ইইউতে প্রবেশের আলোচনা স্থগিতের ঘোষণায় জর্জিয়ায় বিক্ষোভ
২৯ নভেম্বর ২০২৪
পূর্ব ইউরোপের দেশ জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি কোবাখিদজে বৃহস্পতিবার জানান, তার দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউর সদস্য হওয়ার আলোচনা ২০২৮ সাল পর্যন্ত স্থগিত করছে৷
তিবিলিসিতে জর্জিয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে ইইউ-পন্থি বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশছবি: Irakli Gedenidze/REUTERS
বিজ্ঞাপন
তার এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে৷
রাজধানী তিবিলিসিসহ জর্জিয়ার অন্যান্য শহরে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ হয়৷ বিক্ষোভ থামাতে বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতের পর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে৷ এই সময় মুখোশ পরা পুলিশ রাবার বুলেটও নিক্ষেপ করে এবং বিক্ষোভকারী ও সাংবাদিকদের মারধর করা হয়৷
জর্জিয়ার ৮০ শতাংশ মানুষ ইইউর সদস্য হতে আগ্রহী বলে জরিপে দেখা গেছে৷
জর্জিয়ার প্রায় ৯০ জন কূটনীতিকও প্রধানমন্ত্রী কোবাখিদজের ঘোষণার বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন৷
জর্জিয়ায় গত ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে ‘অনেক অনিয়ম' হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ এতে আগামী এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে জর্জিয়ায় আবার নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান করা হয়৷ এছাড়া জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞারও প্রস্তাব করা হয়৷
ইইউ সংসদের এমন প্রস্তাবের পরই জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী কোবাখিদজে ইইউর সঙ্গে তার দেশের আলোচনা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, এবং এই সময় ইইউর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়া হবে না বলেও জানান৷
জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট সালোমে জুরাবিশভিলিও নতুন নির্বাচিত সংসদ ও সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন৷ সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনের ফল বাতিলেরও চেষ্টা করছেন৷
জর্জিয়ার কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা বলেছে, তাদের কাছে ‘নির্বাচনে জালিয়াতির বড় প্রমাণ রয়েছে' যা নির্বাচনের ফলকে ক্ষমতাসীন দল জর্জিয়ান ড্রিমের পক্ষে নিয়ে গেছে৷ নির্বাচনের পর সংসদে জর্জিয়ান ড্রিম দলের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে৷
জর্জিয়ান ড্রিমের বিরুদ্ধে তিবিলিসিকে ইউরোপের দিক থেকে সরিয়ে রাশিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷
রাশিয়া থেকে পালিয়ে জর্জিয়ায় রুশ মিউজিশিয়ানরা
ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে কেবল ইউক্রেন থেকেই মানুষ অন্য দেশে পালাচ্ছেন, এমনটা নয়৷ বরং ভ্লাদিমির পুটিনের একের পর এক সামরিক সিদ্ধান্তের বলি যাতে না হতে হয়, সেজন্য অনেক রাশিয়ানও আশ্রয় নিচ্ছেন ভিন দেশে৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
যুদ্ধ নয়, সংগীত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে নাম লেখানোর আদেশ দিয়েছেন পুটিন৷ কিন্তু যুদ্ধ নয়, বরং সংগীত নিয়েই জীবন কাটাতে চান রুশ মিউজিশিয়ানরা৷ ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী জর্জিয়ায়৷ সেখানে তাদের গান ও মিউজিকের কদরও পাচ্ছেন৷
ছবি: U.S. Army/ABACA/picture alliance
ঘুস দিয়ে সীমান্ত পাড়ি
মস্কো থেকে আসা ২৯ বছর বয়সি আলেক্সেই আন্ত্রোপভ একজন ক্লাসিক্যাল ডাবল বেসিস্ট৷ এখন বাস করেন জর্জিয়ার রাজধানী টিবিলিসিতে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘মেঠো পথ ধরে গাড়ি চালিয়ে সীমান্তের দিকে এসেছি আমরা৷ পথে পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে হয়েছে৷ এরপর প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দিতে হয়েছে৷’’
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
স্মৃতিকাতরতা
৩৮ বছর বয়সি গ্রিগোরি ডবরিনিনও টিবিলিসিতে বাস করেন৷ রুশ ব্যান্ড এসবিপিসিএইচ এর ড্রামার ছিলেন তিনি৷ এখন জর্জিয়ান তরুণদের ড্রামস বাজানো শেখান তিনি৷ ডবরিনিন বলেন, ‘‘শিক্ষকতা করানোটাকে আমি পিছিয়ে যাওয়া বলে মনে করি না৷ ব্যান্ডে বাজানো আর শিক্ষকতা করা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার, দুটোর তুলনা করা সম্ভব নয়৷ তবে সত্যি বলতে গেলে আমি কনসার্টগুলো খুব মিস করি৷ আমার জন্য এটা অনেক বড় ক্ষতি৷’’
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
যুদ্ধের বিরোধিতা করে কালো তালিকায়
আনাস্তাশিয়া ইভানোভার বয়স ২২ বছর৷ রুশ এই গায়িকা এবং গিটারিস্টকে ভক্তরা গ্রেশকা নামেও চেনেন৷ গত বসন্তে রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসার পর থেকে আর ফিরে যাননি তিনি৷ ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধিতা করায় তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
ক্রাইমিয়া দখলের বিরোধিতা
কেবল ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখলেরও বিরোধিতা করেছিলেন ইভানোভা৷ এরপর ইউক্রেনে এক অনুষ্ঠানে গান গাইতেও গেয়েছিলেন তিনি৷ তখন ইউক্রেনবাসী তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
ভবিষ্যতেও আলো নেই
আন্ত্রোপভের মতো অনেক রুশ শিল্পীই রাশিয়ার ভবিষ্যত খুব দ্রুতই সুখকর হয়ে উঠবে বলে আশা করেন না৷ বরং তিনি মনে করেন, ‘‘পরবর্তী পুটিন বর্তমান পুটিনের চেয় আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে৷‘‘ তিনি বলেন, আমার এমন একটা স্থান দরকার ছিল, যেখানে বারবার ফিরে আসা যায়৷ আশা করছি টিবিলিসির মতো সুন্দর শহর আমার বাড়ি হয়ে উঠবে৷