নির্বাচনি প্রচারের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর নজরদারি চালিয়েছিলেন – এমন মারাত্মক অভিযোগ সংসদেও ধোপে টিকলো না৷ ট্রাম্প অবশ্য মরিয়া হয়ে এখনো নিজের দাবিতে অটল রয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন কংগ্রেসের সেনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্র্যাট – দুই দলেরই সদস্য রয়েছেন৷ তাঁরা ট্রাম্পের মারাত্মক অভিযোগ খতিয়ে দেখে বলেছেন, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেলিফোনে আড়ি পাতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷
এমনকি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে পরিচিত স্পিকার পল রায়ান-ও সেই সুরে সুর মেলালেন৷ তিনিও বলেন, যে ট্রাম্পের উপর নজরদারির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷
কমিটির সদস্য ও ডেমোক্র্যাটিক দলের এক সংসদ সদস্যের মতে, ট্রাম্প ফক্স নিউজ-এর সঙ্গে এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন৷
তবে কোণঠাসা হয়েও নিজের ভুল ধারণা মেনে নিতে প্রস্তুত নন ট্রাম্প৷ হোয়াইট হাউস মুখপাত্র শন স্পাইসার সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়েও সেই অভিযোগ আঁকড়ে ধরে রাখলেন৷ প্রেসিডেন্টের অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে না পেরে তিনি মরিয়া হয়ে সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে একপেশে সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ আনতে লাগলেন৷
প্রশ্ন উঠছে, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে সরাসরি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে সত্য যাচাই করে নিতে পারেন৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কোনো তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ না করে টুইটারের মাধ্যমে পূর্বসূরি বারাক ওবামার বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক অভিযোগ করে বসেছেন৷ ফক্স নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি আসলে কোনো গোয়েন্দা সংস্থার শক্তির অপব্যবহার করতে চান নি৷ সেইসঙ্গে তিনি অদূর ভবিষ্যতে নিজের অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ পেশ করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন৷
ট্রাম্পের প্রথম সাতদিনের নির্বাহী আদেশ ও নির্দেশ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের সাতদিনের মধ্যেই ডজন খানেক নির্বাহী পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার মধ্যে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ ও ‘মেমোরান্ডাম’, দুই’ই আছে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
অভিবাসন
শুক্রবারের একটি নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেন ও সিরীয় উদ্বাস্তু গ্রহণ অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখেন৷
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/K. Willens
ওবামাকেয়ার
শপথগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেন৷ আদেশটির ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর ‘‘অনাবশ্যক অর্থনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক বোঝা’’ হ্রাস করা৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার
বুধবার ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পরিদর্শন করার অবকাশে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি (মন্ত্রীকে) ‘‘অবিলম্বে দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর একটি প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণকার্য শুরু করার’’ যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Torres
‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটিজ’
বুধবার ট্রাম্প আরো একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেন, যা অনুযায়ী যে সব ‘অভয়াশ্রমের’ শহর বেআইনি অভিবাসীদের নথিবদ্ধ বা বহিষ্কার করে না, তাদের ফেডারাল অনুদান বাতিল করা হবে৷
ছবি: AP
দু’টি তেলের পাইপলাইনের অনুমতি
তাঁর কর্মকালের দ্বিতীয় দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’টি আদেশের মাধ্যমে দু’টি বিতর্কিত পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন৷ কি-স্টোন এক্সএল পাইপলাইনটি যাবে ক্যানাডা থেকে গাল্ফ কোস্টে মার্কিন রিফাইনারিগুলি অবধি: প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখেন৷ ডাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইনটি ইন্ডিয়ান উপজাতিদের এলাকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে ব্যাপক বিক্ষোভের অবতারণা ঘটে৷
ছবি: REUTERS/L. Jackson
গর্ভপাত সংক্রান্ত ‘গ্লোবাল গ্যাগ রুল’
‘বিশ্বের মুখ চেপে ধরার নীতি’ হিসেবে পরিচিত এই নীতি প্রথম বাস্তবায়িত হয় ১৯৮৪ সালে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে৷ মেক্সিকো সিটি পলিসি নামেও পরিচিত এই নীতি অনুযায়ী যে সব বিদেশি এনজিও গর্ভপাত সংক্রান্ত পরামর্শ বা সাহায্য দেয়, তাদের ফেডারাল সাহায্য না পাবার কথা৷ ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞা পুনরায় সক্রিয় করেছেন৷
ছবি: AP
টিটিপ থেকে পশ্চাদপসারণ
তাঁর কর্মকালের তৃতীয় দিনে (সোমবার) ট্রাম্প একটি মেমোরান্ডামের মাধ্যমে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তি থেকে স্থায়ীভাবে পশ্চাদপসারণ করার নির্দেশ দেন৷