চলছে সন্ধির মরসুম৷ প্রথমে তুরস্ক-ইসরায়েল, তারপর তুরস্ক-রাশিয়া, এবার রাশিয়া-অ্যামেরিকা৷ দ্বিপাক্ষিক বিবাদ ভুলে হাত মেলাতে এগিয়ে আসছে একের পর এক দেশ৷ সংকটের মুখে সহযোগিতাই শ্রেয়৷
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চে অনেক বিবাদ বেশি দিন টেকে না৷ বৃহত্তর স্বার্থে দুই পক্ষকেই এগিয়ে যেতে হয়৷ গত কয়েকদিনে এমনই কয়েকটি ঘটনা চোখে পড়লো৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান গোঁসা ঝেড়ে ফেলে একদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু, অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে সন্ধি করলেন৷
এবার পুটিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বহুকাল পর টেলিফোনে কথা বললেন৷ সব বিষয়ে বিরোধ না মেটাতে পারলেও অন্তত সিরিয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথে এগোতে চান দুই নেতা৷
শীতল যুদ্ধের কালো ছায়া আবার যখন হাতছানি দিচ্ছে, তখন উত্তেজনা কমানোর পথে এগোলেন অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতারা৷ পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন৷ ন্যাটো-রাশিয়া সম্পর্ক এই মুহূর্তে তলানিতে এসে ঠেকেছে৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে চলেছে ন্যাটো৷ ক্রাইমিয়া জবরদখল তাদের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর পরিকল্পিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার তীব্র বিরোধিতা করছে মস্কো৷
ন্যাটো সেখানে সৈন্যসংখা বাড়ানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সেটাও ভালো চোখে দেখছে না পুটিন প্রশাসন৷ কাজেই এই দুই উত্তপ্ত বিষয় নিয়ে আপোশের সম্ভাবনা আপাতত নেই বললেই চলে৷ ন্যাটো রাশিয়ার উদ্দেশ্যে মিনস্ক শান্তি চুক্তি মেনে চলার জন্য চাপ দিচ্ছে৷ আগামী ১৩ই জুলাই ন্যাটো সদর দপ্তরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হবার কথা৷
কিন্তু সিরিয়ায় দুই দেশেরই স্বার্থ জড়িয়ে আছে, যদিও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যও চোখে পড়ার মতো৷ রাশিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি সমর্থন জুগিয়ে আসছে৷ অ্যামেরিকা আসাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না৷ পুটিন ওবামাকে সিরিয়ার নরমপন্থি ও কট্টরপন্থি বিদ্রোহীদের মধ্যে পার্থক্য মেনে নিতে বলেছেন৷ ওবামা পুটিনকে সংঘর্ষ বন্ধ করার চুক্তি মেনে নিতে আসাদের উপর চাপ বাড়াতে বলেছেন৷ দুই নেতাই অবশ্য সিরিয়ায় পারস্পরিক সামরিক সমন্বয় বাড়াতে প্রস্তুত৷
মেয়ের ক্যানভাসে যুদ্ধের বিভীষিকা
প্রতিদিন সিরিয়া ছাড়ছে অসখ্য মানুষ৷ আশ্রয় খোঁজা মানুষদের মধ্যে আছে শিশুরা, যারা যুদ্ধের বিভীষিকা নিজের চোখে দেখেছে৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করা তেমনই এক মেয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
বাড়িটা যেমন ছিল
সিরিয়ার এক শরণার্থী মেয়ে কলম আর কাগজ বেছে নিয়েছে তার জীবনের গল্প বলতে৷ এই ছবির ক্যাপশনে সে লিখেছে, ‘‘এটা সিরিয়া, মৃত্যু দূত৷ সিরিয়ার রক্ত ঝড়ছে৷’’ মেয়েটির আঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্যাঙ্ক থেকে একটি শহরের দিকে গোলা ছোড়া হচ্ছে৷ একইসঙ্গে আকাশ পথে চলছে হামলা৷ ফলে বাড়িগুলো আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আর একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একজন তা দেখছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
মৃত্যু এবং হতাশা
‘‘এটা আমার বাবা, মা এবং পরিবারের - এবং সিরিয়ার সকল পরিবারের কবর,’’ মেয়েটা লিখেছে৷ তার কথায়, ‘‘সিরিয়ার শিশুদের অবস্থা এমন৷’’ তার হাতে থাকা ছবিটিতে তিনটি কবর এবং শুয়ে থাকা কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
শিশুরা মারা যাচ্ছে
এখানে এজিয়ান সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো আয়লান কুর্দির মরদেহ আঁকার চেষ্টা করেছে মেয়েটি৷ তার মৃত্যু গোটা ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে শিশুদের চরম দুর্দশা ফুটে উঠেছিল কুর্দির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘এটা সিরিয়ার মানুষের আসল ট্রাজেডি’
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে৷ অনেক শিশু হারিয়েছে তাদের অভিভাবক৷ অবৈধ পথে সিরিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
থমকে যাওয়া জীবন
গ্রিসের ইডোমেনি শরণার্থী শিবিরে কিছু শিশু ছিল যারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আশায় ছিল৷ তাদের বাবা-মা সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আগেই ইউরোপে প্রবেশে সক্ষম হয়েছিল৷ কিন্তু বাকিদের আশা ধীরে ধীরে ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হচ্ছে৷ ছবির ক্যাপশন, ‘‘শিশুদের সব আশা, স্বপ্ন এখন ময়লার বাক্সের মধ্যে আছে৷’’
ছবি: DW/M.Karakoulaki
হারানো স্বপ্ন
‘‘শিশুদের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে-’’ লিখেছে মেয়েটি৷ তার কথায়, শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক শিশু ইউরোপে শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল৷ কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছে, সেই স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তব হওয়ার আশা নেই৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘তাদের বুঝতে হবে যে তারা শিশু’
দশ বছর বয়সি এই শিশুটির মতো আরো অনেক শিশু ইডোমেনি ক্যাম্পে রয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, শরণার্থী শিবিরে শিশুদের দিকে আলাদাভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে না৷