ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ৷ শুনে গর্ব হচ্ছে৷ মনে হচ্ছে, এবার আমাদের সময়মতো ছোট্ট একটা শব্দ গভীর আবেগ আর আন্তরিকতা নিয়ে উচ্চারণ করতেও শেখা উচিত৷
বিজ্ঞাপন
শব্দটি আমরা উচ্চারণ যে করিনা এমন কিন্তু নয়৷ বাঙালি হয়েও ‘দুঃখিত' শব্দটি কম বললেও ইংরেজিতে ‘স্যরি'-তো প্রায় উঠতে-বসতে বলি৷ ছোট ছোট ভুলে বেশি বলি৷ বড় কোনো ভুল বা অপরাধ হলে অনেক সময় বেমালুম ভুলে যাই শব্দটা৷ সাধারণ মানুষের মাঝে অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে৷ অনেকেই পথ চলতে চলতে কারো গায়ে ফুলের টোকাটি লাগলেও অস্ফুটে বলে উঠি, ‘স্যরি'৷ যিনি আপন মনে হেঁটে যাচ্ছিলেন, ফিরে তাকিয়ে ‘না, ঠিক আছে' বলতে গিয়ে তাঁরই বরং হোঁচট খাওয়ার দশা হয়৷ আমরা এইটুকু তবু পারি৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের খুব বড় বড় মানুষরা বড় ভুলে সামান্য একটি শব্দ উচ্চারণ করতে আগে কদাচিৎ হয়তো পেরেছেন, এখন একদমই পারেননা৷
পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানবতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য বিরোধীদলের কর্মসূচিতে পুড়ছে যানবাহন, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, মরছে মানুষ৷ হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো অনেকে এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সারি সারি পোড়া মানুষ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট এখন হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো জীবিকার তাগিদ কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষে ভরে গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
শিশুর কষ্ট বোঝেনা তারা!
কোলের শিশুও বাঁচতে পারছেন না জ্বালাও-পোড়াওয়ে হাত থেকে৷ প্রতিপক্ষের আদর্শকে ভুল প্রমাণ করে শ্রেয়তর আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়, প্রতিপক্ষকে আঘাত করে, হত্যা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা অনেক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ স্বাধীন দেশে নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে পোড়ানোও দেখতে হচ্ছে৷ ৩ নভেম্বর আট বছরের সুমি দাদীর সঙ্গে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসছিল৷ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় তাদের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বোবা কান্না...
নির্মমতার আরেকটি ছবি হয়ে আছে মজিবরের পোড়া শরীর৷ মজিবর বাকপ্রতিবন্ধী৷ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এক ট্রাকের হেলপার৷ পিকেটারদের বোমা হামলায় বাসের সঙ্গে তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ সবাই শুনে বুঝবে এমনভাবে কথা তিনি বলতে পারেন না, বোবা কান্নায় শুধু পারেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে, আর্তনাদ করতে আর এ অন্যায়ের প্রতিকার আশা করতে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মেয়েকে দেখতে গিয়ে মা হাসপাতালে
জাহানারা বেগম৷ বয়স ৫২৷ পেশা – ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা৷ হরতাল-অবরোধ থাকলে বিক্রি কমে যায় বলেই হয়তো সেদিন কাপড় নিয়ে বাড়ি বাড়ি না ঘুরে জাহানারা গিয়েছিলেন শ্যামপুরে৷ সেখানে তাঁর মেয়ের বাড়ি৷ মেয়েকে দেখে অটো রিক্সায় ফেরার সময়েই বিপদ৷ বিরোধী দলের কিছু সমর্থক সেই অটোরিক্সাতেও ছুড়ে মারে পেট্রোল বোমা৷ সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের মূল্য আগুনে পুড়ে চুকাচ্ছেন জাহানারা বেগম!
ছবি: Mustafiz Mamun
তালহার অসহায়ত্ব
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা৷ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় আবু তালহা সেই থেকে ১ নম্বর বার্ন ইউনিটে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রাজমিস্ত্রী
রাজমিস্ত্রী ও ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের শরীর পুড়েছে গত ১২ নভেম্বর৷ সেদিন ঢাকার রায়েরবাগেও একটি চলন্ত বাসে ছোড়া হয় পেট্রোল বোমা৷ সেই থেকে তাঁরও ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বাসচালক
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহবাগে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো সেই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাহবুব৷ যাত্রীদের মতো তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময়, অর্থাৎ ১৯৭১ সালেই জন্ম মাহবুবের৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশ পুড়ছে, তিনিও পুড়েছেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঘুমের মাঝেই আগুন...
৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া ফেরিঘাটে বাসে ঘুমাচ্ছিলেন হেলপার আলমগীর৷ থামানো বাসেই দেয়া হয় আগুন৷ পোড়া দেহ নিয়ে এখন তিনি হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেগুনার যাত্রী
১০ নভেম্বর ঢাকার লক্ষীবাজারে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো হয় একটি লেগুনা৷ লেগুনা পুড়ে শেষ, লেগুনার যাত্রী কামাল হোসেন ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন৷ তবে শরীরের ৩৫ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়ে গেছে৷ ৩৬ বছরের এ তরুণ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে৷ চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং সুস্থ মানসিকতার প্রতিটি মানুষের শুভকামনায় তিনি শিগগিরই হয়তো ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ কিন্তু এই দুর্ভোগ, এই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো কি কোনোদিন ভুলতে পারবেন?
ছবি: Mustafiz Mamun
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভও ছিলেন রায়েরবাগের সেই বাসে৷ তাই ১২ নভেম্বর থেকে তিনিও পোড়া শরীর নিয়ে পড়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআরসি-র সদস্য হওয়ার পর প্রত্যাশিতভাবেই আবার উঠে এসেছে দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গ৷ উঠে আসছে রাজাপুরের লিমন হোসেনের র্যাবের গুলিতে পা হারানোর প্রসঙ্গ৷ নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ আরো অনেক প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, কিংবা আসবে৷ জানা কথা, সভা-সমিতিতে, আড্ডায়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তুমুল বিতর্ক এবং তর্কযুদ্ধ চলবে কয়েকদিন৷ চলবেই৷ তারপর?
তারপর আবার চুপচাপ থাকা৷ কেউ প্রাণ হারালে, অপহৃত কিংবা ‘গুম' হলে, কোনো অঞ্চলে মানুষের ঘর-প্রার্থনালয় পুড়লে, মনগুলো স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেলে আবার শুরু হবে কথা- বিবৃতি৷ পাল্টা কথা, পাল্টা বিবৃতির নহরও বইবে৷ কেউ বলবেন না, ‘‘হ্যাঁ, রাজনীতি অথবা ধর্মের শান্তি-সৌহার্দ্যের মর্মকথা ভুলে বা অগ্রাহ্য করে ব্যক্তিগত, দলীয়, গোষ্ঠীগত, কিংবা সাম্প্রদায়িক নষ্ট চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায় করে ফেলেছি৷ দুঃখিত৷ এমনটি আর হবেনা, হতে দেবনা৷''
র্যাব – বিতর্কিত এক বিশেষ বাহিনী
শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে৷ সেসময় বাঘা বাঘা জঙ্গিদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ব়্যাব৷ কিন্তু অসংখ্য ক্রসফায়ার, অপহরণ, হত্যার দায়ে এখন সমালোচিত এই ‘এলিট ফোর্স’৷ র্যাব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘এলিট ফোর্স’
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ এই বাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে৷’’ তবে এই বাহিনী এখন তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সমন্বিত বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়৷ এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ, দ্রুত অভিযান পরিচালনা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রদান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জঙ্গি তৎপরতা দমন
শুরুর দিকের ব়্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷
ছবি: AP
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় ২০০৫ সালে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আটক ব়্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমান (ছবিতে) এবং ৬ মার্চ সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় ব়্যাব৷ একাজে অবশ্য পুলিশ বাহিনীও তাদের সহায়তা করেছে৷
ছবি: DW
ভুক্তভোগী লিমন
২০১১ সালে লিমন হোসেন নামক এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের পায়ে গুলি করে এক ব়্যাব সদস্য৷ গুলিতে গুরুতর আহত লিমনের বাম পা উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়৷ এই ঘটনায় ব়্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তবে এখনো সুবিচার পায়নি লিমন৷ উল্টো বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন তিনি৷
ছবি: DW
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’
জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব়্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
ছবি: DW
‘ক্রসফায়ার’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ব়্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২৪ জন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কমপক্ষে সাতশো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব়্যাব জড়িত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচিত সাত খুন
২০১৪ সালের মে মাসে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে সাত ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে৷ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতাই করছেন বিলুপ্তির দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছেন৷ অথচ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘এলিট ফোর্স’৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিলুপ্তির দাবি নাকচ
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব়্যাবকে বিলুপ্তির দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার সেধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব়্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কোনো সদস্য আইন ভঙ্গ করলে তাদের চিহ্নিত করে বিচারিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP
10 ছবি1 | 10
যদি বলতেন, ইতিহাসটাই অন্যরকম হতো৷ তাহলে একাত্তরের ঘাতক-দালালরা বাহাত্তরেই হাত জোড় করে বলতো, ‘‘মানুষ হিসেবে, মুসলমান হিসেবে, দলের নেতা-কর্মী হিসেবে আমরা ঘোরতর অন্যায় করেছি, নয়তো করতে সহায়তা করেছি....ক্ষমা চাই৷'' বঙ্গবন্ধু দেশ শাসন যতটা দক্ষতা, কিংবা ব্যর্থতার সঙ্গেই করে থাকুন, তাঁকে, তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে এবং জেলখানায় ঢুকে চার নেতাকে যারা হত্যা করেছে, তারাও বলতো, ‘‘জনগণই যেখানে একদিন-না-একদিন শাসককে সরাতে পারতো, সেখানে কোলের শিশুটিকে পর্যন্ত গুলি করে মেরে আস্ফালন করা মোটেই মানুষের কাজ হয়নি৷ '' কেউ হাত জোড় করেনি৷ কেউ ‘স্যরি' বা ‘দুঃখিত' বলেনি৷ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করার উপায়টুকুও না রাখতে বরং ‘ইনডেমনিটি' হয়েছিল বাংলাদেশে৷
সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, বঙ্গবন্ধু, শিশু শেখ রাসেল, রক্ষী বাহিনী, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, খালেদ মোশাররফ- সবই যেন কিছু রাজনৈতিক শব্দ৷ ময়েজ উদ্দীন, নূর হোসেন থেকে শুরু করে হালের লিমন, এই সেদিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নিজের সন্তানকে ‘চুরি করে বিক্রি করতে যাওয়ার' অভিযোগ মাথায় নিয়ে মারা যাওয়া আসমা আক্তারও যেন তাই৷ তাঁদের কেউই যেন মানুষ ছিলেন না, ছিলেন না কারো বাবা, মা, স্ত্রী বা সন্তান৷
অথচ প্রত্যেকেই মানুষ৷ এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে চরমভাবে৷ যে সংখ্যালঘুর ঘর-মন্দির পোড়ে, যে মেয়েটি ধর্ষিত হয়, যে লোকটি র্যাব, কিংবা গুণ্ডা, ডাকাতের হাতে খুন অথবা গুম হয়, হরতালে যে শিশুটি ককটেলের আঘাতে মায়ের কোলে ঢলে পড়ে, প্রত্যেকেই মানুষ৷
৪৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে৷ জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি হয়েছে৷ সেই অর্থে মানুষ বেড়েছে অনেক৷
এবার অনেক ‘বড় মানুষ' দেখতে চাই৷
আসুন, অন্য কোথাও দাঙ্গা হয়েছে বলে, আগে কেউ খুন করেছিল বা খুনের সমস্ত সুবিধা নিয়েছিল বলে খুন-গুমের পক্ষে সাফাই গাওয়া ভুলি৷ আসুন, ‘দুঃখিত' বলতে শিখি৷