২০২০ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হবে জাপানের রাজধানী টোকিওতে৷ তার আগে শহর জুড়ে সাজো সাজো রব৷ কিন্তু ইংরেজি সাইনবোর্ডের বেলায় দেখা দিচ্ছে নানা বিভ্রাট৷
বিজ্ঞাপন
অলিম্পিক গেমস শুরু হতে বাকি মাত্র এক বছর৷ কিন্তু এখনও পুরোপুরি তৈরি নয় টোকিও৷ বাইরে থেকে আসা মানুষেরা যাতে সহজে ঘুরে বেড়াতে পারেন, বুঝতে পারেন দিকনির্দেশ, সেজন্য টোকিওর চারদিকে ইংরেজি সাইনবোর্ড বসানো হচ্ছে৷
সম্প্রতি, টোকিও টুরিজম এজেন্সি একটি সমীক্ষা চালায়, যেখানে এই ইংরেজি সাইনবোর্ডের ব্যবহারিক গুণ ও সঠিক তথ্য নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে অদ্ভুত সব তথ্য৷
অনুবাদের মারপ্যাঁচ
দুই মাস ধরে চলা এই সমীক্ষার শেষে দেখা যায় জাপানের ইংরেজি সাইনবোর্ডগুলির বেশিরভাগই ভুলে ভরা৷ শিশুদের জন্য সংরক্ষিত জায়গায় শিশুর বদলে লেখা রয়েছে ‘বামন'! সাবেক জেলের বাইরে অতিথিদের জন্য লেখা রয়েছে বার্তা: ‘‘অভিযুক্ত জুতা খুলে জেলের ভেতরে ভদ্রভাবে আসুন৷''
টোকিও অলিম্পিকে প্রযুক্তির কাণ্ডকীর্তি
অলিম্পিকের আয়োজনটা যখন জাপানে তখন প্রযুক্তির চমকতো থাকবেই৷ ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক অত্যাধুনিক আর ভবিষ্যত সব প্রযুক্তি দিয়েই দর্শকদের হতবাক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Tsuno
শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি
টোকিও অলিম্পিকে যত বিদ্যুতের ব্যবহার হবে তার সমস্ত যোগানই আসবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে৷ বায়ু আর সৌরবিদ্যুতে আলোকিত হবে স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে অ্যাথেলেট ভিলেজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Yamanaka
ফোন থেকে মেডেল?
টোকিও অলিম্পিকে খেলোয়াড়দের গলায় যে মেডেল উঠবে সেটি তৈরি হবে ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট থেকে৷ মোবাইল ফোনে অল্প বিস্তর স্বর্ণ, তামা আর রূপা থাকে৷ সেগুলো আলাদা করেই ৫,০০০ মেডেল তৈরি হবে৷ এজন্য ৮০ হাজার মোবাইল ফোন ও ডিভাইস সংগ্রহ করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Ilnitsky
চালকবিহীন গাড়ি
টোকিও অলিম্পিকের দর্শনার্থীদের যাতায়তে থাকছে চালকবিহীন ট্যাক্সি৷ স্মার্টফোনের মাধ্যমে ডাকলে ট্যাক্সি হাজির হবে, দুয়ার খুলবে এবং গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়াও পরিশোধ করা যাবে৷ এসব ট্যাক্সির পরীক্ষামূলক যাতায়াতের অভিজ্ঞতা নিতে এরইমধ্যে ১,৫০০ আবেদন জমা পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাহায্যকারী রোবট
বিশ্বব্যাপী রোবট প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দেয়া দেশ জাপান৷ টোকিও অলিম্পিকে তাই এর ব্যাপক উপস্থিতি থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক৷ আগত দর্শকদের সহযোগিতায় মানব সদৃশ যন্ত্রের বড় একটি দলকে প্রস্তুত করছে জাপান, যারা ভেন্যুগুলোতে দর্শকদের দোভাষী ও তথ্য প্রদান বিষয়ক সেবা দেবে৷ কিছু রোবট প্রতিবন্ধী আর বয়স্কদের জিনিসপত্র বহনেও সহযোগিতা করবে৷
ছবি: DW/A. Goretzki
প্রযুক্তি শনাক্ত করবে চেহারা
টোকিও অলিম্পিকের ভেন্যুগুলোতে খেলোয়াড় আর কর্মকর্তাদের প্রবেশ দুয়ারে থাকবে বিশেষ একটি যন্ত্র৷ তার সামনে দাঁড়ালেই চেহারা শনাক্ত হবে এবং প্রবেশের অনুমতি মিলবে৷ এজন্য ২০২০ সালের জুলাইতে আয়োজন শুরুর আগেই তিন লাখ খেলোয়াড় আর কর্মকর্তাকে একটি ডেটাবেজ-এ ছবি সরবরাহ করতে হবে৷ এর বাইরে কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলে সেটি তাৎক্ষণিকভাবেই জানা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/picturedesk/H. Ringhofer
নিরাপত্তায় ড্রোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
১৪ হাজার নিরাপত্তা কর্মীর শার্টের সাথে স্মার্টফোন যুক্ত থাকবে, যেটি সার্বক্ষণিক ভিডিও করে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে পাঠাতে থাকবে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সেই ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দেবে সন্দেহজনক কিছু হচ্ছে কিনা৷ সেই সঙ্গে নিরাপত্তা নজরদারিতে ৫০ থেকে ৭০ মিটার উচ্চতায় উড়ে বেড়াবে ড্রোনও৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Stillwell
6 ছবি1 | 6
এরিক ফিওর বিগত ১৫ বছর ধরে জাপানে ফরাসি ভাষা শেখান৷ এমন ইংরেজির ধরন দেখে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, যে আমি আসলেই এমন জিনিস পড়ছি৷''
গ্রেগরি হ্যাডলি জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বুঝতে হবে, এমন অনুবাদ শুধু জাপানি ভাষীরাই বুঝতে পারবেন৷ এই ইংরেজি এমন কোনো ব্যক্তি বুঝতে পারবেন না, যার মাতৃভাষা হয়তো ইংরেজি৷''
যান্ত্রিক ইংরেজি
জাপানের বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত আছেন বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ৷ কাজের সুবিধার্থে অফিসে হয়তো অনেকেই ইংরেজি বলে থাকেন৷ কিন্তু তবুও সোশাল মিডিয়ায় বারবার উঠে এসেছে জাপানে মানুষের ‘গুগল'-নির্ভর ইংরেজির দৌড়৷
একটি আইটি সংস্থায় কাজ করা ইংরেজিভাষী এক ব্যক্তি জানান, ‘‘একবার আমার এক সহকর্মী আমার কাছে আসেন একটু পোস্টারের ইংরেজি অনুবাদে সাহায্য চাইতে৷ আমি তাঁকে সাহায্য করে দেবার পর দেখি ফাইনাল পোস্টারে সে গুগলের করে দেয়া অনুবাদটিই রেখে দিয়েছে৷''
সারা বিশ্ব থেকে বহু মানুষ পর্যটনের জন্য জাপানে বেড়াতে যান৷ ২০১৮ সালে সেখানে গেছেন প্রায় তিন কোটি বিদেশি নাগরিক৷ সেখানে হোটেল থেকে বিমানবন্দর সর্বত্র এমন ইংরেজি আসলেই দেশের অন্যতম বাধা, যা আসন্ন অলিম্পিক গেমসের সময় কোনো বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকের ধারণা৷