সম্পর্কের নানা বৈরিতার কারণে ১২ বছর আলোচনা চলার পরও জাতীয় নির্বাচনের সময়ে এসে তুরস্কের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনার শেষ করতে চাইতে পারেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তবে এটি একটি মুলতবি প্রস্তাব হতে পারে৷ ব্যার্ন্ড রিগার্ট-এর বিশ্লেষণ৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের ব্যাপারে ইইউ-এর কিছু করার ক্ষমতা কার্যত শেষ৷ ২০০৫ সালে তাদের সাথে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল তা তাড়াতাড়ি চুকে যাওয়ার ঘোষণা আসতে পারে৷ এ জন্য সরকার, বিশেষত রাষ্ট্রপতি রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানই দায়ী৷ তুরস্ক কখনোই ইইউ-এর শর্ত পূরণ করেনি, এমনকি তার ধারে কাছেও যায়নি৷ তার ওপর এপ্রিলের গণভোটের পর স্বৈরশাসন কার্যকর হওয়ায় ইইউ কমিউনিটিতে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আর থাকল না৷ দীর্ঘদিন ধরে ইইউ নিয়ে প্রতিবেদন করতে করতে এই ধারণা এখন আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে৷
তুরস্কের শিল্পীদের আঁকা ব্যঙ্গচিত্র
যে দেশে সংবাদপত্রের স্বধীনতার মুখ চেপে ধরা হয়েছে, সে দেশে কার্টুনিস্টরা কতদূর যেতে সাহস করেন? জার্মানির কাসেল শহরের কারিকাটুরা গ্যালারিতে তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রের কিছু নমুনা প্রদর্শিত হচ্ছে৷
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
‘আমি কোথায়?’ ভাবছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল
২০১৫ সালে তুরস্কের ‘লেমান’ ব্যঙ্গপত্রিকার প্রচ্ছদে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে দেখানো হয় ‘সুলতান’ এর্দোয়ানের পাশে বসা অবস্থায়৷ ‘এ আমি কোথায় এসে পড়লাম?’ ভাবছেন ম্যার্কেল; তাঁর পরনেও মধ্যযুগীয় অভিজাত জার্মান মহিলাদের বাস৷ ইস্তানবুলের তিনটি নেতৃস্থানীয় ব্যঙ্গপত্রিকার মধ্যে ‘লেমান’ অন্যতম৷ তুর্কি প্রধানমন্ত্রী দাভুতোগলু একবার পত্রিকাটিকে ‘‘নীতিবিগর্হিত’’ বলে অভিহিত করেছিলেন৷
ছবি: LeMan/Caricatura
বুদ্ধিমানেরা সবাই জেলে
২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে দেড় লাখ মানুষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ও ৪০ হাজার মানুষকে জেলে পোরা হয়েছে – তাদের মধ্যে বহু সাংবাদিক, লেখক ও আন্দোলনকারী৷ ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে আঁকা এই কার্টুনটিতে ৬৬ বছর বয়সি কার্টুনিস্ট ইজেল রোজেনটাল দেখাচ্ছেন, বন্দিরা কীভাবে একটি অশোভন মুদ্রা প্রদর্শন করছে আর প্রহরীরা বলছে, তারা এই ‘বেজন্মা’ বুদ্ধিজীবীদের কি পরিমাণ ঘৃণা করে৷
ছবি: Rozental/Caricatura
গুলেন সর্বত্র
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনরত ফেতুল্লাহ গুলেন ও তাঁর সমর্থকরা জুলাইয়ের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী, বলে এর্দোয়ানের অভিযোগ এবং বহু তুর্কি নাগরিক সত্যিই তা বিশ্বাস করেন৷ কার্টুনিস্ট ইগিট ওয়েজগুর-র ব্যঙ্গচিত্রে এক তুর্কি বলছেন: ‘‘৯০ শতাংশ তরমুজ নাকি গুলেনের শিষ্য৷’’ সঙ্গের তুর্কিটি বলছেন: ‘‘হতেই পারে৷’’
ছবি: Özgür/Caricatura
এর্দোয়ানের বিপক্ষে গেলেই বিপদ
গত এপ্রিল মাসের গণভোটে ৫১ দশমিক তিন শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোটে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ও প্রেসিডেন্টের প্রভূত ক্ষমতা বাড়ে৷ ভোটের আগে মিডিয়াকে বিরোধীদের হয়ে ‘হায়ির’ বা ‘না’ ভোটের সপক্ষে আন্দোলনের খবর খোলাখুলিভাবে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি৷ তাই মার্চ মাসে ইপেক ওয়েজসুসলু এই কার্টুনটি আঁকেন: জলের মিস্ত্রির পশ্চাদ্দেশে ‘হায়ির’ উল্কিটা বেরিয়ে পড়েছে৷
ছবি: Özsüslu/Caricatura
ট্রাম্পও বাদ যাননি
এর্দোয়ানই তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীদের একমাত্র লক্ষ্য নন৷ বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কার্টুনিস্টদের বিরাগভাজন হয়েছেন৷ ছবির কার্টুনটিতে বন্দুকধারী মার্কিন সৈন্যের পিছনে একটি ছেলে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘ওদের আমরা শেষমেষ কবে তাড়াব, বাবা?’ বাবা বলছেন, ‘আমাদের তেল ফুরোলে৷’
ছবি: Karabulat/Caricatura
সেক্স যেখানে টাবু
তুরস্কে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা চলে না – বিশেষ করে মহিলাদের যৌনতা নিয়ে তো নয়ই৷ মহিলা কার্টুনিস্ট রামিজে এরার-এর মোটাসোটা ‘ব্যাড গার্ল’ রক্ষণশীল সমাজের ধার ধারে না৷ ছবিতে সেই ব্যাড গার্ল পরপুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর পর সেল্ফি তুলছে; প্রেমিক বেচারা ভয়ে জড়োসড়ো: তার গিন্নি যদি ঐ ছবি ফেসবুকে দেখে ফেলেন?
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
দুনিয়াদারি
কার্টুনিস্ট মেহমেত চাগচাগ-এর দৃষ্টিতে দুনিয়ার অবস্থা আজ একটি ছবি দিয়েই বোঝানো যায়: বাগদাদ থেকে এথেন্স, বার্লিন থেকে প্যারিস অবধি এক পর্যায় ঘড়ি, আবহাওয়া অফিসে, পত্রিকার নিউজরুমে, হোটেল অথবা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে যেরকম থাকে – প্রতিটি ঘড়ি আসলে একটি টাইম বোমা, প্রত্যেকটির পিছনে ডায়নামাইট বাঁধা রয়েছে৷ শুধু কোনটা যে কখন ফাটবে, সেটা জানা নেই৷
ছবি: Cagcag/Caricatura
7 ছবি1 | 7
জার্মান নীতি বদল
এক বছর আগের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই তুরস্কের শাসন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে৷ ফলে ইইউতে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের (এসপিডি) যা ঘটেছিল, তুরস্কের ক্ষেত্রে তার উলটোটা হয়েছে৷ যদিও তুরস্কের ইইউ-এর সদস্যপদের জন্য প্রার্থী হতে পারার ব্যাপারে এপ্রিলে আশা প্রকাশ করেছিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল৷
কিন্তু আঙ্কারার আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে আগস্টে এসে সেই অবস্খান থেকে সরে আসেন তিনি৷ এসপিডি চ্যান্সেলর প্রার্থী মার্টিন শুলজ, যিনি দীর্ঘদিন ঘরে তুরস্কের সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে কাজ করছিলেন, তিনিও আলোচনা শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ফলে এই মাসে এসে অবশ্যম্ভাবী ঘোষণাটি দিয়েছেন ম্যার্কেল৷ রবিবার টেলিভিশন বিতর্কের সময়, সুস্পষ্টভাবে তিনি বলেছেন, ‘‘ইইউতে আর তুরস্কের স্থান হবে না৷’’
আলোচনার প্রেক্ষাপট শেষ
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের এই মন্তব্য নতুন কিছু নয়৷ কারণ, গত সপ্তাহেই ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি জঁ-ক্লোদ ইয়ুঙ্কার ব্রাসেলসে বলেছিলেন যে, তুরস্ক এরই মধ্যে সদস্যপদ পাওয়া প্রায় অসম্ভব করে ফেলেছে৷ ইয়ুঙ্কার আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, এর্দোয়ান হয়ত ইইউকে ব্যর্থ বলার কারণ পেয়ে যাবে৷ তবে তাতে কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না৷ আলোচনা মুলতুবির সাথে সাথে অর্থ সহায়তাও বন্ধ হয়ে যাবে৷
ব্যর্থ অভ্যুত্থান দিবসে তুরস্কের দুই চিত্র
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে তুরস্কের সব পথই ছিল প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান সমর্থকদের দখলে৷ তবে ডয়চে ভেলের ডিয়েগো কুপোলো আঙ্কারায় এর্দোয়ান সমালোচকদের সভয় উপস্থিতিও দেখেছেন৷ কুপোলোর তোলা ছবি নিয়েই আজকের ছবিঘর....
ছবি: DW/D. Cupolo
এক বছর পর
শনিবার ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে তুরস্ক৷ গত বছরের ১৫ জুলাই সেনাবাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থানের প্রয়াসকে রুখতে গিয়ে যে ২৫০ জন প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণ করা হয়েছে শ্রদ্ধাভরে৷ দেশের প্রায় সব শহরের রাস্তায়ই নেমে এসেছিল প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের অগনিত সমর্থক৷ সবচেয়ে বড় জমায়েত দেখা গেছে ইস্তান্বুলের বসফরাস ব্রিজ এবং আঙ্কারার কেন্দ্রস্থলে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
ব্যর্থ অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্বাভাবিকতা
শনিবারের গণজমায়েতে এমন অনেকেই ছিলেন, অভ্যুত্থান চেষ্টা রুখতে যাঁরা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন৷ নির্বাচিত সরকারকে অপসারণের চেষ্টা রুখতে তাঁদের কেউ কেউ সরাসরি সেনা সদস্যদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন৷ সেদিন এর্দোয়ান-বিরোধীরা মূলত ঘরে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেছেন৷ এক বছর ধরে চলমান জরুরি অবস্থার মধ্যে শনিবারও পরিস্থিতি প্রায় সেরকমই ছিল৷
ছবি: DW/D. Cupolo
গণতন্ত্রের প্রতি সজাগ দৃষ্টি
আঙ্কারার সমাবেশে একটি ব্যানারে লেখা, ‘‘আমরা গণতন্ত্রের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছি৷’’ এক বছর আগে এর্দোয়ান সমর্থকদের বিশাল জমায়েতের দিকে ইঙ্গিত করেই লেখা হয়েছে বাক্যটি৷ এর্দোয়ান সমর্থকরা মনে করেন, দেশান্তরী ইসলামি নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন এখনো অভ্যুত্থানের পাঁয়তারা করছেন৷ এক বছর আগের কথিত অভ্যুত্থান প্রয়াসের জন্য গুলেন এবং তাঁর সমর্থকদেরই দায়ী করে এর্দোয়ান সরকার৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘শুদ্ধি অভিযান’
অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকেই তুরস্কে চলছে ব্যাপক ধরপাকড় এবং গণছাঁটাই৷ গত এক বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে কারাবন্দি এবং দেড় লাখের মতো মানুষকে চাকরিচ্যুত করেছে এর্দোয়ান সরকার৷ ‘গুলেন সমর্থক’ হিসেবে চিহ্নিত করে চালানো হচ্ছে এই গ্রেপ্তার ও ছাঁটাইয়ের অভিযান৷ বলা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে দীর্ঘজীবী করার জন্য এই ‘শুদ্ধি অভিযান’ দরকার৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাগাতার জরুরি অবস্থা এবং শঙ্কা
২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ের সেই অভ্যুত্থান-চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর থেকেই চলছে জরুরি অবস্থা৷ শনিবারে সমাবেশে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ বলছিলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন, কেননা, এখন সৈন্যদের যা খুশি তা-ই করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ আমি মনে করি, জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে যদি কোনো গণভোট হতো, তাহলে অধিকাংশ নাগরিকই মেয়াদ বাড়ানোর বিপক্ষে ভোট দিতো৷ ’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘জনগণ আপনার সাথে আছে’
সমাবেশে যোগ দেয়া এক এর্দোয়ান সমর্থকের হাতের ব্যানারে লেখা, ‘‘শক্ত থাকুন, জনগণ আপনার সঙ্গে আছে৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘আমরা অনেক অধিকার হারিয়েছি’
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর সিরমাকের মানবাধিকার আইনজীবী সেয়মা উর্পার৷ এর্দোয়ান-বিরোধী এবং সমালোচকদের দুরবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অভ্যুত্থানের পর আমার পৌরসভার প্রায় সব কর্মীকেই ছাঁটাই করা হয়৷মেয়রের জায়গায় কাজ চালাচ্ছে সরকার নিযুক্ত ট্রাস্টি৷ আমরা অনেক অধিকার হারিয়েছি৷ আমার পক্ষে কাজ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘আমাদের দেশ যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী’
এরল কানমাজ এর্দোয়ান সমর্থক৷ অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে তাঁর এক সন্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত হয়৷ এর্দোয়ানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘‘আজ রাতে এখানে এসেছি আমার জন্মভূমিকে রক্ষা করতে৷ গুলেনপন্থি বিশ্বাসঘাতকরা সেনাবাহিনীকে দ্বিধাগ্রস্থ করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু এখন আমাদের দেশ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘প্রাণ দিতে বললে প্রাণ দেবো’
সুরেয়া কালায়াচি নামের এক এর্দোয়ান সমর্থকের (বাম দিকে) টি-শার্টে লেখা, ‘‘একটা ডাকই যথেষ্ট৷ ডাকুন আমাদের, আমরা চলে আসবো৷ মৃত্যু বরণ করতে বলুন, আমরা মৃত্যুকে বরণ করে নেবো৷’’
ছবি: DW/Diego Cupolo
‘আমরা অটোমানদের নাতি-নাতনি’
এর্দোয়ানের আরেক ভক্ত তুলে ধরেছেন, ‘আমরা অটোমানদের নাতি-নাতনি’ লেখা ব্যানার৷
ছবি: DW/D. Cupolo
10 ছবি1 | 10
তুরস্কের চেষ্টার ঘাটতি
তুরস্ক-ইইউ সম্পর্ক খুব একটা খারাপ হয়ত হবে না৷ তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিনিধিদের মধ্যকার জুলাইয়ের এক বৈঠকে দেখানো হয়েছে, নতুন প্রজন্মের ক্ষেত্রেও আর নতুন কোনো সম্ভাবনা নেই৷ বাস্তবতা হলো, ডিসেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিল আলোচনা প্রক্রিয়ার পরের ধাপ প্রত্যাখ্যান করায় আলোচনায় বরফ জমতে শুরু করে৷
তুরস্ক বারবার ইইউতে সাইপ্রাসের সদস্যপদকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করায় ১২ বছর ধরে এই আলোচনা কোনোভাবেই অগ্রসর হয়নি৷গত বছর তুরস্কের স্বৈরশাসনের নাটকীয় পটপরিবর্তন হলেও, তুরস্ক কখনোই ইইউ সদস্যপদের বিষয়ে খুব আগ্রহী ছিল না৷
তুরস্কের সদস্যপদের ব্যাপারে সামাজিক গণতন্ত্রীরা ২০০৫ সালে খুব আশাবাদী ছিল৷ সংসদে সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা আঙ্গেলা ম্যার্কেল এই সদস্যপদ নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন৷ তুরস্ক ‘সুবিধাবাদী’ অংশীদারিত্বের হলেও তার রক্ষণশীলরা তাতে সন্তুষ্ট ছিল৷ তবে তিনি চ্যান্সেলর হয়ে যাওয়ার পরও সদস্যপদের প্রতি তাঁর এই বাধা অব্যাহত রেখেছিলেন৷
চূড়ান্ত শেষ নয়
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে তুরস্ক-ইইউ ঘনিষ্ঠতা থাকায় সদস্যপদের এই আলোচনা শেষ হলেও তাদের সম্পর্কে ছেদ পড়বে না৷ তবে ইইউ চাইবে তুর্কিরা যেন উদ্বাস্তু চুক্তি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে৷ অন্যদিকে, তুর্কি জেলখানায় ৫০ জার্মান নাগরিক থাকায় জার্মান সরকারের উচিত হবে আঙ্কারার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা৷ ন্যাটো সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা ইস্যু ও তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’-এর সঙ্গে লড়াইয়ে ইইউ-তুরস্কের আরও একজোট থাকা দরকার৷
কিন্তু হঠাৎ করে পশ্চিম থেকে ঘুরে যাওয়া আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সাথে এর্দোয়ানের সুসম্পর্কের ভয়াবহতা কী হতে পারে? যদিও তিনি তুরস্কের ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য এর্দোয়ানকে হুমকি দেননি, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি তীব্র ছিল৷
ইইউতে প্রবেশ নিয়ে আলোচনা শেষ হওয়াটা বেদনাদায়ক হবে হয়ত, তবে তুরস্কের সঙ্গে সব সম্পর্ক শেষ হচ্ছে না৷ যা-ই হোক, এটা স্পষ্ট যে, লিসবন চুক্তির আর্টিকেল ৪৯ অনুযায়ী তুরস্ক ইউরোপীয় রাষ্ট্র নয়৷ তুরস্কের পা আগুনে ঝুলিয়ে অন্য সদস্য প্রার্থীদের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে৷