগুন
মিরপুরে পোশাক কারখানায় আগুনে নিহত হয় কমপক্ষে আট ব্যক্তি৷ সেই ঘটনায় পোশাক কারখানাটির বাংলাদেশ অংশের প্রধান এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারান বলে দাবি করেছে, পোশাক রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ৷ দ্রষ্টব্য: গ্যালারিটি তৈরিতে ক্লিন ক্লোদস ক্যাম্পেইন থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
6 ছবি1 | 6
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৪ জন পোশাক শ্রমিক প্রাণ হারান৷ ভবনের ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জন পোশাক-কর্মীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়৷ এ ঘটনায় ঐ বছরের ২৫ এপ্রিল সাভার থানায় হত্যা এবং ইমারত নির্মাণ আইনে পৃথক দু'টি মামলা করা হয়৷
চলতি বছরের ১লা জুন হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দু'টি অভিযোগ-পত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)৷ আসামিদের মধ্যে ২৪ জন পলাতক আছেন, ১৬ জন রয়েছেন জামিনে৷ এছাড়া কারাগারে আটকদের মধ্যে ভবনের মালিক সোহেল রানা রয়েছেন৷
পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘‘হত্যা মামলায় অপরাধ প্রমাণের আলামত এবং সাক্ষ্য প্রমাণ আমাদের হাতে আছে৷ আমরা বিচারে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হবো৷''
রানা প্লাজার বিভীষিকার কথা জার্মানরা ভোলেনি...
বন শহরে ছোট্ট একটা জমায়েত৷ উদ্দেশ্যটা কিন্তু বড় এবং মহৎ৷ আয়োজকরা চান, বাংলাদেশের আর কোনো পোশাক কারখানায় যেন মৃত্যুর বিভীষিকা নেমে না আসে৷ সেই লক্ষ্যে সচেতনতা বাড়াতেই ‘স্বচ্ছ কাপড়’-এর দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিল ফেমনেট৷
ছবি: DW/A. Chakraborty
ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায্য মূল্য দাও
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের দুরবস্থা সম্পর্কে ইউরোপকেও সজাগ করেছে৷ বাড়ছে সবার মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ৷ ‘ফেমনেট’ নামের সংগঠনটি সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে৷ জার্মান কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশ থেকে কাপড় কেনার সময় ‘ন্যয্য’ দাম দেয় এবং এর মাধ্যমে যাতে শ্রমিকদের দুর্ভোগ কমানোয় ভূমিকা রাখে – এই দাবি তুলছে তারা৷ বুধবার বন শহরে আয়োজিত সমাবেশেও তোলা হয়েছে এই দাবি৷
ছবি: DW/A. Chakraborty
কারা আপনার পোশাক তেরি করছে তা কি জানেন?
দর্শকদের জন্য স্ট্যান্ডে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের কিছু নমুনা৷ পোশাকের সঙ্গে সাদা কাগজে বড় করে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জার্মান ক্রেতা কোম্পানিগুলোর নাম৷ এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই রানা প্লাজার ধসে নিহত, আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং পোশাকের ন্যায্য মূল্য দাবি করেছে ফেমনেট৷ কাপড়ের স্ট্যান্ডটির অদূরে একটি ব্যানার, তাতে লেখা, ‘কারা আপনার পোশাক তেরি করছে তা কি জানেন?’
ছবি: DW/A. Chakraborty
বন্ধুর হাত....
কফিনের কাপড় দিয়ে তৈরি ‘বডি ব্যাগ’৷ বুধবারের সমাবেশে মৃতদেহ বহনের কাজে লাগে এমন কিছু ব্যাগও ছিল৷ বাংলাদেশের শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিরাপদ কাজের পরিবেশ পায় না৷ অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে লাশ হতে হয় তাদের৷ ‘বডি ব্যাগ’-এ হাতের ছাপ দিয়ে রানা প্লাজা ট্র্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ এবং পোশাক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দাবি করা হলো৷
ছবি: DW/A. Chakraborty
সহমর্মী...
স্থানীয় সাংবাদিকদের একজন দায়িত্ব পালন শেষে নিজের হাতদুটোও রংয়ে রাঙালেন৷ ‘বডি ব্যাগ’-এ হাতের ছাপ দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে যে! ‘ক্লিন ক্লথ’ অর্থাৎ স্বচ্ছ পোশাক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে ফেমনেট৷ তাদের সঙ্গে আরো রয়েছে খ্রিশচান ইনিশিয়েটিভ রোমেরো, ইনকোটা-নেটওয়ার্ক এবং স্যুডভিন্ড ফাউন্ডেশন নামের তিনটি সংগঠন৷
ছবি: DW/A. Chakraborty
৫ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে
স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠন ফেমিনেটের এক কর্মী৷ তাঁর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘বেনেটন, পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাও৷’’ তৈরি পোশাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা ইতিমধ্যে সাফল্যের মুখ দেখেছে৷ ‘পার্টনারশিপ ফর সাস্টেনেবল টেক্সটাইল’ নামের একটি জোট তৈরি হয়েছে জার্মানিতে, যারা শ্রমিকদের স্বার্থকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়৷
ছবি: DW/A. Chakraborty
চলতে চলতে ছবি তোলা...
পোশাক কারখানার মালিকরা কম মজুরি দিয়ে যে পোশাক তৈরি করে, বিদেশি ক্রেতারা কম দামে যে কাপড় কেনে তাতে তো শ্রমিকের কষ্টের অদৃশ্য কালি লেগেই থাকে! সেই কালিমুক্ত কাপড়ের দাবি পূরণ করতে ফেমিনেট-এর এই ‘স্বচ্ছ কাপড়’ ক্যাম্পেন৷ তাদের সমাবেশের পাশ দিয়ে যাবার সময় ব্যস্ত পথচারীরা থমকে দাঁড়াচ্ছিলেন৷ কাজের তাড়া ছিল বলে যাঁরা বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তাঁদের অনেকেই যাবার আগে ছবি তুলে স্মৃতি রেখে দিতে ভুল করেননি৷
ছবি: DW/A. Chakraborty
6 ছবি1 | 6
আপনি কি চান সোহেল রানার মতো মানুষরা শাস্তি পান? জানান নীচের ঘরে৷