দিল্লি বিধানসভায় আস্থা ভোটে কংগ্রেসের সমর্থনে জয়ী হলো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি৷ এবার কেজরিওয়াল সরকারের সামনে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালনের আসল চ্যালেঞ্জ৷ প্রথম দিন থেকেই তোপ দাগা শুরু করেছে বিজেপি৷
বিজ্ঞাপন
রাজনৈতিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘‘শত্রুর শত্রু বন্ধু''৷ বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের অবস্থান সেই রকম৷ কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির সরকার দিল্লি বিধানসভায় আস্থা ভোটে জয়ী হওয়া একরকম নিশ্চিত ছিল৷ পক্ষে ৩৮ বিপক্ষে ৩২ ভোটে৷ ৭০ আসনের বিধানসভায় আম আদমি পার্টি সংক্ষেপে আপ-এর নিজস্ব ২৮, কংগ্রেসের ৮, জেডি-ইউ ১ এবং নির্দল ১ নিয়ে মোট ৩৮টি ভোট পড়ে পক্ষে৷ অন্যদিকে বিজেপির নিজস্ব ৩১ এবং শিরোমনি আকালি দলের ১টি, অর্থাৎ মোট ৩২টি ভোট গেছে বিপক্ষে৷
আস্থা ভোটে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন কেজরিওয়াল৷ যদিও জানেন, কংগ্রেস দড়ি ধরে টান মারলেই সরকার হবে খান খান৷ বিশ্লেষকদের মতে, কেজরিওয়াল কিন্তু এটাও জানেন যে, আম জনতা সেক্ষেত্রে কংগ্রেসকে ছেড়ে কথা বলবে না৷ কেরিওয়াল সরকার বলতে পারবে আম জনতার প্রত্যাশা পূরণের সুযোগ দিল না কংগ্রেস৷ তার অভিঘাত আগামী সংসদীয় ভোটে অবশ্যই পড়বে, এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক মহল৷ অন্যথায় কেজরিওয়ালের আসল অগ্নিপরীক্ষা হবে ভোটারদের দেয়া তাঁর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালন করা৷
বিতর্কের শেষ পর্বে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল সরকারের ১৭-দফা কর্মসূচি সভার সামনে রাখেন৷ তার শীর্ষে আছে দুর্নীতি দমন৷ আছে দিল্লির জন্য লোকপালের আদলে লোকায়ুক্ত গঠন, বস্তিবাসীদের জীবনধারণের মানোন্নয়ন, কৃষি জমি অধিগ্রহণে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি নেয়া যাবে না, মহিলা নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বাহিনী গঠন, মহিলা নিগ্রহের সময়-ভিত্তিক বিচার পর্ব শেষ করে অপরাধিদের কড়া শাস্তিদান, সরকারি হাসপাতাল ও দিল্লির সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ইত্যাদি৷ ছয়দিনের শাসনকালে তিনি দুটি কঠিন প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা রেখেছেন৷ নিম্নবর্গের জনতার জন্য বিনামূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানীয় জল সরবরাহ এবং বিদ্যুতের মাশুল এক ধাক্কায় অর্ধেক করার নির্দেশ জারি করেছেন৷ আশ্রয়হীনদের জন্য করতে চলেছেন উন্নত ব্যবস্থা৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ভোটাভুটির আগে প্রস্তাব নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক৷ প্রথম দিন থেকেই তোপ দাগতে শুরু করে বিরোধী দল বিজেপি৷ বিরোধী নেতা হর্ষবর্ধন আপ সরকারকে দেশের পক্ষে বিপজ্জনক অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় কংগ্রেসের ১৫ বছরের শাসনকালকে সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত ঘোষণা করে বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে কংগ্রেসের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিটি নেতাকে জেলে পাঠাবেন৷ আজ সেই কংগ্রেসের হাত ধরেই কেজরিওয়াল তাঁর সরকার চালাবেন৷ এর থেকে দ্বিচারিতা আর কী হোতে পারে?
এখানেই শেষ নয়, আম আদমি পার্টির স্বচ্ছ ভাবমূর্তিতে কাদা ছেটাতে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে চাঁদা নেয়ার ইস্যু তুলে বিষয়টি খোলসা করার দাবি জানান বিজেপি নেতা হর্ষবর্ধন৷ এমনকি, কাশ্মীরের মতো স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়েও কথা বলতে ছাড়েননি তিনি৷ তাঁর অভিযোগ, আম আদমি পার্টির এক বিশিষ্ট নেতা নাকি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, কাশ্মীর ভারতের অংশ হওয়া উচিত নয়৷ শুধু তাই নয়, হর্ষবর্ধন কটাক্ষ করতে ছাড়েননি আপ সরকারের সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনে৷ যেমন,মেট্রো রেলে চড়ে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়া, বিধানসভায় অনেক আপ বিধায়ক গেছেন ই-রিক্সায় চেপে, আম জনতার মতো সাদামাটা পোষাকে৷ কিন্তু আপ সরকারের নীতি হলো ভিআইপি সংস্কৃতি বর্জন করা৷