আসামে দাঙ্গা
১৭ আগস্ট ২০১২কলকাতার দৈনিক পত্রিকা সকালবেলা'র হয়ে কাজ করেন গোহাটিতে অবস্থারত সাংবাদিক গৌতম চট্টোপাধ্যায়৷ ডিডাব্লিউ'র সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এই অঞ্চলে এই দাঙ্গা হাঙ্গামা নতুন কিছু নয়, এর আগেও হয়েছে৷ এর কারণ, ১৯৯৩-৯৪ সালের বোরোল্যান্ড চুক্তি অনুযায়ী সেখানে যে বোরোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল এরিয়া ডিস্ট্রিক্ট বা বিটিএডি তৈরি হয়েছে - সেটা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে৷
এই এলাকাটা স্বশাসিত এলাকা৷ এই এলাকা নিয়ে অবোরোদের অভিযোগ হলো, জায়গাটি বোরোদের নামে করা হলেও অনেক জায়গাতে তারাই সংখ্যালঘু৷ এমনকি কিছু গ্রাম আছে যেখানে শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত নাগরিক বোরো নয়৷ তাদের কথা হলো, এইসব এলাকা বোরোদের কাছে গেলে অবোরোদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার বিঘ্নিত হবে৷ এই নিয়ে অনেকদিন ধরে একটি চাপা ক্ষোভ ছিল৷ অন্যদিকে বোরো নেতৃবৃন্দের কথায়, এই জায়গা বোরোদের নামে করা হলেও সেখানে সকলের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷ তবে সেটা মানতে রাজি নয় অবোরো জনগোষ্ঠী৷ গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানান, এর আগে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বোরোদের দাঙ্গা লাগলেও এবার সেটা লেগেছে মুসলমান সংখ্যালঘুদের সঙ্গে৷ তবে এর ফলে কিন্তু অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে৷
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী, এমনটি মনে করেন বাঙালি সাংবাদিক গৌতম চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, এই ধরণের পরিস্থিতিতে কেবল আসাম নয় অন্যান্য জায়গাতেও দাঙ্গার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ মুম্বইতে যে গণ্ডগোল হলো, সেটা আসামের দাঙ্গার প্রভাবের কারণেই হয়েছে৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ ভারতের যেসব জায়গাতে বাস করছে, সেখানেও এই দাঙ্গার আতঙ্ক কাজ করছে৷ তাদের অনেকেই এখন সেসব জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছে৷ কেবল বুধবারই প্রায় চার হাজার মানুষ ব্যাঙ্গালোর থেকে গৌহাটিতে চলে এসেছে বলে জানান গৌতম চট্টোপাধ্যায়৷
গত এক মাস ধরে এই দাঙ্গা চললেও তা প্রশমন করতে রাজ্য সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ বলে তাদের দায়ী করেন গৌতম৷ এমনকি যেখান থেকে এই দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, তা এখন ছড়িয়ে আশেপাশের জেলাগুলোতেও দেখা যাচ্ছে বলে জানান গৌতম৷ বৃহস্পতিবারও কামরুপ জেলাতে বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, পোড়ানো হয়েছে সেতু৷ দাঙ্গা ঠেকাতে পুলিশকে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে হয়েছে৷ ‘‘সবচেয়ে ভয়াবহ হবে যদি এই দাঙ্গা এখন অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে'', এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক গৌতম চট্টোপাধ্যায়৷
সাক্ষাৎকার: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ