1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আহা সবাই যদি পাঁচ বছরের মেয়েটির মতো ভাবত!

১২ অক্টোবর ২০১৬

নাম তাঁর ব্রুক ব্লেয়ার৷ বয়স পাঁচ৷ ইংল্যান্ডে থাকে৷ গৃহহীনদের বাড়ি তৈরি করে দিতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছে৷ আগামী বড়দিনে তাদের উপহার দিতে ব্রুক নিজেও অর্থ জমাচ্ছে৷

Symbolbild Weihnachten Kind Mädchen
ছবি: Fotolia/famveldman

এজন্য সে তার জন্মদিনের কেকের এক টুকরো তার বাবার কাছে বিক্রি করেছে৷ এছাড়া যেখান থেকেই সে ও তার ছোট বোন টাকা পাচ্ছে তা জমাচ্ছে৷ ব্রুকের মা জানিয়েছেন এসব তথ্য৷ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে'র প্রতি ব্রুকের অনুরোধের ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে৷ ব্রিটিশ গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে হৈচৈ হওয়ায় তার সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি৷

কেন ঘটনাটি বললাম হয়ত অনেকে বুঝতে পারছেন৷ বাচ্চা মেয়েটি গৃহহীনদের দুরবস্থা দেখে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, তাদের পক্ষে হয়ত আগামী বড়দিন উদযাপন সম্ভব হবে না৷ তাই সে তাদের উপহার দেয়ার পরিকল্পনা করেছে৷ সবাই মিলে সে উৎসবটি পালন করতে চায়৷

এরকমইতো হওয়া উচিত৷ তাই না? উৎসব তো সবার জন্যই৷ আমার টাকা আছে তাই আমি ভালো জিনিস কিনবো, ভালো খাবার খাবো; আর গরিবদের সেই সামর্থ্য নেই তাই তারা উৎসব করতে পারবে না, তা তো ঠিক নয়৷

ঈদের কথাই ধরুন৷ ঈদ এলেই আমরা সবাই কার, কত সম্পদ আছে তা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, এবং সেটি করতে গিয়ে পারলে অনেক সময় সামর্থ্যের উপরে উঠে অনেক কিছু করার চেষ্টা করি৷

কিন্তু ইসলাম বলে অন্য কথা৷ আনন্দের সময়টুকু যেন সবাই একসঙ্গে উপভোগ করতে পারে, সেজন্য সামর্থ্যবানদের ‘ফিতরা' দিতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া আছে যাকাতের বিধান, যা অনেকেই দেন না৷ আবার অনেকে আছেন, যতটুকু যাকাত দেয়ার কথা ততটুকু দেন না৷ অথচ ঠিকই ছেলেমেয়েকে প্রতি ঈদে দু-তিনটি করে জামাকাপড় কিনে দেন, যা হয়ত তাদের প্রয়োজনও নেই৷ কারণ সারা বছরই তো তারা পোশাক পেয়ে থাকে৷ তারপরও ঈদ এলেই শিশু-কিশোরদের মধ্যে পোশাক কেনার প্রতিযোগিতা শুরু হয়৷ বন্ধুদের মধ্যে কে বেশি জামা পেলো তা নিয়ে আলোচনা হয়৷ অথচ এই শিশু-কিশোরদের যদি বোঝানো যায় যে, নিজের জন্য একটি অতিরিক্ত পোশাক না কিনে ঐ টাকা দিয়ে গরিব এক শিশুকে নতুন পোশাক কিনে দেয়াতেই বেশি আনন্দ, তাহলে হয়ত তারা পরবর্তীতে সেটিই করবে৷ ছেলেমেয়েকে বোঝানোর এই দায়িত্বটি মা-বাবাকেই নিতে হবে৷

আর মা-বাবাকেও প্রতিবছর ঠিকমতো যাকাত দিতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে একটু পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে৷ যাকাতের পুরো টাকা কয়েকজনের মধ্যে ভাগ করে না দিয়ে একেক বছর একেকজনকে সেটি দেয়া যেতে পারে৷ এতে করে গরিব ঐ লোকটি পুরো টাকা দিয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার মতো কিছু একটা করতে পারবে৷ ফলে পরবর্তীতে হয়ত দেখা যাবে ঐ গরিব লোকটিই অন্য কাউকে যাকাত দেয়ার মতো সামর্থ্যবান হয়ে উঠছে৷

ইদানিং দেখি ধনি ব্যক্তিদের অনেকে যাকাত দেয়ার নামে বিভিন্ন ‘লোক দেখানো' কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন৷ শহরময় মাইকিং করে গরিব লোকদের নিজের বাড়ির সামনে জড়ো করে যাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি দিচ্ছেন৷ এর মাধ্যমে তিনি পুরো শহরকেই যেন নিজের ‘উদারতা'র কথা জানাতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন৷

‘লোক দেখানো'র এই বিষয়টি চোখে পড়ে কোরবানির ঈদের সময়ও৷ কে, কার চেয়ে বড় কোরবানির পশু কিনলেন সেটি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে৷ অথচ আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত ছিল, কীভাবে পরিবেশ রক্ষা করেও পশু কোরবানি দেয়া যায়, সেটি৷ কেননা কোরবানির পর অনেকেই পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য ঠিকভাবে পরিষ্কার করেন না৷ এতে করে আশেপাশের পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে উঠে৷ এছাড়া জমে থাকা রক্ত রোগজীবাণুর বংশবিস্তারে সহায়তা করে৷

তাই সবাই যেন পরিবেশসম্মত উপায়ে কোরবানি দেন তা নিয়ে নিজ নিজ সমাজে আলোচনা করতে হবে৷ এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ সরকারকেও গত বছর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে৷ ঢাকায় পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থান ঠিক করে দেয়া হয়েছিল৷ সবাইকে সেখানে পশু নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল৷ তবে তথ্যটি নগরবাসীর অনেকে জানতেন না বলে উদ্যোগটি ততটা ফলপ্রসূ হয়নি৷ এছাড়া নির্দিষ্ট স্থানটি বাসা থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় সেখানে অনেকে কোরবানির পশু নিয়ে যাননি বলে শোনা গেছে৷ এ বছরও ১১টি সিটি করপোরেশনে ২,৯৪৩টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার

জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

সরকারের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়৷ এটি যেন সফল হয় সে ব্যাপারে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে৷ এক্ষেত্রে সবাই যেন কোরবানির পশু নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় তা আইন করে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে৷ সব নাগরিককে তাদের কোরবানির নির্দিষ্ট স্থানটি কোথায় তা সময়মতো জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে৷ আর সারা দেশে এরকম স্থান নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে৷ সরকারের এই পদক্ষেপ পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত নাগরিকদের পশু কোরবানির পর সেই স্থান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করে ফেলতে হবে৷ এক্ষেত্রে ছোটবেলায় শোনা সেই কথা - পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ - সবাই মেনে চললেই যথেষ্ট৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ