ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনের জামিন আবেদন নাকচ হয়েছে রবিবার৷ তবে আরেক ব্লগার মশিউর রহমান বিপ্লব একই দিনে জামিন পেয়েছেন৷ এদিকে, আসিফকে নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা ফেসবুক থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার ঢাকার আদালতে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন এবং মশিউর রহমান বিপ্লবের জামিন আবেদনের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷ কিন্তু শুনানি শেষে আদালত বিপ্লবকে জামিন দিলেও আসিফের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এই বিষয়ে লিখেছে, ‘‘চার ব্লগারের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের দুটি মামলা আমলে নিয়ে আগামী ২৭ জুন অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রেখেছে আদালত৷ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক রোববার এই আদেশ দেন৷ ব্লগার মশিউর রহমান বিপ্লবের জামিন আবেদন মঞ্জুর করলেও আসিফ মহিউদ্দিনের আবেদন নাকচ করেছেন তিনি৷ অপর দুই ব্লগার সুব্রত অধিকারী শুভ ও রাসেল পারভেজকে গত ১২ মে জামিন দিয়েছিলেন একই বিচারক৷''
‘নাস্তিক ব্লগার’ ইস্যুতে ইসলামি দলের তাণ্ডব
কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে কথিত ‘ধর্মনিন্দার’ অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ বাংলাদেশের কয়েক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিভিন্ন ইসলামি দল৷ এতে প্রাণহানিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্র
শুক্রবার (২২.০২.১৩) দুপুর বারোটার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ১২টি ইসলামি ও সমমনা দল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের ভাষায় যেসব ব্লগার ইন্টারনেটে ‘ধর্মনিন্দা’ করে বিভিন্ন নিবন্ধ লিখছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলন করা হবে৷ কিন্তু সেই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই তাণ্ডবে রূপ নেয়৷ এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘পরিকল্পিত অ্যাকশন’
ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানিয়েছেন, ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবেই সহিংস অ্যাকশনে গেল জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগীরা৷ ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তির কথা বলে তাদের ভাষায় ‘মুরতাদ-নাস্তিকদের’ ফাঁসির দাবিতে আগেই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কর্মসূচি দেয়৷ আর আজ (২২.০২.১৩) জুম্মার নামাজের আগেই তারা তাণ্ডব শুরু করে৷’
ছবি: Reuters
শাহবাগে হামলার চেষ্টা
শুক্রবার (২২.০২.১৩) পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ইসলামি দলের সদস্যরা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোতে চাইলে সংঘর্ষ পল্টন হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ ককটেল, গুলি আর টিয়ার গ্যাসের সেলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ প্রায় একই সময়ে ঢাকার কাঁটাবনে শাহবাগ বিরোধীরা রাস্তায় নামে৷ তারাও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
ঢাকার বাইরে তাণ্ডব, প্রাণহানি
ঢাকার বাইরে চট্টগামের প্রেসক্লাবে হামলা হয়েছে৷ তাদের হামলায় পুলিশ এবং সাংবদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুরে গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালায় তারা৷ হামলা চালায় সিলেট শহীদ মিনারে৷ সেখানে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার বিকেল অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, গাইবন্ধায় ২ জন এবং ঝিনাইদহে জাগরণ মঞ্চ বিরোধীদের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters
শাহবাগে জনতা
দেশব্যাপী ইসলামি দলগুলোর এই তাণ্ডবের পর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আবারো ভিড় বাড়তে শুরু করেছে৷ ব্লগারদের ডাকে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এই চত্বরে অবস্থান করছেন অগুনতি মানুষ৷ তাদের মূল দাবি হচ্ছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট৷’’
ছবি: Reuters
তাণ্ডবের পর নতুন কর্মসূচি
শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘আজকের (২২.০২.১৩) হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে৷’’ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ইন্টারনেটে সতর্ক দৃষ্টি
‘ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে’ এরকম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ এবং দশটি ব্লগ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে৷ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
রোববার হরতাল
শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ ১২টি ইসলামি দল৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
গত জানুয়ারিতে দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত আসিফ মহিউদ্দীনের জামিন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে আসিফের বোন জুয়েলা জেবুন্নেসা খান লিখেছেন, ‘‘চারজন ব্লগারকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, তিনজনকে ছেড়ে দিলেও আসিফকে ছাড়েনি৷ আর যারা আসিফকে কুপিয়ে ছিল তাদের সরকার কি ব্যাবস্থা করল জনগণ তা জানতেই পারলনা৷''
এদিকে, আসিফ মহিউদ্দীনকে নিয়ে লেখা কয়েকটি ফেসবুক নিবন্ধ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার পর ফেসবুক থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, একসঙ্গে অনেকে এসব নিবন্ধের বিরুদ্ধে ফেসবুকে রিপোর্ট করায় তা ফেসবুক থেকে মুছে গেছে৷
সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট ফারুক ওয়াসিফ এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘আসিফের মুক্তি চাওয়া স্ট্যাটাস মুছে দিয়েছে ‘ওরা'৷ জানি না ওরা ‘কারা'? স্ট্যাটাসে বলেছিলাম, আসিফের প্রাণনাশের চেষ্টা এবং ব্লগারদের আটক আর কবি দাউদ হায়দারের দেশছাড়া ঘটনার মিল হচ্ছে, দুটোই ঘটেছে লীগ আমলে৷ দাউদের বেলায় লীগ-জামাত অলিখিত ঐক্য হয়েছিল কিছু কিছু জায়গায়: পাবনা তার অন্যতম৷ সেই থেকে সেখানে জামাত শক্তিশালী৷ ব্লগারদের গ্রেফতারের বেলায়ও লীগ-হেফাজত সন্ধি দেখা যায়৷ উপসংহারে আমি দাবি করেছিলাম: লীগের বাইরে বাম তো দূরের কথা মুক্তিযুদ্ধবাদী হওয়াও যেন নিষিদ্ধ!''
নিজেকে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় প্রদানকারীর ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনের মুক্তির দাবিতে তৈরি ফেসবুক পাতা থেকেও একই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে৷ ‘ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন' পাতায় সোমবার লেখা হয়েছে, ‘‘কালকে আসিফের জ্বরের কথা উল্লেখ করে একটা স্ট্যাটাস লিখলাম, জামিন হয়নি তখন দুপুরে একটা স্ট্যাটাস লিখলাম৷ কারা যেন রিপোর্ট করে রিমুভ করে দিছে৷ কই যে যাই৷ জলে কুমির ডাঙায় বাঘ৷''
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে ডয়চে ভেলের সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড দ্য বব্স-এর ‘সেরা সামাজিক আন্দোলন' বিভাগে ‘ইউজার প্রাইজ' জয় করেন আসিফ মহিউদ্দীন৷ এপ্রিলে এই ব্লগার গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই সামহয়্যার ইন ব্লগে থাকা তাঁর সকল নিবন্ধ মুছে ফেলে সরকার৷ বর্তমানে তিনি কারাবন্দি থাকলেও তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ‘লগ-ইন' করছে কোনো একটি পক্ষ৷ গ্রেপ্তারের পর আসিফকে পাঠানো ফেসবুক বার্তা দেখা হয়েছে বলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত করেছে ফেসবুক৷