1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আড়াল হচ্ছে না ক্রিকেটের অসুখ

নোমান মোহাম্মদ ঢাকা
১৯ জুলাই ২০২১

মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার অবসর নিয়ে নাটক৷ সাকিব আল হাসানের আইপিএল খেলতে যাওয়া নিয়ে ধারাবাহিক নাটক৷ এখন হুট করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টেস্ট-অবসরের ক্লাইমেক্স৷

জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা দেড়শ রানের ইনিংসই মাহমুদুল্লাহ শেষ টেস্ট! ছবি: JEKESAI NJIKIZANA/AFP

কিছু দিন পরপরই যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট হয়ে যাচ্ছে নাটকের মঞ্চ৷ যেখানে ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বোর্ড মুখোমুখি পরষ্পরের! কেন?

ছড়িয়ে থাকা ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথা যায়৷ ছিঁটানো কাঁটাগুলো এক হয়েও তো তেমনি তৈরি হতে পারে মুকুট৷ সেই কাঁটার মুকুটই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের কলঙ্ক৷ একের পর এক ঘটনা যে ঘটেই চলেছে, যার সর্বশেষ সংযোজন মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অবসর৷

বাইরে থেকে তাই যতই সুখী পরিবারের ছবি দেখাক না কেন, অসুখটা আড়াল করা যাচ্ছে কই!

বেশ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ; অন্তত ফুরফুরে মেজাজেই তো থাকার কথা৷ প্রায় দেড় বছর পর টেস্ট দলে ডাক পেয়েছেন৷ সেটিও কুড়িয়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো সুযোগ৷ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ারসেরা দেড়শ রানের ইনিংস খেললেন জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে৷ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই ফরম্যাট থেকে বাদ দেবার সময় কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এপিটাফ লিখে ফেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহর টেস্ট ক্যারিয়ারের৷ তার জন্য এমন প্রত্যাবর্তন তো রূপকথার মতোই!

আমিনুল ইসলাম বুলবুল

This browser does not support the audio element.

অথচ ওই ইনিংস খেলার পর, ম্যাচের মাঝপথেই কিনা সতীর্থদের জানিয়ে দেন, সাদা পোশাকে এই তার শেষ ম্যাচ! মাহমুদউল্লাহ কিংবা বোর্ডের তরফ থেকে তখন কিংবা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি৷ কিন্তু কারো তা জানতে বাকিও থাকেনি৷  বিসিবি ও ক্রিকেটারদের সম্পর্কের দগদগে ঘায়ে আরো একবার ঘা পড়ে তাতে৷

সেই যে মাশরাফির অবসরের মতো৷ সাকিবের আইপিএল-যাত্রার মতো৷

বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল৷ এখন আইসিসিতে কর্মরত; থাকেন মেলবোর্নে৷ ওই সুদূরে থেকেও মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অবসর ভাবিয়ে তোলে তাকে৷ কেন এমনটা হলো, সে কারণ বিশ্লেষণে তিনি আলো ফেলতে চান ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের চুক্তিতে, ‘‘এ চুক্তি কতটা দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে হয় এবং চুক্তির শর্তগুলো কেমন অনুসরণ করা হচ্ছে, সেগুলো দেখতে হবে৷ একজন ক্রিকেটারের কিভাবে বিদায় নিতে হবে, সে ধারা ক্রিকেটারদের মুখস্ত থাকা উচিত৷ একইভাবে বোর্ডের পক্ষ থেকে ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগ কিংবা প্রধান নির্বাহীরও এ ব্যাপারে পরিষ্কার থাকা উচিত৷ তারা ক্লিয়ার থাকলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার সুযোগ থাকে৷ নইলে গোঁজামিল দিয়ে চলতে হবে৷ এটাই হচ্ছে এখন৷

মাহমুদউল্লাহর অবসরে দুই পক্ষের পারস্পরিক শ্রদ্ধার ঘাটতি বেশি করে চোখে পড়ছে আমিনুলের, ‘‘রিয়াদেরটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ তবে এখানে ফিরে যেতে হবে ওই চুক্তিতে৷ সে অনুযায়ী কি ও যখন-তখন অবসর নিয়ে ফেলতে পারে? নাকি খেলতেই হবে? এখানে আবেগের ব্যাপার আছে, আবার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটিতে ক্ষত হয়েছে বলেই মনে হয়েছে৷’’

মাহমুদউল্লাহ অবসরের ঘোষণা সতীর্থদের দিয়েছেন ম্যাচের মাঝপথে৷ মাশরাফীর অবসর আর নেয়াই হয়নি৷ আমিনুল নিজেও অবসর নেননি আনুষ্ঠানিকভাবে৷ নিজের সঙ্গে মিল খুঁজছেন না, তবে ক্রিকেটারদের অবসর-প্রক্রিয়ার একটা মানদণ্ড দেখতে চান বাংলাদেশের এই সাবেক অধিনায়ক, ‘‘আমি এর মধ্যে নিজেকে আনবো না৷ কারণ, আমি তো অবসরই নিতে পারিনি৷ আমার মতো হয়ত অনেকেই আছে, যারা সেই সুযোগটা পায়নি৷ আরেকটু পিছিয়ে গেলে দেখবেন, আমরা মাশরাফীকে অবসর নেয়ানোর জন্য জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে আনার প্ল্যান করেছিলাম কয়েক কোটি টাকা খরচ করে৷ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে এই ধরনের বৈষম্য থাকা উচিত না৷ কারণ, দুটো টেস্ট খেলে যে বিদায় নিচ্ছে, সে-ও জাতীয় দলের খেলোয়াড়৷ (ক্রিকেটারদের অবসরের) একটা স্ট্যান্ডার্ড কিছু থাকা দরকার৷’’

সেই ‘স্ট্যান্ডার্ড’ বাংলাদেশ ক্রিকেটর কোন জায়গায়ই-বা আছে!

ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক জালাল আহমেদ চৌধুরীর দুঃখটাও সেখানে৷ মাহমুদউল্লাহর টেস্ট-অবসরের কারণ অনুসন্ধানে দুয়ে দুয়ে চার মেলাচ্ছেন তিনি, ‘‘রিয়াদ তো টেস্ট স্কোয়াডে ছিল না৷ বিশেষ বিবেচনায়, বিশেষ পরিস্থিতিতে তাকে নেয়া হয়েছে৷ সে সাগ্রহে গিয়েছে৷ এখান থেকে জিম্বাবোয়েতে যাওয়া এবং ওখানে টেস্ট চালু অবস্থায় পরিবেশটা একজন সিনিয়র প্লেয়ারের জন্য হয়ত খুব সম্মানজনক ছিল না৷ নিশ্চয়ই এমন কোনো খোঁচখুচি হয়েছে, যেটি ওর কলিজার লেগেছে৷ সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে খেলোয়াড় ম্যানেজমেন্ট প্রসেসটা ঠিক না৷ এটা নির্দিষ্টভাবে বললে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির দায়িত্ব৷’’

জালাল আহমেদ চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

সেই ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান, যার কাজ নিয়ে কিছু দিন আগেই প্রশ্ন তুলেছেন বিসিবির আরেক পরিচালক এবং জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটের কার্যক্রমে তাই হতাশ জালাল আহমেদ চৌধুরী, ‘‘জিম্বাবোয়ে যাবার আগে আগে দুই বোর্ড পরিচালকের মধ্যে ব্যাপারটা, এরপর মাহমুদুল্লাহর টেস্ট অবসর- এসব বারবার প্রমাণ করে যে, আমাদের ক্রিকেট ভালো নেই৷’’

ভালো না থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিবেকও খুঁজে পাচ্ছেন না জালাল আহমেদ চৌধুরী, ‘‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বোর্ডের মধ্যে কোনো বিবেক নেই৷ সেটি ব্যক্তি হতে পারে, নীতিও হতে পারে৷ বিবেক মানে কী? যার বিবেচনা আছে৷ ক্রিকেট বোর্ডে এখন ‘অবিবেচক' অনেক কাজ দেখি৷ হয় পদ্ধতি, নয় ব্যক্তি- কোনো একজনের তো বিবেকের ভূমিকা নেয়া উচিত; যাত্রায় যেমন থাকে৷’’

যাত্রাপালায় বিবেক থাকে৷ কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট-যাত্রা এখন যেন বিবেকহীন৷ ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বোর্ড দুই তরফের ‘অবিবেচক' কাজের বহরটা Iসামনে তাই বাড়তেই থাকবে- এমন আশঙ্কা অমূলক তো নয় কিছুতেই!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ