1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইংরেজি না জানার পরিণতি আত্মহত্যা!

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৮ আগস্ট ২০১৯

ইংরেজি বলার অক্ষমতা কেড়ে নিল মেধাবী ছাত্রের প্রাণ৷ কলকাতার নামী কলেজের আদব কায়দার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেননি মফস্বলের তরুণ৷ অবসাদে রেললাইনে আত্মহত্যা করেছেন তিনি৷

Symbolbild Selbstmord Indien
ছবি: Getty Images/AFP

মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান৷ বাংলা যার মাতৃভাষা, তাদের অহঙ্কার আবার একটু বেশিই৷ এই ভাষাকে রক্ষার জন্য জাতিবিদ্বেষী, ধর্মোন্মাদদের গুলি বুক পেতে নিয়েছে বাঙালি৷ তৈরি হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ৷ কিন্তু, বাংলাদেশের পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গে কি মাতৃভাষা তার মর্যাদা হারাচ্ছে? নিজের প্রাণ দিয়ে আমাদের উদ্দেশে এই প্রশ্নটি রেখে গিয়েছেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পড়ুয়া হৃষীক কোলে৷

হুগলি জেলার রেললাইনে হৃষীকের ধড় ও মুণ্ড বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মিলেছে৷ পুলিশের উদ্ধার করা নোটের সারমর্ম এই যে, কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর ইংরেজি বলা বা বোঝায় স্বচ্ছন্দ ছিলেন না বলে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না তিনি৷ তাই ক্লাসের পঠনপাঠন থেকে ছাত্রাবাসের বন্ধুদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল৷ তার জেরে অবসাদের শিকার  হৃষীক যার পরিণতি আত্মহত্যা৷

টাটার গাড়ি কারখানা ও সেই সংক্রান্ত আন্দোলনের সূত্রে খ্যাতি পাওয়া হুগলির সিঙ্গুর আর এরই মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র হৃষীক৷ এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজিতে  ৮৪  আর সব বিষয়ে ৯৪ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে স্কুলের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় পাশ করা ছেলেটির মেধায় ঘাটতি ছিল না৷  তবে কলেজের ক্লাস শুরু হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে মানিয়ে নিতে না পারা বা এই পরিণতি কারও পক্ষেই আঁচ করা সম্ভব হয়নি৷

হৃষীকের মতোই গ্রাম থেকে শহরে পড়তে এসেছিলেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার৷ সেই সময় মাতৃভাষায় দক্ষতা শিক্ষার্থীর অহঙ্কার ছিল, অন্য ভাষায় পটু না হলে আজকের মতো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সামনে পড়তে হত না৷ তিনি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের দায়িত্ব সামলেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা বাংলা মাধ্যমে পড়েছি৷ শহরে এসে ইংরেজিতে ক্লাসে লেকচার শুনেছি৷ ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি৷ একটা কালচার শক থাকে এ সব ক্ষেত্রে৷ ভালো বাংলা জানার জন্য গর্ব হওয়া উচিত৷ তার বদলে অন্য ভাষায় যথেষ্ট দক্ষ না হলে পিছিয়ে থাকা বলে চিহ্নিত হতে হয়৷ এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে ছেলেমেয়েরা

অনন্যা চক্রবর্ত্তী

This browser does not support the audio element.

কবি জয় গোস্বামী নদিয়া জেলার মানুষ৷ তিনি কলকাতায় এসে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শহরে এসে এখানকার মানুষদের ব্যঙ্গের মুখে পড়তে হয়েছে৷ ওদের সঙ্গে আমাদের ফারাক ছিল৷সব মুখ বুজে সহ্য করেছি৷''

 রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর মতে, ‘‘ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণা থেকে মনে করা হয়, যারা ইংরেজি জানে তারা শিক্ষিত, যারা জানে না তারা অশিক্ষিত৷আদতে ইংরেজি জানার উপর শিক্ষিত হওয়া নির্ভর করে না৷ইংরেজি মাধ্যমে যে কলেজে পড়াশোনা হয়, সেখানে বাংলা মাধ্যম থেকে ছেলেমেয়েরা পড়তে এলে সমস্যা হতে পারে৷এই সমস্যা দূর করার জন্য দরকার কাউন্সেলিংয়ের৷ কলেজ কর্তৃপক্ষের গোড়াতেই এই ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিং করাতে হবে৷''

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে কাউন্সেলিংয়ের পরিকাঠামো রয়েছে৷এখানকার শিক্ষকরাও খুব সংবেদনশীল বলে মত অনন্যার৷তাহলে কেন হৃষীক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারল না?  অনন্যা বলেন, ‘‘মানসিক সমস্যা হলে ছাত্রকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ কথা বলতে হবে কাউন্সেলরের সঙ্গে৷ নইলে তাঁর অবসাদের কথা জানা মুশকিল৷''

রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন দ্রুত একটি নির্দেশিকা পাঠাতে চলেছে সব ইংরেজি মাধ্যম কলেজে৷ তাতে কাউন্সেলিং-সহ আরও কিছু নির্দেশ থাকবে যাতে হৃষীকের মতো পরিণতি আর কোনো ছাত্রের না হয়৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি সাহায্য চায়, সে ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং-সহ অন্য বিষয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত কমিশন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ