আয়ারল্যান্ডে নিয়মিত হচ্ছেন অনথিভুক্ত বাংলাদেশিরা
১৪ আগস্ট ২০২২২০১৯ সালে স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য হয়েআয়ারল্যান্ডে যান আরমান (ছদ্মনাম)৷ এরমধ্যে দেশটিতে আশ্রয় আবেদন করলেও তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাননি৷ চলতি বছর আয়ারল্যান্ড সরকার ‘দীর্ঘমেয়াদি অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণ' স্কিম চালুর ঘোষণা দিলে দেরি করেননি তিনি৷
ইনফোমাইগ্রেন্টসকে আরমান বলেন, ‘‘আমি তিন বছর ধরে আশ্রয় আবেদনের সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোনো সাক্ষাৎকারের ডাক পাইনি৷ স্কিম ঘোষণার পর শুরুতেই যারা আবেদন করেছে আমি তাদের একজন৷ ১০ ফেব্রুয়ারি আমি আবেদন করি৷ ৫ মে আমার চিঠি ইস্যু হয়৷ কিন্তু হাতে পেয়েছি ১৫ মে৷''
এই চিঠির মাধ্যমে আরমান, তার স্ত্রী ও তিন সন্তান এখন আয়ারল্যান্ডের নথিভুক্ত নিয়মিত অভিবাসীতে পরিণত হয়েছেন৷ শুধু তিনি নন, তার মতো কয়েকশো আশ্রয়প্রার্থী ও অনিয়মিত বাংলাদেশি এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন৷ স্কিমটির আওতায় যাদের আবেদন গৃহীত হচ্ছে তারা এককালীন দুই বছরের বসবাস ও কাজের অনুমতি পাচ্ছেন, যা পরবর্তীতে নবায়ন করা যাবে৷ এক পর্যায়ে তারা দেশটির নাগরিক হওয়ারও সুযোগ পাবেন৷
‘এমন সুযোগ একবারই'
আয়ারল্যান্ডের সরকারের হিসাবে বিভিন্ন দেশের১৭ হাজার অনথিভুক্ত অভিবাসী রয়েছেন দেশটিতে, যাদের মধ্যে তিন হাজার শিশু৷ এই অভিবাসীদের নিয়মিতকরণ বা বৈধভাবে বসবাস ও কাজের সুযোগ দিতে গত জানুয়ারিতে বিশেষ স্কিমটি চালু করে সরকার৷ ‘এক প্রজন্মের জন্য একবারই সুযোগ,' এমন ঘোষণা দিয়ে অভিবাসীদের এই স্কিমের আওতায় আবেদনের আহ্বান জানায় আয়ারল্যান্ডের আইন মন্ত্রণালয়৷
একা বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে যারা অন্তত চার বছর ধরে আয়ারল্যান্ডে আছেন তারা আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন৷ আর পরিবারসহ থাকাদের ক্ষেত্রে এই সীমা ছিল তিন বছর৷ সেই সঙ্গে যারা আশ্রয় আবেদন করেছেনএবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছেন তারাও এই স্কিমে আবেদন করতে পেরেছেন৷ অনিয়মিতদের জন্য ৩১ জুলাই ও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য ৭ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা ছিল৷
দেশটির আইন মন্ত্রণালয়ের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাত হাজার ৮০০ জনের বেশি অভিবাসী আবেদন করেছেন৷ প্রতি ছয়জনের একজন বা ১,৩১৬ জন ছিলেন ব্রাজিলের, ১০৭৪ জন পাকিস্তানের, ১০১৯ জন চীনের, ৭২৫ জন ফিলিপিনো, ৩৭৩ জন নাইজেরিয়ান এবং ২৫৩ জন ভারতীয়৷ আর বাংলাদেশি আবেদন করেছেন ২৪১ জন৷ আছেন মিশর, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়ার নাগরিকও৷
সিদ্ধান্ত পেতে শুরু করেছেন অভিবাসীরা
আরমান জানান, দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সাইটে আবেদন করার পর তিনি তাদের কাছ থেকে ফিরতি মেইল পান৷ তাকে একটি লিংক পাঠানো হয় সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য এবং কোনো অপরাধের রেকর্ড আছে কিনা তার প্রমাণ দিতে বলা হয়৷ এরপর তথ্য যাচাই শেষে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চিঠিতে সিদ্ধান্ত জানানো হয়৷
আরমান জানান, তার পরিচিত যেসব বাংলাদেশি এই স্কিমের আওতায়আবেদন করেছেন তাদের অনেকেই এরইমধ্যে সিদ্ধান্ত পেয়েছেন৷ কারো আবেদন এখন পর্যন্ত প্রত্যাখ্যানের তথ্য তিনি পাননি৷ একই তথ্য জানান আরেক বাংলাদেশি মিঠু (ছদ্মনাম)৷ ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি বলেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশিরা নন, এশীয় বা অন্য যারাই এখন পর্যন্ত চিঠি পেয়েছেন আমার জানামতে তাদের সবারই আবেদন গৃহীত হয়েছে৷''
তিনি আশ্রয় আবেদন করে গত আট বছর দেশটিতেঅবস্থান করছিলেন৷ আর ফেব্রুয়ারিতে স্কিমে আবেদন করে জুনে তার নথি পেয়েছেন৷ মিঠু বলেন, ‘‘আবেদনে একটি কলামে বলা ছিল স্কিমে আপনার পেপার গৃহীত হলে অ্যাসাইলাম (আশ্রয় আবেদন) অব্যাহত রাখবেন কিনা৷ আমার মূল লক্ষ্যই ছিল পেপার (বসবাস ও কাজের অনুমতি) পাওয়া৷ সেটি যেহেতু হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে আমার এখন আর অ্যাসাইলামের প্রয়োজন নেই৷''
আয়ারল্যান্ডের বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, স্কিমের আওতায় এরইমধ্যে ১,৫০০ অনথিভুক্ত অভিবাসী বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পেয়েছেন৷ এখনও ৬,৩০০ এর উপরে আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে৷
নাগরিকত্বের হাতছানি
নিয়মিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অভিবাসীরা এখন আয়ারল্যান্ড সরকারের প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন৷ আরমান বলেন, ‘‘এখানে সবাই চায় বৈধ থাকার জন্য৷ কারণ অবৈধভাবে থাকলে অনেক সুবিধাই আপনি পাবেন না৷ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন বা অনেক চাকরির ক্ষেত্রে আবেদন করতে গেলে ডকুমেন্টস লাগে৷ অনেকে চাকরিদাতারা অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি থাকা সত্ত্বেও আশ্রয়প্রার্থীদের চাকরি দিতে চান না৷ কিন্তু এখন একজন আইরিশের যে অধিকার আছে আমিও সেই একই অধিকার ভোগ করব৷ আমার পরিবারও তাদের মতো সব সুবিধা ভোগ করবে৷''
অন্যদিকে অনিয়মিত অবস্থায় থাকার কারণে এতদিন যারা নিজ দেশে বা আয়ারল্যান্ডের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাননি তারা সেই সুযোগ পাচ্ছেন৷ গত আট বছর আয়ারল্যান্ডে থাকা মিঠু এখন দেশে যেতে চান তার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি বরাবরই আশাবাদী ছিলাম কাগজ পাওয়ার ব্যাপারে৷ এখন আমি দেশে যাব৷ আর পাঁচ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করব৷''
সব শর্ত পূরণ করলে স্কিমের আওতায় নিয়মিত হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্করা পাঁচ বছর পর ও আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়া শিশুরা তিন বছর পর নাগরিক হওয়ার আবেদন করতে পারবেন৷
প্রথম প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২২ ইনফোমাইগ্রেন্টস
অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷