পুরনো ‘বাঙালি খেদাও' আন্দোলন কি ফিরে এলো আসামে? জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নবায়ন নিয়ে সেই প্রশ্ন উঠছে৷ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব জাতীয় এবং আঞ্চলিক দলগুলি৷ সরব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী৷
বিজ্ঞাপন
আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নবীকরণে বাদ পড়েছে রাজ্যের প্রায় এক কোটি চল্লিশ লাখ মানুষের নাম, যাঁদের বেশিরভাগই বাঙালি৷ স্বভাবতই এই ঘটনা পুরনো ইতিহাস মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ অনেকেই বলছেন, এর সঙ্গে ‘বাঙালি খেদাও' অভিযানের মিল আছে৷ ভারতের সংসদেও এই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতণ্ডা৷ সংসদের ভেতরে ও বাইরে তৃণমূলসহ অন্যান্য বিরোধী দলের প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে৷
আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নবীকরণে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই বাঙালি কেন ? সংসদে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, সিপিএমসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি৷ অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এক জনসভায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘এর পেছনে কি বিজেপিশাসিত আসাম থেকে বাঙালি খেদাও ষড়যন্ত্র আছে?'' তাঁর হুঁশিয়ারি, বাঙালিদের গায়ে হাত পড়লে কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না৷ এত বাঙালি যাবেন কোথায়? স্লোগান উঠেছে, ‘‘বাংলা ভাষাভাষিদের আটক শিবির বন্ধ করো৷'' পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এই অভিযোগ সরাসরি নস্যাৎ করে বলেন, ‘‘বাঙালিদের আশঙ্কার কোনো কারণ নেই৷ এই নাগরিকপঞ্জি চুড়ান্ত নয়৷ এটা খসড়ামাত্র৷ এরপর আরো খসড়া প্রকাশিত হবে৷ তারপরেও যদি কারোর নাম বাদ পড়ে বা আপত্তি থাকে, তাহলে তারা ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন৷ কাজেই চিন্তার কিছু নেই৷''
সাহিত্যসম্রাটের ভিটে যেন বাঙালির সাহিত্য-তীর্থ
একাধারে প্রশাসক, বিচারক ও সাহিত্যস্রষ্টা৷ সরকারি চাকরির গুরুভার সামলে সাহিত্যরচনাতেও দিকপাল ইনি৷ দেশাত্মবোধ থেকে লোকশিক্ষা বা নির্মল হাস্যরস – এই অমর সৃষ্টিই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বাংলা সাহিত্যের সম্রাট করে তুলেছে৷
ছবি: DW/P. Samanta
প্রাসাদোপম নিবাস
নৈহাটি স্টেশন থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে কাঁটালপাড়া৷ ১৮৪০ সালে এখানেই এই বিশাল অট্টালিকাটি তৈরি করেন বঙ্কিম-পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়৷ তবে যাদবচন্দ্রের উইলে বঙ্কিম এই বাড়ির ভাগ পাননি৷
ছবি: DW/P. Samanta
পারিবারিক রথ
১৮৬২ সালে বঙ্কিমের দাদা শ্যামাচরণের উদ্যোগে প্রথম রথ বের হয়৷ রথটি নাকি প্রস্তুত হয়েছিল তমলুকে৷ সে বছরই আরম্ভ হয় রথের মেলা৷ পরবর্তীতে এই রথের মেলার একটি ঘটনাই ‘রাধারাণী’ উপন্যাসের জন্ম দেয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
মেলার প্রস্তুতি
বঙ্কিমভবনের সামনে শতাব্দী প্রাচীন রথের মেলা বসে আজও৷ মেলাপ্রাঙ্গনের পেছনেই শিবমন্দির ও বঙ্কিমের বৈঠকখানা৷ ১৮৬৬ সালে বসতবাড়ির দক্ষিণে নিজস্ব বাগানে এই বৈঠকখানা তৈরি করেন বঙ্কিম৷
ছবি: DW/P. Samanta
গৃহদেবতা রাধাবল্লভ
বঙ্কিমের মাতামহ রঘুদেব ঘোষাল রাধাবল্লভজিউয়ের কৃপা লাভ করেন৷ তারপর থেকেই চাট্টুজ্জেরা বংশপরম্পরায় রাধাবল্লভের সেবাইত ছিলেন৷ বঙ্কিমের নিজের জীবনে রাধাবল্লভজির প্রভাব ছিল গভীর৷
ছবি: DW/P. Samanta
পুনর্নির্মিত নাটমন্দির
সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিনই বঙ্কিমের ভিটে ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়েছিল৷ ১৯৮৪ সালে বাড়িটি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে৷ ১৯৯৯ সালে গড়ে ওঠে ‘বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্র’৷ তাঁদেরই উদ্যোগে চাটুজ্জেদের এই নাটমন্দিরটি নতুন ভাবে নির্মিত হয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
বারান্দা থেকে দৃশ্যমান রেল
১৮৬২ সালেই বেঙ্গল রেলের উদ্বোধন হয়৷ বঙ্কিম ভবনের পাশ দিয়ে দমদম থেকে রানাঘাট রেল চালু হলো৷ কাঁটালপাড়ার কাছেই ব্যস্ত নৈহাটি স্টেশন৷
ছবি: DW/P. Samanta
শয়নকক্ষ
বঙ্কিম পত্নী রাজলক্ষ্মী দেবী ছিলেন বাড়ির কল্যাণস্বরূপা৷ সাহিত্যসম্রাট বলেছেন, ‘‘তিনি না থাকিলে আমি কী হইতাম, বলিতে পারি না৷’’ ছবিতে শয়নকক্ষের দেওয়ালে সস্ত্রীক বঙ্কিম৷
ছবি: DW/P. Samanta
পাগড়িতে যায় চেনা
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে যে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে সকলের থেকে আলাদা করা যায়, তা হলো তাঁর শিরোভূষণ৷ বঙ্কিম ভবনে আজও যা সযত্নে রক্ষিত৷
ছবি: DW/P. Samanta
আঁতুড়ঘর
যাদবচন্দ্রের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমের জন্ম ১৮৩৮ সালের ২৬ জুন৷ এই সেই আঁতুড়ঘর৷
ছবি: DW/P. Samanta
ফলকে লেখা নাম
আঁতুড়ঘরের কেন্দ্রে বইয়ের জোড়া পাতার মতো খোলা এই ফলক৷ তাতেই উৎকীর্ণ বঙ্কিমের আবির্ভাবের অভিজ্ঞান৷
ছবি: DW/P. Samanta
রক্ষণশীল অন্দরমহল
যাদবচন্দ্রের রক্ষণশীলতা মেনে বঙ্কিম পরিবারের কোনো নারীই তখন বিদ্যালয়মুখী হননি৷ এ বাড়িতে হতো বাল্যবিবাহও৷ বঙ্কিমের নিজের বিয়েই হয়েছে দশ বছর আট মাস বয়সে৷
ছবি: DW/P. Samanta
সৃষ্টির ঘর
বঙ্কিম নির্মিত বৈঠকখানাই কালক্রমে হয়ে ওঠে বাংলা নবজাগরণের পীঠস্থান৷ এই ঘরেই লেখা হয়েছিল ‘বন্দেমাতরম’ গানটি৷ বঙ্কিম ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল সেই সৃষ্টিপর্বের সাক্ষী৷
ছবি: DW/P. Samanta
বঙ্গদর্শনের মজলিস
বৈঠকখানার হলঘরেই বসত বঙ্গদর্শনের মজলিস৷ উপস্থিত থাকতেন দিকপাল সব কবি-সাহিত্যিকরা৷ নবীনচন্দ্র সেন, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখ৷ এখান থেকেই প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গদর্শন, প্রচার ও ভ্রমর পত্রিকা৷
ছবি: DW/P. Samanta
নবরূপে বঙ্গদর্শন
বঙ্কিম প্রবর্তিত ‘বঙ্গদর্শন’ এখনও প্রকাশিত হয়৷ তাঁর জন্মদিনে প্রকাশিত হল বিশেষ সংখ্যা৷ এবারের বিষয় কলকাতার সংগ্রহশালা৷
ছবি: DW/P. Samanta
14 ছবি1 | 14
এই বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের সঙ্গেও পৃথক বৈঠকে মিলিত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ধন্দ এখানেই৷ কেন তিনি তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করলেন ? কারণ, মমতার এই হুঁশিয়ারিতে আসামে বাঙালিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷ অনেকের আশঙ্কা, এই প্রতিক্রিয়া দাঙ্গায় রূপ নিলে বিপদ বাড়বে৷ তা যাতে না হয়, তার জন্য সৌগত রায়ের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার্তা দিতে চেয়েছেন রাজনাথ৷
প্রশ্ন হলো, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নবীকরণ নিয়ে এত তোলপাড় কেন? সমস্যাটা ঠিক কোথায়? যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁরা কি দেশের বৈধ নাগরিক নন? তাঁরা কি মূলত বাংলাদেশী? অবৈধ অনুপ্রবেশকারী? কীভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে?
‘ফাইনাল লিস্টে আমাদের নাম থাকবে, আমরা আশাবাদী’
এই প্রসঙ্গে এনআরসি কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়, আসাম রাজ্যের সরকারি নথিতে যাঁদের নাম আছে, তাঁদের পরিবারের বংশতালিকা খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ ভারতীয় হওয়ার পাশাপাশি সাবেক রাজ্যে অর্থাৎ, যে রাজ্য থেকে তিনি বা তাঁর পরিবার আসামে এসেছেন সেই সাবেক রাজ্যের বিভিন্ন প্রমাণপত্র যেমন, জমিজমার দলিল, ভোটার কার্ড, আধারকার্ড ইত্যাদি জমা দিতে হবে৷ যাঁরা দিতে পারবেন না, তাঁরাই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন৷ এর জন্য পশ্চিমবঙ্গসহ ২৮টি রাজ্যে এইসব নথিপত্র যাচাই করার জন্য পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি৷ পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়েছিল এক লক্ষ এগারো হাজার নথি৷ দু'বছর পরে যাচাই করে ফেরত পাঠানো হয় মাত্র হাজার পাঁচেক৷
১৯৫১ সালের পর এই প্রথম আসামে বৈধ নাগরিকত্ব নবায়ন হচ্ছে৷ প্রথম খসড়ায় তিন কোটি উনত্রিশ লক্ষের মধ্যে মাত্র এক কোটি নব্বই লাখের নাম উঠেছে৷ এই নিয়ে গণ্ডগোল এড়াতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ বিশেষ স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে সেনাবাহিনীকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে৷
নাগরিক পঞ্জি নবায়ন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আসামের সাংসদ বদরুদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই প্রথম লিস্টটা বেরিয়েছে৷ এতে আমার পার্টির তিনজন সাংসদের নাম নেই৷ ছ'জন বিধায়কের নাম নেই৷ কংগ্রেসের তিন-চার জন বিধায়ক এবং বিজেপির তিন-চারজন বিধায়কের নাম নেই৷ পরের লিস্টে মনে হয় নাম উঠবে৷ ভিআইপি হলে আগে উঠতে লাগে৷ তাই আগে থেকে কিছু বলাটা ঠিক হবে না৷ আশা করি, ফাইনাল লিস্টে আমাদের নাম থাকবে৷ আমরা আশাবাদী৷ তবুও যদি না ওঠে, তাহলে অনেক পথ খোলা আছে৷ তখন সেগুলো কাজে লাগাবো৷''
‘শুধু বাঙালিদের নয়, অনেক অসমীয়াদেরও নাম ওঠেনি’
আসাম সংখ্যালঘু সেলের জেনারেল সেক্রেটারি এবং রাজ্যের বিধায়ক আমিনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘‘এই মূহুর্তে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷ সবে এনআরসির প্রথম খসড়া বের হয়েছে৷ দু'টো পার্টে তা সম্পুর্ণ হবে৷ সুপ্রিম কোর্টের তদারকিতেই কাজটা হচ্ছে৷ শুধু বাঙালিদের নয়, অনেক অসমীয়াদেরও নাম ওঠেনি৷ বিভিন্ন এলাকার পরিবারদের কিছু সদস্যের নাম উঠেছে, কিছু বাদ গিয়েছে৷ অন্য রাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিদের নামধামের সত্যতা যাচাই করতে নথি পাঠানো হয়েছে৷ যে রাজ্য থেকে তাঁরা এসেছেন, সেইসব রাজ্যে৷ কাজটা সম্পূর্ণ হওয়ার পরই এর দোষগুণ বিচার করা সম্ভব৷ তবে যে লিস্ট প্রকাশিত হয়েছে, তারমধ্যে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম বাদ পড়ায় আমরা শীর্ষ আদালতের রাজ্য কো-অর্ডিনেটরের সঙ্গে সে বিষয়ে বৈঠক করেছি৷''
উল্লেখ্য, ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি ভারতে পালিয়ে আসেন৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁদের সবাই ফিরে যাননি৷ অনেকেই এদেশে থেকে যান৷ তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়নি৷ এই নিয়ে রাজ্যে শুরু হয় আন্দোলন৷ শেষে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার এবং আসাম ছাত্র ইউনিয়ন ও আসাম গণ সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে ১৯৮৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় শান্তি চুক্তি৷ সেখানে ভারতীয় নাগরিক এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করার সংস্থান রাখা হয়েছিল৷ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুকে নির্বাচনী হাতিয়ার করেছিল৷ ২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর জিগির তোলেন৷ হিন্দু শরণার্থী এবং মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করেন৷ ২০১৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিজেপি সেই একই অস্ত্র প্রয়োগ করছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল৷
আরেকটি নতুন জেলা পেল পশ্চিমবঙ্গ
৪ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের ২২তম জেলা হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয়েছে ঝাড়গ্রাম৷ পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে তৈরি হওয়া এই জেলার বড় অংশেই জঙ্গলমহল৷ মাঝে ক’বছর মাওবাদী কার্যকলাপে যেন নিষিদ্ধ ভূখণ্ড হয়ে উঠেছিল এ এলাকা৷ এতদিনে ফিরেছে জীবনের ছন্দ৷
ছবি: DW/P. Samanta
এলাম ‘আরণ্যকের’ দেশে
জঙ্গলমহলের প্রবেশদ্বার ঝাড়গ্রাম শহর৷ হাওড়া-কলকাতা থেকে প্রতিদিন এক্সপ্রেস ট্রেন আসে এই স্টেশনে৷ সড়কপথে কলকাতা থেকে সরাসরি বাসেও আসা যায় ঝাড়গ্রামে৷
ছবি: DW/P. Samanta
‘গ্রাউন্ড জিরো’ জঙ্গলমহল
শীত শেষে বসন্ত এসেছে জঙ্গলমহলে৷ পাতা ঝরার প্রহর পার করে অপূর্ব সবুজে সেজে উঠেছে আদিবাসীদের আপন দেশ৷ নির্জন পথের দু’ধারে শাল ও কেন্দু বা বিড়িপাতার জঙ্গলের মাঝে একাকী দাঁড়ালে মনে হতেই পারে বিভূতিভূষণের আরণ্যক-এর কথা৷ দূরে পর্বতের সারি নিয়ে ডাকছে বেলপাহাড়ি৷
ছবি: DW/P. Samanta
অরণ্যের প্রথম আলো
আক্ষরিক অর্থেই সূর্যোদয় হচ্ছে অতীতের মাও উপদ্রুত এলাকা হিসেবে কুখ্যাত জঙ্গলমহলের৷ বসন্তের রঙিন প্রকৃতির মতো মানুষের জীবনও উঠেছে সেজে৷
ছবি: DW/P. Samanta
মহুয়ায় জমেছে মৌ
জঙ্গলমহলে বসন্ত মানেই মাতাল করা মহুয়ার মধুমাস৷ কিছু দূর অন্তর পথিকের স্নায়ু অবশ করে দেয় মিঠে একটা গন্ধ৷ সেই গন্ধের উৎস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহুয়া গাছের সারি৷ থোকা হয়ে শাখায় শাখায় ঝুলছে ফুল৷ মাটিতে পড়লে কুড়িয়ে নিয়ে যান গ্রামবাসীরা৷ এটা থেকেই তৈরি হয় নেশার পানীয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
আয়ের পথ মহুয়া
জঙ্গলমহলের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে মহুয়া ফুল৷ আদিবাসীদের বাড়ির সামনে রোদে ফুল শুকোতে দেওয়া হয়৷ কুড়িয়ে আনার সময় ফুলের রং থাকে ডিমের কুসুমের মতো হলুদ৷ শুকিয়ে গেলে রং হয় কালচে খয়েরি৷ এই ফুল গ্রামবাসীরা বিক্রি করেন স্থানীয় দোকানে৷ ২০১৭ সালে এক কেজি মহুয়া ফুল বিক্রি হচ্ছে ২২ টাকায়৷
ছবি: DW/P. Samanta
চলো রিনা, ক্যাসুরিনা
জঙ্গলমহলের বুক চিরে চলে গিয়েছে সর্পিল সড়ক৷ বেলপাহাড়ি থেকে বাঁশপাহাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তা কোথাও ঢালু, কোথাও অনেকটা চড়াই৷ গ্রামবাসীদের যাতায়াতের মাধ্যম দ্বিচক্রযান, সাইকেল অথবা মোটরবাইক৷ জনবিরল রাস্তায় হারিয়ে যাওয়ার হাতছানি৷
ছবি: DW/P. Samanta
ভয়ংকর সুন্দর
জঙ্গলের মধ্যে আমতল গ্রাম৷ এখনও যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে লেখা জেলার নাম পশ্চিম মেদিনীপুর৷ তার গায়ে কাগজের একটা পোস্টার সাঁটা৷ সেখানে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফ-এর মোবাইল নম্বর লেখা৷ বেলপাহাড়ি থানা থেকে বহু দূরের এ সব এলাকা মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল৷ বিপদে গ্রামবাসীদের সাহায্য করতে সিআরপিএফ-এর হেল্পলাইন৷
ছবি: DW/P. Samanta
অরণ্যের পক্ষীরাজ
শান্ত জঙ্গলমহলে সংখ্যায় কম হলেও নিয়মিত বাস চলাচল করে৷ বেলপাহাড়ি থেকে মানবাজার, বান্দোয়ান, পুরুলিয়া ছুঁয়ে যায় বেসরকারি বাস৷ এখন সন্ধের অন্ধকার নেমে এলেও বাস দেখা যায় এই রাজ্য সড়কে৷
ছবি: DW/P. Samanta
পথ চাওয়াতেই আনন্দ
কিছু দূর অন্তর পাকা সড়ক থেকে এমনই লাল মাটির রাস্তা ঢুকে গিয়েছে জঙ্গলের মধ্যে৷ বন্ধুর পথে অনেকটা এগোলে গ্রামে পৌঁছনো যায়৷ এই পথে কোনো আলো নেই৷ আগে দিনের বেলাতেও এমন প্রত্যন্ত গ্রামে ঢোকা পুলিশের পক্ষেই বিপজ্জনক ছিল৷ এখন রাতেও গ্রামবাসীরা যাতায়াত করেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
আমাদের ছোট গাঁয়ে...
কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা মনে হতে পারে৷ মূল সড়ক থেকে ভিতরে ঢুকলে দেখা মেলে এমনই গ্রামের৷ বিনপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত এই গ্রামের নাম লালজল৷ পাহাড়ে ঘেরা এ সব গ্রাম আজ নিরুপদ্রব৷
ছবি: DW/P. Samanta
উন্নয়নের কেন্দ্র
মাওবাদীদের দৌরাত্ম্যের সময় খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল ভুলাভেদা৷ শিকেয় উঠেছিল পঞ্চায়েতের কাজকর্ম৷ প্রতিনিয়ত ছিল হামলার আশঙ্কা৷ ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই কার্যালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় এলাকায় উন্নয়নের কাজ পরিচালিত হয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
চলো পড়তে যাই
গ্রামের নাম মাজুগোড়া৷ চরমপন্থি কার্যকলাপের জেরে জনজীবনে আতঙ্কের আবহ ছিল একসময়৷ যদিও মাওবাদীরা সাধারণ গ্রামবাসীদের ক্ষতি করত না৷ কিন্তু, হিংসার ঘটনায় ত্রস্ত ছিল জঙ্গলমহল৷ পরিস্থিতি বদলাতে খুলেছে স্কুলও৷
ছবি: DW/P. Samanta
ওই যে গাঁটি যাচ্ছে দেখা
পাকা সড়ক থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে গ্রাম লালজল৷ সন্ধে নামলেই জ্বলে ওঠে সৌরশক্তির আলো৷ পাশের জঙ্গল থেকে ডেকে ওঠে ময়ূর৷ হাতের নাগালে পানীয় জলের জোগান৷
ছবি: DW/P. Samanta
কুমোর ঠাকুর গড়ে
অশান্তির সময়েও উৎসবে ছেদ পড়েনি জঙ্গলমহলে৷ তবু সন্দেহ আর ভয়ের মিশেলে আবেগে ঘাটতি পড়েছিল৷ আজ আবার ফিরে এসেছে উৎসব ঘিরে আগের সেই স্বতঃস্ফূর্ততা৷ লালজল গ্রামে চৈত্রের বাসন্তী পুজো উপলক্ষ্যে মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী৷
ছবি: DW/P. Samanta
জঙ্গলের হাসিমুখ
অরণ্যবাসী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে৷ লোধা, শবর, সাঁওতাল জনজাতির প্রতিনিধি যেন এই মহিলা৷ গাছের ডাল দিয়ে তৈরি তাঁর হাতের ঝাঁটা৷ নিকোনো উঠোনের মাটির দোচালা ঘর একেবারে অরক্ষিত৷ তবুও সেখানে শান্তিতে রাতে ঘুমোতে পারেন তাঁরা৷
ছবি: DW/P. Samanta
হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা
৫ নম্বর রাজ্য সড়ক চলে গিয়েছে বাঁকুড়া৷ সাইনবোর্ড পথের মধ্যে জানান দেয়, জঙ্গলমহলের পর্যটনকেন্দ্র ঝিলিমিলি আর ১৭ কিলোমিটার দূরে৷ বাঁশপাহাড়ি হয়ে যেতে হয় সেখানে৷ ঝাড়গ্রামের কাঁকড়াঝোড় বিখ্যাত তার অরণ্যের জন্য৷
ছবি: DW/P. Samanta
লালপাহাড়ির দেশে যা
মাওবাদীরা যখন পুরো মাত্রায় সক্রিয়, তখন প্রকৃতির আপন দেশে পর্যটকরা যেতে পারতেন না৷ সবসময় ভয় ছিল অপহরণ, খুনের৷ পরিবেশ শান্ত হতেই পর্যটকরা ফের জঙ্গলমহলের দিকে ফিরছেন৷ পাহাড়ে উঠতেও আর ভয় নেই৷
ছবি: DW/P. Samanta
জীবন এগিয়ে চলে...
বাঁশপাহাড়ি যাওয়ার পথে চাকাডোবা মোড়৷ তিনমাথার একটি চলে গিয়েছে অরণ্যসুন্দরী কাঁকড়াঝোড়ের দিকে৷ কর্মব্যস্ত মানু্ষের ছবি বলে দিচ্ছে, জঙ্গলমহলে জীবনের স্বাভাবিক লয় ফিরে এসেছে৷