1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আয়করে  পিছিয়ে বাংলাদেশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ জুন ২০১৮

বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের শীর্ষ খাত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আয়কর৷ আর এই আয়করে জিডিপি'র সঙ্গে অনুপাতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নিচে৷

ছবি: Reuters/A. Abidi

অথচ আদর্শ রাজস্ব ব্যবস্থায় আয়করের অবস্থান শীর্ষে থাকা উচিত৷ সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ইকোনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভে অব এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক-২০১৮' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলে মোট জিডিপির সঙ্গে আয়কর ঘাটতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷ পার্থক্য সাড়ে সাত শতাংশ৷ বাংলাদেশের পরে এই অঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পার্থক্য ভুটানের৷ তাদের রাজস্ব আয় ও জিডিপির অনুপাতে পার্থক্য ৬ দশমিক ৭ শতাংশ৷ এরপর আফগানিস্তানের ৬ শতাংশ৷ সর্বনিম্ন পার্থক্য মালয়েশিয়ার, ১ দশমিক ৩ শতাংশ৷

জাতীয় রাজস্ব ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুনের হিসবে বাংলাদেশে ৩৫ লাখ টিনধারী (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) থাকলেও আয়কর দিচ্ছেন মাত্র ১৯ লাখ ৫০ হাজার জন৷

কিন্তু বাস্তবে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে আয়করদাতা আরো অনেক বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইন্সটিউট অব ডেভেলমমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণভাবে আদর্শ রাজস্ব ব্যবস্থায় আয়কর রাজস্ব আদায়ের শীর্ষ খাত হিসেবে থাকে৷ কারণ, এটা ডাইরেক্ট ট্যাক্স৷ এটা থেকে রাজস্ব আদায়ের হিসাব যেমন সহজ, অনিশ্চয়তাও কম৷ কিন্তু আমাদের এখানে বিপরীত৷ ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয়৷ এটা ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স৷ সরকারের হাতে এই ট্যাক্সের অর্থ আসতে সময় লাগে অনেক বেশি৷''

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদের মতে, ‘‘আয়করের নেট আরো বাড়ানো উচিত৷ কারণ, দেশে যে পরিমাণ আয়কর দেয়ার যোগ্য লোক আছেন, তাঁদের সবাই আয়কর দেন না৷ এটা দু'দিক থেকে হচ্ছে৷ জাতীয় রজস্ব বোর্ডের কার্যকর উদ্যোগের অভাব আছে৷ আর আয়কর না দেয়ার প্রবণতাও আছে৷ আমাদের ওই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে যে, গ্রামের ছোট ব্যবসায়ী ও কৃষকের আয়কর দেয়ার ক্ষমতা নেই৷ অন্যদিকে বড় ব্যবসায়ী এবং কর্পোরেট সেক্টরে আয়কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা আছে৷ কর্পোরেট সেক্টরে  যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য নগদ অর্থে বেতন পরিশোধের প্রবণতা আছে৷ ফলে সরকার আয়কর পায়না৷নিয়োগদাতাদের উচিত হবে তাঁদের ইনকামট্যাক্স কেটে রেখে তা জমা দেয়া৷ এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী তাঁদের আয় কম দেখান৷''

‘আয়করের নেট আরো বাড়ানো উচিত’

This browser does not support the audio element.

তিনি মনে করেন, আয়কর দেয়ার যোগ্য লোকের সংখ্যা বাড়াতে প্রয়োজনে এনবিআর কার্যকর অনুসন্ধান চালাতে পারে৷

বাংলাদেশে করমুক্ত আয়ের সীমা বছরে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাধারণ বিবেচনায় বাংলাদেশের কমপক্ষে তিন কোটি মানুষ আয়কর দেয়ার যোগ্য৷ দেশের মানুষের আয় বাড়ছে৷ বাংলাদশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে৷ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে৷ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, দেশে আয়কর দেয়ার যোগ্য অনেক নাগরিকই আয়কর দেন না৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আয়কর আদায়ে কর প্রশাসন নির্দিষ্ট কিছু গ্রুপেই সীমাবদ্ধ৷ আরো যে সম্ভাবনাময়, আরো নতুন করদাতা গ্রুপ তৈরি হয়েছে, তা তাঁরা খেয়াল করছেন না৷ এটা করার জন্য যে কাঠামো দরকার তা-ও নেই৷ তাঁরা মনে করেন, নতুন করদাতা খুঁজতে গিয়ে যে পরিমাণ ব্যয় হবে, সেই পরিমাণ রিটার্ন আসবে কিনা তা নিয়েও তাঁদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে৷ তাছাড়া মানুষের মধ্যে আয়কর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও আছে৷ আইনে ফাঁক আছে৷ সেই ফাঁককে তারা কাজে লাগান৷''

আয়কর না দেয়ার প্রবণতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘করদাতারা তাঁর দেয়া করের রিটার্ন দেখতে চান৷ তাঁর করের টাকায় তিনি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কী বেনিফিট পাচ্ছেন, তা দেখতে চান৷ তবে এখন বেশ উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে৷ তাই আয়কর দেয়ার আগ্রহ বাড়ছে৷ আয়কর মেলাগুলোতে আয়কর দিতে আগ্রহী মানুষও বাড়ছে৷''

‘আয়কর দেয়ার যোগ্য অনেক নাগরিকই আয়কর দেন না’

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘কর দেয়ার জটিলতা এবং হয়রানির আশঙ্কাও নাগরিকদের আয়কর দিতে নিরুৎসাহিত করে৷''

সাধারণভাবে  জিডিপির অনুপাতে ৩০ শতাংশ আয়কর থেকে এলে সেটা একটি আদর্শ অবস্থা৷ কিন্তু ১৫ থেকে ২০ ভাগওকেও ভালো অবস্থা ধরে নেয়া যায়৷ বাংলাদেশে এই অনুপাত ১০ ভাগেরও কম৷ কিন্তু সম্ভাবনা অনেক, যা কাজে লাগানো দরকার৷

তবে এই আয়করব্যবস্থা হতে হবে ‘প্রগ্রেসিভ'৷ বেশি আয়ের আনুপাতিকহারে করও বেশি৷ কম আয়ে আনুপাতিক হারে কম কর৷ তা না হলে আয়কর সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা বা পীড়াদায়ক হতে পারে৷ অন্যদিকে ভ্যাট সবার ওপরে সমান হারে বর্তায়৷ একই ব্র্যান্ডের একটি সাবান কিনতে গিয়ে একজন উচ্চবিত্ত যে পরিমাণ ভ্যাট দেন, একজন নিম্নবিত্তকেও সেই পরিমাণ ভ্যাটই দিতে হয়৷ তাই নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যে যত ভ্যাট, সাধারণ মানুষের তত কষ্ট৷ ড. নজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে চাল, ডালসহ নিত্য পণ্যে ভ্যাট নেই৷ এটা ভালো দিক৷ তবে আয়করকেই সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ের টার্গেটে নিতে হবে, কারণ, যার আয় ভালো, তিনি আয়কর দেবেন৷''

এদিকে সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘‘রাজস্ব আয় বাড়াতে উপজেলা পর্যায়ে আরো ১০৩টি আয়কর অফিস স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ বর্তমানে এ উৎস থেকে মোট রাজস্বের ৩৭ শতাংশ আসে৷ এ হারকে ২০২০-২১ সালে মোট রাজস্বের ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷ ২০১৯ সালের মধ্যে কর জিডিপির অনুপাত ১৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ