ইস্তানবুলের আয়া সোফিয়া বদলে গেলেও গ্লি নামের বিড়ালটিকে বের করে দেয়া হবে না৷ সে থাকবে সেখানেই৷ ইনস্টাগ্রামে গ্লির হাজারো ফলোয়ার আছেন৷ এমনকি সাবেক এক মার্কিন প্রেসিডেন্টও তার ভক্ত৷ খবর রয়টার্সের৷
বিজ্ঞাপন
আয়া সোফিয়ার গ্লি নামের বিড়ালটি খুব বিখ্যাত৷ কিন্তু সম্প্রতি এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে মসজিদে রূপান্তরের সিদ্ধান্তের পর অনেকেই ভাবছিলেন গ্লি-র ভাগ্যে কী ঘটবে৷ স্থানীয় পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হচ্ছিল৷
আয়া সোফিয়া মিউজিয়াম থাকার সময় ধুসর রঙের শরীর ও সবুজ জ্বলজ্বলে চোখের গ্লি অনেক দর্শনার্থীর প্রিয় হয়ে ওঠে৷ এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে এক সফরে গ্লির সঙ্গে ছবি তোলেন৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বলছে, বিড়ালটি এখানেই থাকবে৷
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন রয়টার্সকে বলেন যে, গ্লিসহ যেসব বিড়াল এ জায়গাটিতে আছে, তারা এখানেই থাকবে৷
‘‘এই বিড়ালটি অনেক বিখ্যাত হয়ে গেছে এবং আরো বিড়াল আছে যেগুলো এতটা বিখ্যাত নয়৷ এই বিড়ালটি তো থাকছেই, অন্য বিড়ালগুলোও আমাদের মসজিদে থাকতে পারবে,’’ বলেন তিনি৷
উমুত বাহচেচির কাছে এটি সুখবর হয়ে এসেছে, যিনি চার বছর ধরে গ্লির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি চালাচ্ছেন৷ চার বছর আগে তিনি এটি শুরু করেন এবং এখন এর ৪৮ হাজার ফলোয়ার৷ এই অ্যাকাউন্টটি বিড়ালটির ছবিতে ভরা৷ এমনকি দর্শনার্থীরাও তাদের তোলা ছবি ট্যাগ করেছেন৷
‘‘আমি যখনই (আয়া সোফিয়ায়) যেতাম গ্লিকে দেখতাম৷ সে মডেলের মতো পোজ দিতো,'' উমুত বলেন৷ ‘‘মানুষ আমাকে লিখতো, ‘গ্লি তোমাকে দেখতে ইস্তানবুলে আসবো৷' খুব ভালো লাগতো৷''
৯০০ বছর ধরে আয়া সোফিয়া খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন ক্যাথিড্রাল ছিল৷ এরপর অটোমানরা এ অঞ্চল দখল করে একে মসজিদে রূপান্তর করে৷ ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত এটি মসজিদ ছিল৷
তুরস্কের একটি আদালত সম্প্রতি রায় দেন যে, স্থাপনাটিকে মসজিদ থেকে মিউজিয়ামে পরিণত করা আইনসিদ্ধ ছিল না৷ প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সাথে সাথেই একে মসজিদ হিসেবে ফের ঘোষণা দেন৷ শুক্রবার সেখানে ৮৬ বছর পর আবারো জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়৷
জেডএ/এসিবি (রয়টার্স)
এর্দোয়ানের নেতৃত্বে আয়া সোফিয়ায় জুম্মার নামাজ
গির্জা থেকে মসজিদ, মসজিদ থেকে জাদুঘর, আবার জাদুঘর থেকে মসজিদ হলো ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য আয়া সোফিয়া৷ শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের নেতৃত্বে আয়া সোফিয়ায় জুম্মার নামাজে অংশ নেন মুসল্লিরা৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নেতৃত্বে এর্দোয়ান
শুক্রবার বিশাল মুসল্লি জমায়েত হয় আয়া সোফিয়ায়৷ ধর্মীয় টুপি মাথায় দিয়ে কোরান থেকে কয়েকটি আয়াত পাঠ করেন প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান৷ প্রায় ৯০ বছর পর নামাজ আদায় হলো গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়া ১৪৮৩ বছরের পুরনো এই স্থাপনায়৷
ছবি: picture-alliance/AA/S. Zeki Fazlioglu
ভিভিআইপি উপস্থিতি
এর্দোয়ানের মন্ত্রিসভার অনেক মন্ত্রী ছাড়াও বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাও নামাজে উপস্থিত ছিলেন৷ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী আলী এরবাস খুতবায় বলেন, ‘‘ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদে হামলা হচ্ছে, বলপূর্বক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, বোমা হামলা হচ্ছে, এমনকি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/press service Hagia Sophia/E. Oz
উপচে পড়া ভিড়
করোনা সংক্রমণে নানা বিধিনিষেধ থাকলেও শুক্রবার আয়া সোফিয়ায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে৷ তবে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হয়৷ অনেকেই ইতিহাসের অংশ হতে এদিন ভিড় জমান আয়া সোফিয়ায়৷
দুই সপ্তাহ আগেও আয়া সোফিয়া ছিল জাদুঘর৷ তবে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এর্দোয়ান এই স্থাপনাটিকে আবার মসজিদ হিসেবে ঘোষণা দেন৷ এই উদ্যোগ এর্দোয়ানের ইসলামপন্থি দল একে পার্টি ছাড়াও তুর্কি জাতীয়তাবাদীদেরও সমর্থন পেয়েছে৷ তবে তুর্কি সেক্যুলাররা এই স্থাপনাকে এতদিন খ্রিস্টান ও মুসলিমদের ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে দেখতেন৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
বিরোধীরা কী বলছেন?
সরকারপন্থিদের পক্ষ থেকে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের বিরোধীতাকারীদের নামাজ পড়তে না আসা নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে৷ তবে রিপাবলিকান পিপলস পার্টির সদস্য এবং ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু জানিয়েছেন, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আমন্ত্রণই জানানো হয়নি৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
পর্যটনের কী হবে?
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আয়া সোফিয়া আগের মতোই সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷ তবে ভেতরে খ্রিস্ট ধর্মের নানা প্রতীক নামাজের সময় ঢেকে দেয়া হবে৷ আগে আয়া সোফিয়ায় প্রবেশমূল্য দিয়ে টিকেট কেটে ঢুকতে হতো৷ এখন বিনামূল্যেই পর্যটকেরা আয়া সোফিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন৷