ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে পুরুষের সমান অর্থ পুরস্কার পাবেন নারীরা
৮ মার্চ ২০২০
ইংলিশ ক্রিকেটের নতুন টুর্নামেন্ট ‘দ্য হান্ড্রেড'-এ নারী-পুরুষ উভয় ক্রিকেটারই সমান অর্থ পুরস্কার পাবেন৷ এটি ক্রিকেটে লিঙ্গ সমতা তৈরির একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেয় ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলেস ক্রিকেট বোর্ড, ইসিবি৷ তারা জানায়, নতুন এই টুর্নামেন্টের পুরস্কারের মোট অর্থ ছয় লাখ পাউন্ড বা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা৷ এই অর্থ নারী ও পুরুষ প্রতিযোগিতায় সমান সমান ভাগে ভাগ করে দেয়া হবে৷ আসছে জুলাইয়ের ১৭ তারিখ টুর্নামেন্টের প্রথম সংস্করণটি মাঠে গড়ানোর কথা রয়েছে৷ চলবে আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত৷
ইংল্যান্ডে যুগ যুগ ধরে চলে আসা কাউন্টি প্রথা ভেঙে দ্য হান্ড্রেড নামের এই টুর্নামেন্ট চালু করা হচ্ছে৷ আটটি শহরভিত্তিক দল এতে অংশ নেবে৷
এই টুর্নামেন্টে চমকপ্রদ কিছু নিয়মও চালু করতে যাচ্ছে ইসিবি৷ প্রত্যেক দল ১০০টি করে বল খেলবে এবং ১০ বলে এক ওভার হবে৷ সেক্ষেত্রে একেক বোলার এক নাগাড়ে পাঁচটি বা ১০টি বল করতে পারবেন৷ প্রত্যেক ফ্র্যাঞ্চাইজি একটি পুরুষ ও একটি নারী দল গড়বে৷
‘‘নারীদের জন্য এটা একটা বিরাট ঘোষণা,'' ইংলিশ নারী দলের অধিনায়ক হেদার নাইট বলেন৷ তিনি লন্ডন স্পিরিট দলের নেতৃত্বে থাকবেন৷
নাইট আরো বলেন, ‘‘নারীদের পেশাদার ক্রিকেট রোমাঞ্চকর পথে হাঁটছে৷ তবে এখনো লিঙ্গ সমতায় পৌঁছাতে অনেক দূর যেতে হবে৷ দ্য হান্ড্রেডের এই উদ্যোগ সেই পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷''
অস্ট্রেলিয়ায় চলমান টি২০ বিশ্বকাপে ইংলিশ নারী দলের অধিনায়কের দায়িত্বে রয়েছেন নাইট৷ ‘‘নতুন এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমরা মুখিয়ে আছি এবং আশা করছি এতে করে অনেক নতুন ছেলেমেয়ে ব্যাট বল হাতে নেবে,'' বলেন তিনি৷
দ্য হান্ড্রেড নারী প্রতিযোগিতার মূল সমন্বয়ক বেথ ব্যারেট-ওয়াইল্ড বলেন, ‘‘ইসিবি নারীদের ক্রিকেটকে এমনভাবে বদলে দিতে চায় যেন কিশোরীরা শুধু প্রথমবারের মতো ব্যাটই হাতে নেবে না, বরং পেশা হিসেবে এই খেলাকে বেছে নেবে৷''
‘‘চলমান উদ্যোগ এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দেয়,'' যোগ করেন তিনি৷
ইসিবি মনে করছে, হান্ড্রেড নামের নতুন ক্রিকেটের এই ফরম্যাট এর সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে৷
তবে একে নিয়ে সমালোচনার অভাবও নেই৷ দেশটিতে পুরুষদের প্রথম শ্রেণি, একদিনের ও টি-টোয়েন্টির বাইরেও একটি চতুর্থ ফরম্যাটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে৷ এছাড়া এই টুর্নামেন্ট ১৮ দলের কাউন্টির জৌলুসও কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে৷
জেডএ/জেডএইচ (এএফপি)
২০১৮ সালের জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে সফল যাঁরা
নানান বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে সাফল্য এনে দিয়েছেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যটি এসেছে মেয়েদের হাত ধরেই৷
ছবি: Suhaimi Abdullah/Getty Images
নারী ক্রিকেট দল: বাংলাদেশের অহঙ্কার
এই খেলায় বাংলাদেশের সেরা সাফল্যটি এসেছে মেয়েদের হাত ধরেই৷ সম্প্রতি এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে দেন সালমা, জাহানারা আর রুমানারা৷ এর আগে ২০১০ সালে চীনের গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের ক্রিকেটে রৌপ্যপদক জয় করেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা৷
ছবি: Suhaimi Abdullah/Getty Images
ফুটবলেও এগিয়ে আসছে নারী
বয়সভিত্তিক ফুটবলে একের পর এক সাফল্য এসেছে৷ এপ্রিলে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৫-র এক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ৷ এর আগে গত ডিসেম্বরে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে বাংলাদেশ সেরা হয়৷ তবে সাফল্যের শুরু ২০১৫ সালে৷ সেবার এএফসি কাপ অনূর্ধ্ব-১৪’র আঞ্চলিক পর্বে সেরা হয়েছিল তারা৷ পরের বারও তারা চ্যাম্পিয়ন হয়৷ এছাড়া ২০১৬ সালেই এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
দাবায় রানী হামিদ
তিনি দাবায় বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার৷ জাতীয় মহিলা দাবায় ১৮ বার সেরা হয়েছেন রানী হামিদ৷ দাবার প্রসারেও ভূমিকা রেখেছেন ৭৩ বছর বয়সি এই দাবাড়ু৷ তাঁর লেখা ‘মজার খেলা দাবা’ বইটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ রানী হামিদের সন্তান কায়সার হামিদ আশির দশকের তারকা ফুটবলার৷
ছবি: Khandakar Tarek
গিনেস বুকে নাম ওঠা লিনু
১৯৭৭ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে বড় বোন হেলেনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জোবেরা রহমান লিনু৷ এরপর ২০০১ সাল পর্যন্ত মোট ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি৷ ফলে ২০০৩ সালে গিনেস বুকে নাম ওঠে তাঁর৷
ছবি: Khandakar Tarek
শুটিংয়ের সাবরিনা
১৯৯৭ সালে কমনওয়েলথ গেমসের শ্যুটিংয়ে সোনা জেতেন সাবরিনা সুলতানা৷ এছাড়া সাফ গেমসে তিনটি ও সাফ শ্যুটিংয়ে দুটি সোনা জেতেন বাংলাদেশের শ্যুটিংয়ের এই অন্যতম তারকা৷ তাঁর স্বামী সাইফুল আলম রিংকিও সাফ গেমসে ব্যক্তিগত ও দলীয় মিলে পাঁচটি আর সাফ শ্যুাটিংয়ে ছয়টি সোনার পদক জেতেন৷
ছবি: Khandakar Tarek
ভারোত্তোলনের তারকা মাবিয়া
২০১৬ সালের দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে মেয়েদের ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণির ভারোত্তলনে স্বর্ণ জয় করেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত৷ সেই সময় পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত বাজার সময় তাঁর কান্না কাঁদিয়েছিল অনেককে৷ এরপর চলতি বছর এপ্রিলে কমনওয়েলথ গেমসে নিজের ব্যক্তিগত রেকর্ড করে ষষ্ঠ হন তিনি৷
ছবি: Khandakar Tarek
সাঁতারের মাহফুজা খাতুন শিলা
২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে দুটি স্বর্ণপদক জয় করেন মাহফুজা৷ ১০০ মিটার ও ৫০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক – এই দুই ইভেন্টে সোনা জেতেন তিনি৷ ফলে দীর্ঘ ১০ বছর পর এসএ গেমসের সাঁতারে সোনা জিততে সমর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ৷ ৫০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে গেমসের নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন মাহফুজা৷ সময় নিয়েছিলেন ৩৪ দশমিক ৮৮ সেকেন্ড৷ এতে ভেঙে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার রাহিম মাইয়ুমির করা ২০০৬ সালের রেকর্ড৷
ছবি: bdnews24.com
সফল ক্রীড়াবিদ ও সাহসী সংগঠক কামরুন নাহার ডানা
জাতীয় ব্যাডমিন্টনে তিন বার সেরা হন তিনি৷ ব্যাডমিন্টন খেলা ছাড়ার পর থেকে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ ২০০৪ সালে মৌলবাদীদের আন্দোলনের ভয়ে যখন কেউ মহিলাদের ফুটবল মাঠে নামানোর সাহস পাচ্ছিলেন না, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদিকার দায়িত্বে থাকা ডানা তখনই মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল চালু করেন৷