1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপীয় ইউনিয়ন আদম ব্যবসায়ীদের নৌকা ধ্বংস করে দেবে

ব্যার্ন্ড রিগার্ট/এসবি১৫ মে ২০১৫

আগামী সোমবারই ইইউ-র পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আদম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে চান৷ ন্যাটো-র বৈঠকে ইইউ তার পরিকল্পনা তুলে ধরেছে৷ ডয়চে ভেলের ব্যার্ন্ড রিগার্ট-এর আশা, সেটি যেন কখনোই কার্যকর করা না হয়৷

Bildergalerie Rettung von Flüchtlingen durch deutsche Cargo schiffe im Mittelmeer
ছবি: OOC Opielok Offshore Carriers

ইউরোপীয় ইউনিয়ন সত্যি লিবিয়ায় আদম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের অ্যাডভেঞ্চার সম্পর্কে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে৷ তুরস্কের আন্টালিয়ায় ন্যাটো সম্মেলনে ইইউ-র পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি যখন বললেন, তিনি কীভাবে আদম ব্যবসায়ীদের দিকে লক্ষ্য করে কামান দাগানোর ব্যবস্থা করতে চান, তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চোখে কিছুটা বিস্ময় দেখা গিয়েছিল৷ জাতিসংঘ ও লিবিয়ার বিবাদমান সমান্তরাল সরকারগুলি সায় দিলে ইইউ জুন মাসেই রণতরি সাজাতে শুরু করবে৷ তাদের কাজ হবে লিবিয়ার সমুদ্রসীমার মধ্যে অথবা সে দেশের উপকূলে আদম ব্যবসায়ীদের জাহাজ শনাক্ত করে ধ্বংস করা৷ ইটালির প্রাক্তন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্বে আছেন বটে, কিন্তু রোম থেকে তাঁর উপর চাপ বাড়ছে৷ কারণ ইটালি নৌকায় শরণার্থীদের আগমন বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর৷

মোগেরিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এই প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এবং সেটা ইউরোপীয় মানদণ্ডে বিস্ময়কর দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে৷ এপ্রিল মাসে দুর্ঘটনায় ৮০০-রও বেশি শরণার্থীর মৃত্যুর পর ইইউ শীর্ষ নেতারা ভূমধ্যসাগরে কার্যকর সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ সেই কাজ এত দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবার বা এতটা ব়্যাডিকাল করে তোলার কোনো উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল না৷ অন্তত জার্মান সরকার এমনটা চায়নি৷ এখন জার্মানি তাই নেপথ্যে গোটা প্রক্রিয়ার গতি কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছে৷ এর ন্যায্য কারণও আছে৷

দুর্ঘটনায় ৮০০-রও বেশি শরণার্থীর মৃত্যুর পর ভূমধ্যসাগরে কার্যকর সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়ছবি: Opielok Offshore Carriers/dpa

অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত

কারণ অনেক প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি৷ কোনটা আদম ব্যবসায়ীদের নৌকা, সেটা শনাক্ত করে কে হামলার সিদ্ধান্ত নেবে? আদম ব্যবসায়ী চক্রের মূল পাণ্ডাদের ধরাই উদ্দেশ্য, নাকি তাদের হয়ে যারা কাজ করছে, তাদের দমন করলেই হবে? তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চালানো হবে কোন ভিত্তিতে? ইইউ বাহিনী যদি লিবিয়ার ভূখণ্ডেও আক্রমণ চালায়, সেক্ষেত্রে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কাও কি উড়িয়ে দেওয়া যাবে? পালটা হামলা হলে ইইউ কীভাবে তার মোকাবিলা করবে? মনে রাখতে হবে, আদম ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি ইউরো কামায় এবং তারা অনেক সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে৷ সোমালিয়া উপকূলে ‘অ্যাটলান্টা' অভিযানের আওতায় জাহাজগুলি জলদস্যুদের তুলনায় অনেক বেশি সুসজ্জিত ও প্রস্তুত৷ ভূমধ্যসাগরের পরিস্থিতি একেবারে আলাদা৷

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, সশস্ত্র অভিযান কি সত্যি ইউরোপের সীমানায় শরণার্থীদের নাটকীয় আগমন বন্ধ করতে পারবে? এর স্পষ্ট উত্তর হলো – না৷ যে সব মানুষ সমুদ্রপথে পালাতে পারবে না, তারা লিবিয়ায় অত্যন্ত করুণ অবস্থায় আটকা পড়বে৷ কিছুকাল পর শরণার্থী ও আদম ব্যবসায়ীরা নতুন পথ খুঁজবে৷ তুরস্ক অথবা টিউনিশিয়া হয়ে তারা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে৷ সবার আগে শরণার্থীদের প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সংকটের সমাধান করতে হবে৷ আগত শরণার্থীদের কোটা ব্যবস্থা অনুযায়ী সদস্য দেশগুলির মধ্যে বণ্টন করতে হবে৷ এখনো বিষয়টির ফয়সালা হয়নি৷ কিছু রাষ্ট্র আবার এই অবাস্তব সামরিক অভিযান ও কোটা ব্যবস্থার বিষয়টিকে সংযুক্ত করতে চায়৷ তাদের বক্তব্য হলো – আমরা আদম ব্যবসায়ীদের উপর হামলায় তখনই সম্মতি দেব, যখন শরণার্থীদের ইউরোপজুড়ে ন্যায্যভাবে বণ্টন করা হবে৷ অর্থাৎ জাহাজ ডুবে যাবার পর যে সব শরণার্থী আশ্রয় নিতে আসছে, তাদের রাজনৈতিক দরকষাকষির খেলায় পণবন্দি করা হচ্ছে৷ এটা হলো নৈরাশ্যবাদের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত৷

ব্যার্ন্ড রিগার্ট, ডয়চে ভেলে

আদম ব্যবসায়ীদের মোকাবিলা করতে হবে, তবে অন্য পথে

আদম ব্যবসায়ীদের অপরাধ চক্রকে যে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তাদের নৌকা ডুবিয়ে দিলে কাজ হবে না৷ আইনি পথে শরণার্থীদের ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ দিলে আদম ব্যবসায়ীদের চাহিদাই থাকবে না৷ তাছাড়া যে সব দেশ থেকে শরণার্থীরা পালাচ্ছে, সে সব দেশের সরকারের সঙ্গে সংলাপও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ কারণ পালানোর মূল কারণ সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে৷ ব্রিটেন, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া সহ বেশ কিছু দেশ শরণার্থী গ্রহণ করতে একেবারেই প্রস্তুত নয়৷ ফলে শরণার্থী সংক্রান্ত নীতির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন খুবই কঠিন হবে৷ কিন্তু ইইউ যদি এই মুহূর্তে রণতরির উপর ভরসা করে, তখন ‘হার্ডলাইনার'-দের অবস্থান আরও শক্ত হবে৷ তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার আদলে ইউরোপকেও শরণার্থীদের নাগাল থেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখতে চায়৷

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রাশিয়া ও চীনের মতো দেশের সমর্থন সহ ইইউ-র সামরিক অভিযানকে অনুমোদন দিলেও লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের সম্মতির প্রয়োজন হবে৷ ফেডেরিকা মোগেরিনির যুদ্ধবাজ পরিকল্পনার পথে এটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ হতে পারে৷ কারণ অরাজকতায় ভরা সেই দেশে পশ্চিমা মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো সরকার বা প্রশাসনের কাঠামো নেই৷ এটাও ভুললে চলবে না, যে গৃহযুদ্ধের সময় লিবিয়ার কল্যাণ চেয়ে ন্যাটো যে সামরিক অভিযান চালিয়েছিলো, বর্তমান অবস্থা তারও অন্যতম কারণ৷ ইইউ-র নতুন সামরিক অভিযান মোটেই স্থিতিশীলতা আনবে না৷ শরণার্থী ও রাষ্ট্র হিসেবে লিবিয়ার জন্য এমন অভিযানের পরিণতি কী হবে, তা আগে থেকে অনুমান করা অত্যন্ত কঠিন৷ তাই ইইউ-র এই পরিকল্পনা পুরোপুরি বর্জন করাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ